করোনার (Corona) তৃতীয় ঢেউ চলে যাওয়ার পর দেশের মানুষ মোটের উপর নিশ্চিন্ত ছিলেন। কিন্তু এই ভাইরাসকে বুঝে নেওয়া হল অনেকটাই কঠিন। তাই দেখতে দেখতে ফের চলে আসল এই ভাইরাস। এবার এই ভাইরাস আবার নিজেকে বদলে চলে এসেছে অনেক রূপে। এই অবস্থায় Omicron বাদেও XE, BA.2 সহ অন্যান্য অনেক প্রজাতি ও উপপ্রজাতি দাপট দেখাচ্ছে। এবার এই প্রতিটি ভাইরাসই অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই প্রতিটি মানুষকে এই নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এবার করোনার এই বিরাট ভূগোল থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে ভ্যাকসিন (Corona Vaccine)। করোনার টিকা আসার পর মানুষের মধ্যে সমস্যা অনেকটাই কমেছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে করোনা টিকা নেওয়া বেশিরভাগ ব্যক্তির মধ্যেই সমস্যা কম দেখা দিয়েছে। এমনকী হাসপাতালে ভর্তির আশঙ্কাও কমেছে। তবে টিকা নেওয়ার পরও যে রোগ হচ্ছে না, এমন নয়। কিন্তু সেই রোগের দাপট থাকছে কিছুটা কম।
করোনা টিকা নেওয়া ও না নেওয়া মানুষের মধ্যে তফাত
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে করোনা টিকা নেওয়ার (Vaccinated) পরও রোগ হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে টিকা নেওয়ার পর সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা কম। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মানুষের সুবিধা হচ্ছে। কারণ ইমিউনিটি (Immunity) অপেক্ষাকৃত থাকছে বেশি।
এদিকে আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) জানাচ্ছে, ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সি ভ্যাকসিনের ডোজ সম্পূর্ণ করা মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আশঙ্কা ৯৪ শতাংশ কম। এক্ষেত্রে টিকার দুটি ডোজ সম্পূর্ণ করেননি (Unvaccinted) এমন মানুষের ঝুঁকিও টিকা না নেওয়া মানুষের তুলনায় ৬৪ শতাংশ থাকে কম। তবে টিকা না নিলেই যত সমস্যা।
ভ্যাকসিন নেওয়া মানুষের মধ্যে কী কী লক্ষণ দেখা দেয়?
এক্ষেত্রে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে করোনার লক্ষণ (Corona Symptoms) অত্যন্ত মৃদু বা মাঝারি হিসাবে দেখা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সহজেই সমস্যাকে বাগেও আনা হচ্ছে সম্ভব। ইনফেকশন ডিজিজ অ্যান্ড এপিডেমিওলজি জার্নাল, ইউরোসার্ভিলেন্সে এই ৮ লক্ষণের কথা জানানো হয়েছে-
১. কাশি
২. নাক দিয়ে জল গড়ানো
৩. ক্লান্তি
৪. গলা ব্যথা
৫. মাথা ব্যথা
৬. পেশিতে ব্যথা
৭. জ্বর
৮. হাঁচি।
এক্ষেত্রে এই গবেষণা আরও জানিয়েছে যে কাশি, নাক দিয়ে জল গড়ানো, ক্লান্তি সবথেকে বেশি দেখা যাচ্ছে এই সবের মধ্যে।
টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কী সমস্যা দেখা দিচ্ছে?
কোভিড টিকা নেওয়া নেই, এমন ব্যক্তিদের মধ্যে সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেশি। ইউনিভার্সিটি লোয়া হেলথকেয়ার সিস্টেমের ২০২১ সালের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডেল্টা (Delta) ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে প্রাণপাত অবস্থা হওয়া ৯৭ শতাংশ মানুষেরই টিকা নেওয়া ছিল না। এই প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি এমপ্লয়ই হেলথ ক্লিনিকের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর ক্লুডিয়া কোরউইন বলেন, এর থেকেই বোঝা যায় যে টিকাকরণ এক্ষেত্রে কতটা জরুরি।
এক্ষেত্রে নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলি আসার পর সমস্যা বেশিদূর এগচ্ছে না। তবে ডেল্টার সময় এই টিকা না নেওয়া মানুষের জ্বর, মাথা ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা গিয়েছিল। অনেকের তো আবার শরীরে অক্সিজেনের স্তরও কমে যায়।
লং কোভিডের আশঙ্কা কি টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কম?
করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও শরীরে লক্ষণ রয়ে যাওয়ার ঘটনাকে বলে লং কোভিড (Long Covid)। এই প্রসঙ্গে ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির একটি গবেষণা জানায়, টিকা নেওয়া মানুষের মধ্যে লং কোভিডের হাত থেকে বাঁচার সম্ভাবনা থাকে বেশি। এক্ষেত্রে তেমন কোনও জটিলতা তৈরি হয় না। আবার অপরদিকে টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সমস্যার আশঙ্কা অনেকটাই রয়েছে বেশি। তবে এই নিয়ে এখনও নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাবে না। বরং আরও গবেষণা দরকার।