অ্যাপশহর

মোটা হচ্ছে বাঙালি, কমছে রক্তও

NFHS-5 রিপোর্ট বলছে, মোটা হচ্ছে রাজ্যবাসী । ওভারওয়েট আর ওবেসিটির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অ্যানিমিয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে বাড়ির খাবার ছেড়ে ফাস্ট ফুড খাওয়ার ঝোঁক।

Authored byঅনির্বাণ ঘোষ | Ei Samay 26 Nov 2021, 11:01 pm

হাইলাইটস

  • NFHS-৫ রিপোর্ট বলছে, ওভারওয়েট আর ওবেসিটির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অ্যানিমিয়া
  • এই বৃদ্ধির হার সব ক্ষেত্রেই শহরাঞ্চলে বেশি, গ্রামাঞ্চলে তুলনায় কম
  • বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে বাড়ির খাবার ছেড়ে ফাস্ট ফুড খাওয়ার ঝোঁক
EiSamay.Com obesity
ফাইল ফটো
অনির্বাণ ঘোষ
মোটা হচ্ছে বঙ্গবাসী। বাড়ছে মাত্রাতিরিক্ত ওজন। কিন্তু একই সঙ্গে ভুগছে অপুষ্টিতেও। কারণ, বাড়ছে রক্তাল্পতা।

পঞ্চম রাষ্ট্রীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য সমীক্ষা (NFHS-৫) উঠে এল এমনই তথ্য। পাঁচ বছর আগের (NFHS-৪) তুলনায় বয়স ও লিঙ্গ নির্বিশেষে দেখা যাচ্ছে, ওভারওয়েট আর ওবেসিটির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অ্যানিমিয়া। এই প্রবণতা গ্রামের চেয়ে বেশি শহরেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে বাড়ির খাবার ছেড়ে ফাস্ট ফুড খাওয়ার ঝোঁক। এতে একদিকে যেমন বাড়ে ওজন, অন্য দিকে বঞ্চিত হতে হয় পুষ্টি থেকেও।

প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রকাশিত হয় এই সমীক্ষার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট। বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক NFHS-৫ রিপোর্টটি প্রকাশ করে। রিপোর্টে পুষ্টি সংক্রান্ত সূচকে দেখা যাচ্ছে, দেশের অবনতি তো হয়েইছে। সেইসঙ্গে অধোগতি লক্ষ্যণীয় অন্যান্য বড় রাজ্যগুলির মতো বাংলার ক্ষেত্রেও।

বাংলায় দেখা যাচ্ছে, ২০১৫-১৬ সালের চতুর্থ NFHS-র তুলনায় ২০১৯-২১ সালের পঞ্চম NFHS-র রিপোর্টে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু এবং ১৫-ঊর্ধ্ব মহিলা ও পুরুষের ওজন ও স্থূলত্ব দুটোই বেড়ে গিয়েছে। এবং এই বৃদ্ধির হার সব ক্ষেত্রেই শহরাঞ্চলে বেশি, গ্রামাঞ্চলে তুলনায় কম। রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রেও বয়স ও লিঙ্গ নির্বিশেষে একই রকম অবনতির ছবি ফুটে উঠেছে রাজ্যজুড়ে। যদিও এ ক্ষেত্রে শহরের অবনতি গ্রামের তুলনায় কম। চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছে, করোনার জেরে প্রথমে লকডাউন পরিস্থিতিতে বাড়িতে বসে থাকা এবং তার পর পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না-খাওয়ার যে প্রভাব, তারও ভূমিকা রয়েছে এই রিপোর্টের নেপথ্যে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, 'পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যাচ্ছে, কৈশোর থেকে যৌবন, এমনকী প্রৌঢ়ত্বেও আমরা যথাযথ সুষম খাদ্য খাচ্ছি আগের চেয়ে ঢের কম। আমরা মনে করছি হয়তো অনেক দামি ও ভালো ভালো খাবার খাচ্ছি। কিন্তু আদতে যে সেগুলোর পুষ্টিগুণ বাড়িতে রান্না করা খাবারের তুলনায় নিকৃষ্ট।' তিনি জানান, ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, রেস্তোরাঁর বাড়িতে ডেলিভারি করা হরেক খাবার খাওয়ার প্রবণতা এখন সর্বত্রই। এবং সেই প্রবণতা শহরে বেশি। তাই ওবেসিটি শহরে আর অ্যানিমিয়া গ্রামে বেশি।
২০২২ সালে প্রচুর ছুটি লোপাট, মিলবে ৬টি লম্বা উইকএন্ড
তাঁর সঙ্গে সহমত ফেডারেশন অফ গায়নেকোলজিস্টস অ্যান্ড অবস্টেট্রিশিয়ান সোসাইটিজ অফ ইন্ডিয়া বা ফগসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট বাসব মুখোপাধ্যায়- 'স্থূলত্ব আর রক্তাল্পতার সমস্যাকে একই বন্ধনীতে রাখা যেতে পারে। দুটোই ভুলভাল খাবার খাওয়ার পরিণতি। লক্ষ্যণীয়, এই অ্যানিমিয়ার সমস্যা আবার কিশোর-কিশোরী নির্বিশেষে বেশি ১৫-১৯ বয়সিদের মধ্যে। মুশকিল হলো, যে বয়সে সুখাদ্য খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হওয়ার কথা, সে সময়েই খাবার বাছাই গণ্ডগোল হয়ে যাচ্ছে।' তাঁর ব্যাখ্যা, সব মহিলার চেয়ে প্রসূতিদের রক্তাল্পতা কম থাকার কারণ, গর্ভাবস্থাকালীন চিকিৎসায় ফলিক অ্যাসিড ও আয়রন ট্যাবলেট দেওয়া হয় গর্ভবতী মহিলাদের।

পুষ্টিবিদ অরিজিৎ দে-র বক্তব্য, 'আমরা এত বাইরের খাবার খাচ্ছি বলেই এই অবস্থা। দিনে একবার কিংবা নিদেনপক্ষে সপ্তাহে তিন-চার বার আমরা তো বাইরের খাবারই খাই। ক'জন আছি যাঁরা সপ্তাহে ২০০ গ্রাম করে ফল, শাক-সব্জি, ডাল ইত্যাদি খাই? খাই না বলেই নিছক ক্যালরি ঢোকে শরীরে, পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিতই থেকে যায় শরীর।' তাঁর মতে, এই অভিন্ন কারণেই মোটা হচ্ছে শরীর, আর রক্তে কমছে হিমোগ্লোবিন।

৩৭, দেখতে ২৭ লাগে! ঘরজামাই পাত্রের যৌবন ধরে রাখার রহস্য উদঘাটনে মশগুল নেটপাড়া
এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সুজয় ঘোষ অবশ্য দু'টি খামতিকে এক বন্ধনীতে রাখতে নারাজ- 'ওবেসিটির কারণ নিঃসন্দেহে আমাদের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের ক্রমাবনতি। কিন্তু সে জন্যই অ্যানিমিয়া বাড়ছে, মনে হয় না। ভারতীদের শরীরে এমনিতেই আয়রন শোষণ কম হয়। তা-ও কেন ক্রমাবনতি, বুঝতে গবেষণা প্রয়োজন।'
লেখকের সম্পর্কে জানুন
অনির্বাণ ঘোষ

পরের খবর

Lifestyleসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল