ট্র্যাপ্ড
রাজকুমার রাও, গিতাঞ্জলি থাপা
EiSamay.Com | 23 Mar 2017, 11:47 am
অত্যন্ত সাধারণের অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প
আপনি নিতান্ত ছাপোষা৷ কাজ করেন সামান্য এক অফিসে৷ থাকেন ঠাসাঠাসি মেস বাড়িতে৷ বান্ধবীর সঙ্গে পার্কে বসে গরমাগরম চিনে বাজামভাজা খাওয়া --- এই হল আপাতত সাধ৷ মুশকিলের মধ্যে বান্ধবীর অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক৷ মরিয়া আপনি ফ্ল্যাটের খোঁজ করছেন৷ কিন্ত্ত সাধ্যে কুলোচ্ছে না৷ আপনার অবস্থা দেখে একজন দয়া পরবশ হয়ে পড়ে থাকা খালি বহুতলে একটা ফ্ল্যাটের খোঁজ দিল৷ তার চেনা একজনের ফ্ল্যাট৷ কিন্ত্ত সে আসেও না, থাকেও না৷ আশ্বাস দিল আপনি যতক্ষণ না অন্য কিছু পাচ্ছেন, ততক্ষণ ওখানে থাকতেই পারেন৷ ৪৫ তলায় ফ্ল্যাট৷ তার পুরোওওওটা আপাতত আপনার৷ আহা!
আপনি গেলেন ফ্ল্যাট দেখতে৷ আপনার ফোনের চার্জ প্রায় যায়-যায়৷ কতক্ষণ আর লাগবে? ফ্ল্যাট দেখে ফিরে এসে বসিয়ে দেবেন চার্জে৷ কোনও স্যিকুরিটি গার্ড চোখে পড়ল না৷ অবশ্য লোকটা বলেছে সে কানে খাটো৷ লিফ্ট দিয়ে উঠে সোজা ফ্ল্যাটে৷ না আছে বিদু্যত্৷ না জলের পাইপ৷ দরজায় চাবি ঝুলছে৷ চাবি ঘুরিয়ে আপনি ঢুকলেন৷ স্বপ্নরা টুক করে উঁকি মেরে গেল৷ আপনি যখন ভাবছেন খাটটা কোথায় রাখবেন, তখনই হাওয়ায় সদর দরজাটা গেল বন্ধ হয়ে৷ খেয়াল করেননি চাবিটা রয়ে গিয়েছে বাইরেই৷
এবার?
এবার কী হবে, সেটা জানার জন্য 'ট্র্যাপ্ড' দেখতে হবে৷
না, সেখানে আপনি নেই৷ কলকাতাও নেই৷ আছে শৌর্য বলে একটি ছেলে৷ আর মুম্বই৷ স্বপ্নের শহর, সুপারস্টারদের শহর, তাবড় উচ্চাকাঙ্খিদের শহর, দেশের অর্থনৈতিক শ্বাসপ্রশ্বাসের শহর --- মুম্বই৷ যেখানে ঠিক ওপরে বিবরণ দেওয়া অবস্থায় আটকে পড়ে ছাপোষা শৌর্য৷
খাঁ-খাঁ বহুতলে আটকে পড়া একটা মানুষ৷ খাবার নেই, জল নেই৷ বিদু্যত্ নেই৷ সবে ধন নীলমণি ফোনের চার্য শেষ৷ কী করবে সে? তার অসহায় চিত্কার পৌঁছয় না কারও কানে৷ কেউ তো ভাবেই না ওখানে মানুষ আছে বলে! ছবিটা দেখতে দেখতে উপলব্ধি হবে যাবতীয় প্রগতি, উন্নতি, আই-ফোন, বহুতলের ফুরফুরে এয়ার-কন্ডিশনার, মারর্সেডিজ-এর বুলির আড়লে থাকা মানুষ একটা সামান্য পরিস্থিতির চাপে পড়ে এখনও কতটা অসহায়৷ এবং এটাই তার আসল রূপ৷ সেই ঠুঁটো সাফল্যের চাপানো খোল যখন পেঁয়াজের খোসার মতো পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে ছাড়াতে থাকেন, আমরা সিনেমা হলের অন্ধকার ঘরে শিউরে উঠি৷ কানে আসে কয়েকটা নার্ভাস মৃদু হাসি৷ তারপর স্তব্ধতা৷
কারণ, বাঁচতে শৌর্যকে ফিরে যেতে হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগে৷ বহুতলের ঘরে বসে এক গাল দাড়ি-গোঁফের নিরামিশাষি শৌর্য যখন পায়রা মেরে পুড়িয়ে খায়, বা গ্রিলের বাইরে বৃষ্টির জল ধরে রাখে বালতি ভরে, তখন মনে হয় কিসের এই অগ্রগতি আর কিসেরই বা এই উন্নয়ন! 'সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট' মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে তাকে জয় করতে হয় সব থেকে বড় ভয়কে৷ আমূল পালটে ফেলতে হয় তার সযত্নে লালিত এতদিনের বিশ্বাস৷ নিচে বয়ে যাওয়া 'ম্যাক্সিমাম সিটি' মুম্বই আর ওপরে সেই সিটিতেই পরিস্থিতির চাপে পড়ে প্রাগৈতিহাসিক জীবনযাপন করা একটা মানুষ --- কুর্নিশ ছবির ভাবনাকে৷
তিন 'ছোকরা'র (অনুরাগ কাশ্যপ, বিকাশ ভাহ্ল, মধু মন্টেনা) প্রযোজনায় 'ট্র্যাপ্ড' যদি তাদের সাগনেচার ছবি হয়, ঠিক ততটাই অভিনেতা রাজকুমার রাওয়ের ছবি৷ দেখতে দেখতে মনে হয় যেন থিয়েটারে বসে এক অতি শক্তিশালী একাঙ্ক নাটক দেখছি৷ যেখানে স্ক্রিনটা স্টেজ আর অভিনেতা একা রাজকুমার৷ নিঃসন্দেহে এই ছবি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন হয়ে থাকল৷
তবে শেষ পর্যন্ত 'ট্র্যাপ্ড' মানুষের অন্তর্নিহিত ক্ষমতার কথাই বলে৷ আজকের দিনের গলাবাজি, পেশি-শক্তির রাজনীতির বা টাকার ক্ষমতা নয় --- মানুষের রক্ত-মাংস-মজ্জা-বুদ্ধির ক্ষমতা৷ যা দিয়ে মানুষ তৈরি৷ অত্যন্ত সাধারণের অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প৷ যার উপাদান নিহিত আছে আমাদের মধ্যেই৷
আপনি নিতান্ত ছাপোষা৷ কাজ করেন সামান্য এক অফিসে৷ থাকেন ঠাসাঠাসি মেস বাড়িতে৷ বান্ধবীর সঙ্গে পার্কে বসে গরমাগরম চিনে বাজামভাজা খাওয়া --- এই হল আপাতত সাধ৷ মুশকিলের মধ্যে বান্ধবীর অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক৷ মরিয়া আপনি ফ্ল্যাটের খোঁজ করছেন৷ কিন্ত্ত সাধ্যে কুলোচ্ছে না৷ আপনার অবস্থা দেখে একজন দয়া পরবশ হয়ে পড়ে থাকা খালি বহুতলে একটা ফ্ল্যাটের খোঁজ দিল৷ তার চেনা একজনের ফ্ল্যাট৷ কিন্ত্ত সে আসেও না, থাকেও না৷ আশ্বাস দিল আপনি যতক্ষণ না অন্য কিছু পাচ্ছেন, ততক্ষণ ওখানে থাকতেই পারেন৷ ৪৫ তলায় ফ্ল্যাট৷ তার পুরোওওওটা আপাতত আপনার৷ আহা!
আপনি গেলেন ফ্ল্যাট দেখতে৷ আপনার ফোনের চার্জ প্রায় যায়-যায়৷ কতক্ষণ আর লাগবে? ফ্ল্যাট দেখে ফিরে এসে বসিয়ে দেবেন চার্জে৷ কোনও স্যিকুরিটি গার্ড চোখে পড়ল না৷ অবশ্য লোকটা বলেছে সে কানে খাটো৷ লিফ্ট দিয়ে উঠে সোজা ফ্ল্যাটে৷ না আছে বিদু্যত্৷ না জলের পাইপ৷ দরজায় চাবি ঝুলছে৷ চাবি ঘুরিয়ে আপনি ঢুকলেন৷ স্বপ্নরা টুক করে উঁকি মেরে গেল৷ আপনি যখন ভাবছেন খাটটা কোথায় রাখবেন, তখনই হাওয়ায় সদর দরজাটা গেল বন্ধ হয়ে৷ খেয়াল করেননি চাবিটা রয়ে গিয়েছে বাইরেই৷
এবার?
এবার কী হবে, সেটা জানার জন্য 'ট্র্যাপ্ড' দেখতে হবে৷
না, সেখানে আপনি নেই৷ কলকাতাও নেই৷ আছে শৌর্য বলে একটি ছেলে৷ আর মুম্বই৷ স্বপ্নের শহর, সুপারস্টারদের শহর, তাবড় উচ্চাকাঙ্খিদের শহর, দেশের অর্থনৈতিক শ্বাসপ্রশ্বাসের শহর --- মুম্বই৷ যেখানে ঠিক ওপরে বিবরণ দেওয়া অবস্থায় আটকে পড়ে ছাপোষা শৌর্য৷
খাঁ-খাঁ বহুতলে আটকে পড়া একটা মানুষ৷ খাবার নেই, জল নেই৷ বিদু্যত্ নেই৷ সবে ধন নীলমণি ফোনের চার্য শেষ৷ কী করবে সে? তার অসহায় চিত্কার পৌঁছয় না কারও কানে৷ কেউ তো ভাবেই না ওখানে মানুষ আছে বলে! ছবিটা দেখতে দেখতে উপলব্ধি হবে যাবতীয় প্রগতি, উন্নতি, আই-ফোন, বহুতলের ফুরফুরে এয়ার-কন্ডিশনার, মারর্সেডিজ-এর বুলির আড়লে থাকা মানুষ একটা সামান্য পরিস্থিতির চাপে পড়ে এখনও কতটা অসহায়৷ এবং এটাই তার আসল রূপ৷ সেই ঠুঁটো সাফল্যের চাপানো খোল যখন পেঁয়াজের খোসার মতো পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে ছাড়াতে থাকেন, আমরা সিনেমা হলের অন্ধকার ঘরে শিউরে উঠি৷ কানে আসে কয়েকটা নার্ভাস মৃদু হাসি৷ তারপর স্তব্ধতা৷
কারণ, বাঁচতে শৌর্যকে ফিরে যেতে হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগে৷ বহুতলের ঘরে বসে এক গাল দাড়ি-গোঁফের নিরামিশাষি শৌর্য যখন পায়রা মেরে পুড়িয়ে খায়, বা গ্রিলের বাইরে বৃষ্টির জল ধরে রাখে বালতি ভরে, তখন মনে হয় কিসের এই অগ্রগতি আর কিসেরই বা এই উন্নয়ন! 'সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট' মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে তাকে জয় করতে হয় সব থেকে বড় ভয়কে৷ আমূল পালটে ফেলতে হয় তার সযত্নে লালিত এতদিনের বিশ্বাস৷ নিচে বয়ে যাওয়া 'ম্যাক্সিমাম সিটি' মুম্বই আর ওপরে সেই সিটিতেই পরিস্থিতির চাপে পড়ে প্রাগৈতিহাসিক জীবনযাপন করা একটা মানুষ --- কুর্নিশ ছবির ভাবনাকে৷
তিন 'ছোকরা'র (অনুরাগ কাশ্যপ, বিকাশ ভাহ্ল, মধু মন্টেনা) প্রযোজনায় 'ট্র্যাপ্ড' যদি তাদের সাগনেচার ছবি হয়, ঠিক ততটাই অভিনেতা রাজকুমার রাওয়ের ছবি৷ দেখতে দেখতে মনে হয় যেন থিয়েটারে বসে এক অতি শক্তিশালী একাঙ্ক নাটক দেখছি৷ যেখানে স্ক্রিনটা স্টেজ আর অভিনেতা একা রাজকুমার৷ নিঃসন্দেহে এই ছবি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন হয়ে থাকল৷
তবে শেষ পর্যন্ত 'ট্র্যাপ্ড' মানুষের অন্তর্নিহিত ক্ষমতার কথাই বলে৷ আজকের দিনের গলাবাজি, পেশি-শক্তির রাজনীতির বা টাকার ক্ষমতা নয় --- মানুষের রক্ত-মাংস-মজ্জা-বুদ্ধির ক্ষমতা৷ যা দিয়ে মানুষ তৈরি৷ অত্যন্ত সাধারণের অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প৷ যার উপাদান নিহিত আছে আমাদের মধ্যেই৷