ব্রতের সময় কেউ ফলাহার করেন আবার কেউ কেউ ন'দিন ধরে নির্জলা উপোসও করেন। বলা হয়, শুদ্ধমনে এই নয়দিন সব নিয়ম মেনে যদি পুজো করেন তবে সব ইচ্ছা পূরণ হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, উপোসের দিনে হালকা এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। আপনি যদি সঠিকভাবে ব্রত পালন করেন, তাহলে এটি আপনাকে শুধু ওজন কমাতে সাহায্য করবে না বরং আপনার শরীরের সিস্টেম পুনরায় চালু করতে সাহায্য করবে। তাই এই সময় আপনার কী খাওয়া উচিত এবং কী নয়?
ফল এবং সবজি খাওয়া দরকার
পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন যে, দীর্ঘক্ষণ উপবাসে থাকার পর আমাদের ফল এবং সবজি খাওয়া দরকার। ফল এবং সবজিতে অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে। যা সেই সময়ে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সবজি এবং ফলের সঙ্গে নারকেলের দুধ, টাটকা নারকেল, ড্রাই ফ্রুটস এগুলোও রাখতে পারেন আপনার খাবাররে তালিকায়। সবজি রান্নার ক্ষেত্রেও তাঁরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, সেই খাবারে যেন খুব অল্প পরিমাণে লঙ্কা, মশলা এবং তেলের ব্যবহার করা হয়। এই সময় নুন খাবেরন না। দারুচিনি, সবুজ এলাচ, লবঙ্গ, গোলমরিচ, ডালিম উভয়ই যে কোনও ফলের খাবারের স্বাদ নিতে ব্যবহার করতে পারেন।
দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করুন
যাঁরা উপোস করেন তাঁদের দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য যেমন দুধ, পনির, সাদা মাখন, ঘি, খোয়া খাওয়া ভালো। আরও ভালো বিকল্প হল দই দিয়ে ফলের চাট খাওয়া। আপনি চাইলে সারাদিন ঘোল বা বাটারমিল্ক পান করতে পারেন। এটি আপনাকে সারাদিন ঠান্ডা এবং হাইড্রেটেড রাখার একটি দুর্দান্ত উপায়। উপবাসে থাকার সময় আমাদের শরীরকে হাইড্রেট রাখা খুবই জরুরি। এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়ার পাশাপাশি যদি সম্ভব হয় তাহলে নারকেল বা ডাবের জল খেতে পারেন। ডাবের জলের গুণাগুণ অনেক। এছাড়াও যেকোনও ফলের রসও খেতে পারেন এই সময়ে। যা আপনার শরীরকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন যোগাবে।
চটজলদি তৈরি খাবার নয়
দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার পর চটজলদি তৈরি হয়ে যাওয়া কোনও খাবার একেবারেই খাবেন না। এমনই পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যদি আপনি মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে ভালোবাসেন, তাহলে এই সময়ে খেজুর খেতে পারেন। অনেকেরই ধারণা রয়েছে যে, ১৬ ঘণ্টা যদি কোনও মানুষ উপোস করেন, তাহলে তিনি প্রথম ৮ ঘণ্টার পরই যা কিছু খেতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ধারণা একেবারেই ভুল। উপোস করার জন্য এবং উপবাস ভঙ্গের পর কী খাবার খাচ্ছেন, কতটা পরিমাণে খাচ্ছেন সেদিকে নজর না দিলে শরীর খারাপ হতে পারে।
রোদে বেশি ঘোরাঘুরি নয়
উপোস করলে রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করবেন না। পুজোর কাজে খাটাখাটনি থাকলেও বাড়ির কাজ করুন। বাইরে বেরোবেন না। রোদে ধকল বেড়ে মাথা ধরতে পারে। নির্জলা উপোস করলে মাঝে মাঝে মুখ, গলা, ঘাড়, হাত, পায়ে জলের ঝাপটা দিন। ফ্রেশ লাগবে।
ঘুম
আগের দিন রাতে অবশ্যই ভালো করে ঘুমোবেন। আগের রাতে ঘুম ভালো না হলে পর দিন উপোসের পর শরীর ভাঙতে বাধ্য। যদি খিদে মরেও যায় তবুও একেবারে খালি পেটে শুতে যাবেন না। সারা দিনের ধকলের পর কিছু না কিছু অবশ্যই মুখে দিয়ে শুতে যান। রাতে শোওয়ার আগে এক গ্লাস গরম দুধ খেয়ে শুতে যান। উপোস, পুজোর ধকলের ক্লান্তিতে ঘুম আসতে চায় না। গরম দুধ খেলে ঘুম ভালো হবে।
মশলাদার কোনও খাবার নয়
ভাজা, তৈলাক্ত বা মশলাদার কোনও খাবার খেয়ে উপোস ভাঙবেন না। সারা দিন খাবার ও জলের অভাবে এমনিতেই ডিহাইড্রেশন হয়। তার ওপর তেল-মশলাযুক্ত খাবার খেলে শরীর আরও জল টানবে। এতে শরীর খারাপ হবে। উপোস ভাঙার পর সব থেকে বেশি প্রয়োজন জল খাওয়া। তাই অল্প অল্প জল খেতে থাকুন। প্রতি দু’ঘণ্টায় জল অবশ্যই খাবেন।