অ্যাপশহর

করোনা আবহে জটিল অস্ত্রোপচার, ছয় মাসের শিশুর প্রাণ বাঁচিয়ে সাফল্যের নজির শহরে

হৃদপিণ্ডের মহাধমনি ও শিরার মাঝখানে এক বাড়তি পাইপের সংযোগের ফলেই শিশুটির সমস্যা দেখা গিয়েছে। বাবা-মা আরএনটেগোর হাসপাতালের অন লাইন কনসালটেশনের সাহায্যে পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক মহুয়া রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

EiSamay.Com 1 Jul 2020, 4:17 pm
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে জটিল অস্ত্রোপচার বন্ধ হয়েছে। তখন নজির গড়ল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্স।
EiSamay.Com performing complicated heart surgery
জটিল অস্ত্রোপচার


প্রবল শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ছয় মাসের ওই একরত্তিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আরএনটেগোর হাসপাতালে। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাকে ভরতি করে নেওয়া হয় সেখানে। পরীক্ষা করে দেখা যায় ওই শিশুটি নিউমোনিয়ার শিকার হয়েছে। এরপর চলে নানা পরীক্ষা- নিরীক্ষা। সেখানে দেখা যায় শিশুর হৃদপিণ্ডে এক জন্মগত জটিল সমস্যা রয়েছে। হৃদপিণ্ডের মহাধমনি ও শিরার মাঝখানে এক বাড়তি পাইপের সংযোগের ফলেই শিশুটির সমস্যা দেখা গিয়েছে। ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম পেটেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসিস বা পিডিএ। এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা দরকার, যখন শিশু মায়ের গর্ভে থাকে তখন তার হার্ট প্রধান ধমনি অ্যাওর্টার সঙ্গে ফুসফুসের প্রধান শিরার সংযোগ থাকে। ভ্রূণ অবস্থায় এর সাহায্যে মায়ের থেকে শিশুর ফুসফুস অক্সিজেন যুক্ত রক্ত পায়।

এই শিশুটির জন্মের দু-তিন দিনের মধ্যেই ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এই ত্রুটির ডাক্তারি নাম পিডিএ। এই ত্রুটির জন্য বাচ্চার ফুসফুসের প্রেশার বাড়ে (পালমোনারি হাইপারটেনশন) একই সঙ্গে হার্ট ক্রমশ বড় হতে থাকে ও দূর্বল হয়ে পড়ে। ছ'মাসের শিশুটির ক্ষেত্রেও একই সমস্যাই ছিল।

শিশুটির অবস্থা স্থিতিশীল করতে তাকে অক্সিজেন ও নিউমোনিয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ও হার্ট ফেলিওরের ওষুধ দেওয়া হয়। এর পর সুস্থ হয়ে গেলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে, হার্টের সমস্যা সম্পূর্ণ ভাবে সারানোর জন্য বিশেষ চিকিৎসা করা হবে বলে জানায় হাসপাতাল। কিন্তু ততদিনে করোনার থাবা চওড়া হয়ে গিয়েছে। আমাদের দেশেও শুরু হয়ে গিয়েছে লকডাউন। এই অবস্থায় ওই একরত্তিকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হয়নি বাবা-মার। ইতোমধ্যে কেটে গিয়েছে তিন মাস।

এর পর শিশুটির আবারও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বাবা-মা আরএনটেগোর হাসপাতালের অন লাইন কনসালটেশনের সাহায্যে পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট চিকিৎসক মহুয়া রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হার্টের ওষুধের মাত্রার পরিবর্তন করে ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি। এর পর তিনি শিশুটিকে দেখে বুঝতে পারেন ওষুধের সাহায্যে বিশেষ কোনও কাজ হবে না। অবিলম্বে সঠিক চিকিৎসায় পিডিএ র সমস্যা না সারালে বড় ধরনের অঘটনের ঝুঁকি আছে। পিডিএ সারানোর জন্য দুভাবে চিকিৎসা করা হয়।

চিকিৎসক মহুয়া রায়


এক, বুক কেটে অস্ত্রোপচার করে পিডিএ বন্ধ করে দিতে হবে, নতুবা বিশেষ ডিভাইসের সাহায্যে বুক না কেটে কুঁচকি থেকে ইন্টারভেনশনাল পদ্ধতির সাহায্যে পিডিএ ক্লোজ করতে হবে। শিশুটির পিডিএ বেশ বড় ছিল (৫ মিমি) তাই ওর বৃদ্ধিও ঠিক মত হয়নি, ওজন মোটে ছয় কেজি। এদিকে বারংবার সংক্রমণের জন্য দু্র্বলও হয়ে পড়ছিল সে। এই করোনা পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে হাসপাতালে ভরতি করার ব্যপারে বাবা-মা দোলাচালে ছিলেন। কিন্তু দ্রুত পিডিএ ক্লোজার না করা হলে ওর সমস্যা গুরুতর হতে পারে। তাই সব দিক বিবেচনা করে তাকে ভরতি করে নেওয়া হয়।

এরপর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর শিশুটির পেটেন্ট ডাকটাস আর্টেরিওসিস ডিভাইস ক্লোজার করা হল। মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই শিশুটি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে। ওপেন হার্ট সার্জারি করা হলে সেরে উঠতে বেশি সময় লাগে, রক্তপাত হয় বলে। কিন্তু ডিভাইস ক্লোজারের ক্ষেত্রে ন্যূনতম রক্ত বেরোয় তাই রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।

এ ব্যাপারে আরএন টেগোরের চিকিৎসক জানিয়েছেন, যে সব শিশুর জন্মগত হার্টের সমস্যা আছে করোনার ভয়ে চিকিৎসা বন্ধ না রাখাই শ্রেয়। হার্টের সমস্যা ফেলা রাখলে আচমকা বিপদের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। বেশি। হাসপাতালে যথেষ্ট সাবধানতা নিয়ে পিপিই পরে ও সব রকমের সুরক্ষা নিয়ে তবেই রোগী দেখা হয়। অকারণে ভয় না পেয়ে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক যদি অস্ত্রোপচার বা ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নিতে বলেন তবে অকারণ দেরি করে বাচ্চার বিপদ বাড়াবেন না'। তিনি আরও বলেন, শিশুর যথযথ চিকিৎসা করিয়ে তাকে সুস্থ রাখাই বাবা-মায়ের দায়িত্ব। বাচ্চাকে ভালো রাখুন, ভালো থাকুন।

অনুলিখন: আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

পরের খবর

Lifestyleসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল