অ্যাপশহর

দিনে গরম রাতে ঠান্ডায় সর্দি-কাশি-জ্বর ঘরে ঘরে

দুপুরে দু’মিনিট রোদে দাঁড়ালেই প্রবল ঘাম। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সন্ধ্যার পরই আবার শিরশিরানি শরীরে। শীতবস্ত্র না-থাকলে ঠান্ডা লাগছে রাতে।

EiSamay.Com 18 Feb 2020, 1:27 pm
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: দুপুরে দু’মিনিট রোদে দাঁড়ালেই প্রবল ঘাম। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সন্ধ্যার পরই আবার শিরশিরানি শরীরে। শীতবস্ত্র না-থাকলে ঠান্ডা লাগছে রাতে।
EiSamay.Com Many people suffering from Cold and cough due to changing weather
প্রতীকী ছবি।


মোটে চার থেকে ছ’ঘণ্টার ফারাকে পারার ওঠানামা ৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস! চিকিৎসকরা বলছেন, তাপমাত্রার এই আচমকা তারতম্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না শরীর। তাতেই গড়বড় করছে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি। সেই ফাঁক গলেই দেদার হামলা চালাচ্ছে ভাইরাস, অ্যালার্জেন, ব্যাকটেরিয়া। শ্বাসনালীর সংক্রমণে কাবু হচ্ছে আমজনতা। নিট ফল, ঘরে-ঘরে সর্দি-কাশি-জ্বরের রমরমা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বার শীতে মারকাটারি ঠান্ডা না-পড়লেও একটা ধারাবাহিকতা ছিল। তাই শরীরও ছিল খোশমেজাজে। কিন্তু দিন চারেক হল শীতের বিদায়বেলায় সকাল-সন্ধ্যায় ঠান্ডা লাগলেও বেলা বাড়তেই গরম লাগছে। দুপুর-বিকেল ও সন্ধ্যা-রাতের মধ্যে সময়ের যা ব্যবধান, তার তুলনায় ঢের বেশি ফারাক তাপমাত্রায়। বিকেল চারটের ২৬-২৭ ডিগ্রিই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা-আটটায় নেমে আসছে ২১ ডিগ্রিতে। রাতে আরও কমছে। এতেই প্রমাদ গুনছেন চিকিৎসকরা। কেননা, এই সময়ে আলগা হয়ে যায় শরীরী প্রতিরক্ষা। আর সেই সুযোগেই হামলা চালাচ্ছে জীবাণুরা। বায়ুদূষণ আজকাল যেহেতু এমনিতেই শরীরকে ঝাঁঝরা করে রেখেছে, তাই সামান্য হামলাতেই ভেঙে পড়ছে প্রতিরোধের দেওয়াল।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, ‘এসি-ফ্রিজ-গিজারের মতো শরীরেও থাকে থার্মোস্ট্যাট। সব সময়ে তা শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ধরে রাখতে চায়। মুশকিল হল, আচমকা বাইরের তাপমাত্রার বাড়াবাড়ি বদল হলে শরীরের থার্মোস্ট্যাট যথাযথ কাজ করে না। তখনই ইমিনউনিটি তার কর্তব্যে গাফিলতি করে ফেলে। হয় অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে (তখন অ্যালার্জির শিকার হয় শরীর) অথবা সক্রিয়তা কমে যায় (তখন জীবাণু সংক্রমণের শিকার হয় শরীর)। দ্বিতীয়টিই বেশি।’ একই বক্তব্য মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ আশিস মান্নার। তিনি বলেন, ‘অনেকে ভাবেন, এ সময়ে বোধ হয় জীবাণুর বাড়বাড়ন্ত হয়। অথচ সেটা কিন্তু একেবারেই তাৎপর্যপূর্ণ নয়। আসল সমস্যাটা হল, আমাদের শরীরই ঠান্ডা-গরম মানিয়ে নিতে পারে না চট করে। তাই বিকেল ও সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিকেলে গরম লাগলেও সন্ধ্যার কথা ভেবে শীতবস্ত্র সঙ্গে রাখা জরুরি। সেটা না-মেনেই অসুখ বাধাচ্ছে লোকে।’

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বয়স্ক ও শিশুদের ইমিউনিটি যেহেতু এমনিতেই কম থাকে, তাই তাদের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি। বয়স্করোগ বিশেষজ্ঞ অরুণকুমার মজুমদারের বক্তব্য, ‘সামান্য সংক্রমণেই ফুসফুসের সংক্রমণ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে অনেক সময়ে। তাই সামান্য সমস্যাতেই ডাক্তার দেখানো জরুরি।’ তিনি সতর্ক করছেন ক্রমবর্ধমান দূষণ নিয়েও। তাঁর সঙ্গে একমত ফুসফুস রোগ-বিশেষজ্ঞ সুস্মিতা রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দূষণ বেড়েই চলেছে লাগাতার। এক দশক আগেও এমনটা ছিল না। বিশেষ করে ২.৫ মাইক্রন বা তার চেয়েও ছোট সাইজের ভাসমান ধূলিকণার এমনই বাড়বাড়ন্ত যে সেই কণা ও তার সঙ্গে থাকা হাজারও ক্ষতিকারক রাসায়নিক ক্রমাগত আমাদের শ্বাসনালীতে ঢুকে চলেছে এবং অনবরত ফুসফুসের ক্ষতি করে চলেছে অজ্ঞাতেই। ফলে ভিতর থেকে আমরা ঝাঁঝরা হয়ে চলেছি। পাল্লা দিয়ে কমছে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে ঋতুবদলে তাপমাত্রার তারতম্য সয়ে উঠতে পারছি না। একটুতেই সর্দি-কাশি-জ্বর বাধিয়ে ফেলছি।’

পরের খবর

Lifestyleসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল