অ্যাপশহর

দালেরের ‘তুনক তুনক ধুন’ কোরিয়ানরা জানে

যেন কোরিয়ায় এসে পড়েছি ! জিডি বিড়লা সভাঘরের তিনতলায় উঠে হঠাত্ এমনটাই মনে হল৷

EiSamay.Com 29 Nov 2017, 1:58 pm
জানাচ্ছেন কোরিয়ার থিয়েটার পরিচালক হিউন সু কিম৷ কোরিয়ার হাল সময়ের সংস্কৃতি , ভারতের সঙ্গে আদান -প্রদান সহ নানা বিষয়ে কলকাতায় বসে তাঁর সঙ্গে কথা বললেন ইন্দ্রনীল শুক্লা।
EiSamay.Com south korean film director and screenwriter hyun su kim
দালেরের ‘তুনক তুনক ধুন’ কোরিয়ানরা জানে


যেন কোরিয়ায় এসে পড়েছি ! জিডি বিড়লা সভাঘরের তিনতলায় উঠে হঠাত্ এমনটাই মনে হল৷ একদল পীতবর্ণ ছটফটে ছেলেমেয়ে চুটিয়ে গল্প করছে৷ সকলেই কোরিয়ার৷ তাই ভাষা বোঝা যাচ্ছে না৷ ‘শেফ ’ নাটকের শো সাফল্যের সঙ্গে শেষ হয়েছে৷ সম্ভবত সেই মানসিক শান্তি থেকেই উচ্ছ্বাস , সেটা আন্দাজ করেই নেওয়া যাচ্ছে৷ তাঁদের কাছেই খোঁজ নেওয়া গেল এই শোয়ের পরিচালক হিউন সু কিম -এর৷ কিম ’কে পাওয়া গেল গ্রিন রুমে৷ সাংবাদিক শুনে তিনি ডাকলেন এক যুবককে , যাঁর নাম জুনহো লি৷ তিনিই ভাষাবন্ধনের দায়িত্ব নিলেন৷

ভারতের সঙ্গে কোরিয়ার সম্পর্ক প্রায় দু’হাজার বছরের প্রাচীন৷ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চিরকাল ভালো৷ এই সম্পর্ককে কেমনভাবে দেখেন তিনি দেখেন ? কিম বলছেন , ‘দু’টো দেশের মধ্যে ভালো সম্পর্ক আছে এটা দেখতে তো সবসময়ই ভালো লাগে৷ সারা পৃথিবীতে নানা দেশ যখন রেষারেষির মধ্যে আছে , তখন দু’টো দেশ পরস্পরকে বন্ধু ভাবছে , পাশে থাকছে এটা নিশ্চয়ই ভালো৷ এটা যেন নষ্ট না হয় সবসময় দেখতে হবে৷ পারস্পরিক আদান -প্রদান আরও বাড়াতে হবে৷ ’উল্লেখ করা যেতে পারে , দু’টো দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো৷ কোরিয়ার স্যামসুং , এলজি , হুন্ডাইয়ের মতো কোম্পানিগুলো ভারতে বেশ একটা বলার মতো ব্যবসা করছে৷ এটা তিনি কেমনভাবে দেখেন ? কিম মনে করছেন , ‘পরস্পরের উপর বিশ্বাস থাকলে তবেই ভালো বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷ সেটা তো ভালোই৷

কিন্ত্ত আমি নিজে যেহেতু সংস্কৃতি জগতের মানুষ , তাই সবসময়ই চাই দু’টো দেশের বাণিজ্যের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন যেন মজবুত হয়৷ আর সেই কাজটাই হওয়া সম্ভব সাংস্কৃতিক আদান -প্রদানের মধ্যে দিয়ে৷ গান -বাজনা -নাটক -সিনেমা মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে আসে খুব সহজে৷ ’ দিল্লি থেকে আসা কোরিয়ার দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কূটনৈতিক প্রতিনিধি সো ইয়েন পার্ক আগেই জানিয়েছিলেন ,
‘কোরিয়ার সংস্কৃতিকে কলকাতা তথা ভারতের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে৷ এমন অনুষ্ঠান ভারতের আরও নানা প্রান্তে আয়োজন করা হবে৷’ একই রকম বক্তব্য কলকাতায় কোরিয়ার কনসাল জেনারেল রাজীব কল -এরও৷ তাঁদের কথার প্রতিফলন সত্যিই মিলেছে ‘শেফ’ নাটকে৷

এ নাটকে গল্পের সাহচর্যে কোরিয়ার খাবার , ফ্যাশন , গান , নাচ সম্পর্কিত একটা সম্যক , সার্বিক ধারণা মিলেছে৷ মোটের উপর এখনকার (দক্ষিণ ) কোরিয়ায় যা যা চলছে সেই সবকিছু ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম ‘শেফ ’৷ গোটা নাটকটিতে বিট -বক্সিং ব্যবহূত হল কখনও শুধুমাত্র ছন্দ আনার কাজে , কখনও বা ফোলি আর্টিস্টের মতো করে জল পড়া , কড়ায় রান্না করা ইত্যাদির শব্দ গড়ার জন্য৷ দুই বিট -বক্সার ছোয় সেংছুল আর কিম কিইয়াং একেবারে মাত করলেন৷ ‘বিট -বক্সিং ’ সম্পর্কে খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায় , কোনও বাদ্যযন্ত্র ছাড়া কেবল মুখে শব্দ করে নানা রিদম , স্পেশ্যাল এফেক্ট তৈরি করার এক বিশেষ শিল্পকলা৷ এই আর্ট কি তবে কোরিয়ায় খুব চলছে ?

হাত এলোমেলো দেখিয়ে কিম বলেন , ‘আসলে এটা নতুন একটা ফর্ম৷ কিন্ত্ত নাটকে তো সমস্ত রকমের ফর্মই ব্যবহার করা যায়৷ তাই না ? আমি ভেবে দেখলাম টিনএজারদের আকর্ষণ করতে এটা নাটকে রাখা যেতে পারে৷ বিট -বক্সিং কোরিয়ার ছেলে -পুলেরা খুব শিখছে এখন৷ মাস তিনেক ট্রেনিং নিয়েই পারফর্ম করতেও শুরু করে দিচ্ছে৷ ’ পাশাপাশি নাটকে দেখা গেল বি -বয়িং -ও৷ এটি হল হাতে ভর দিয়ে শূন্যে ভেসে এক বিশেষ ধরনের নৃত্য শৈলী , অনেকটা হিপ -হপের মতো৷ এই নাচ নাটকের বেশ কয়েকজন শেফ -চরিত্রকে পারফর্ম করতে দেখা গেল৷ বি -বয়িং ’ও তবে কোরিয়ার নিউ জেন খুব পছন্দ করছে ? ‘কেন এই নাচ আমাদের দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে , কেন টিন -এজাররা সহজেই এটা রন্ত করতে পেরেছে সেটা বোঝার জন্য একটা ব্যাপার আগে জানা দরকার৷ কোরিয়ার মার্শাল আর্ট চর্চা কিন্ত্ত কয়েকশো বছর ধরে হয়ে আসছে৷ নাচটা করার জন্য যে বেশ শারীরিক ফিটনেস দরকার সেটা তো দেখে বুঝতেই পেরেছেন৷ কিন্ত্ত যেহেতু কোরিয়ান ছেলে -মেয়েরা প্রায় সকলেই তাইকুনেডো শেখে , তাই তাদের কাছে এটা কোনও সমস্যাই হচ্ছে না৷ ’নাটকে তো দালের মেহেন্দির ‘তুনুক তুনুক ধুন ’ ব্যবহূত হল৷ আর তাতে জমিয়ে নাচলেনও পারফরমাররা৷ তাঁদের স্পষ্ট লিপ মেলাতেও দেখা গেল৷ এই গানটা ... কথা থামিয়ে দিয়ে কিম হাসতে হাসতে বলেন , ‘জানি খুব অবাক হয়েছেন৷ কিন্ত্ত যেটা শুনলে আরও অবাক হবেন তা হল , দালের মেহেন্দির অনেক গানই মানে না বুঝলেও কোরিয়ার মানুষ শোনেন৷ আর এই গানটা তো আমাদের দেশে খুব জনপ্রিয়৷ তাই মনে হল ভারতে যখন একটা পারফরম্যান্স হচ্ছে তখন এই গানটা রাখা যাক৷ দর্শকের উচ্ছ্বাসটাও স্পষ্ট চোখে পড়েছে৷ দু দেশের মানুষ একই গানে শরীর দোলাচ্ছেন ! অতএব আমার চেষ্টাটা সফল৷ সাংস্কৃতিক বন্ধন এভাবেই গড়ে ওঠে , যেটা একটু আগেই বলছিলাম৷ ’

পরের খবর

Entertainmentসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল