অ্যাপশহর

বিদেশি শুনেই কাঁধ ঝুঁকিয়ে নেব কেন?

কেবল রাজ বব্বরের স্ত্রী কিংবা আর্য বব্বরের মা, এটা তাঁর পরিচয় হতে পারে না।

EiSamay.Com 21 Jun 2017, 1:46 pm
কেবল রাজ বব্বরের স্ত্রী কিংবা আর্য বব্বরের মা, এটা তাঁর পরিচয় হতে পারে না। নাদিরা জাহির বব্বর দেশের অন্যতম নামী নাট্যব্যক্তিত্ব। শহরে এসেছিলেন এক থিয়েটার ওয়ার্কশপ-এ। তখনই তাঁর মুখোমুখি। কথা বললেন ইন্দ্রনীল শুক্লা
EiSamay.Com interview of indian theatre actress nadira babbar
বিদেশি শুনেই কাঁধ ঝুঁকিয়ে নেব কেন?


মুভ’! বললেই বিরাট চক্রাকারে ঘুরছে প্রায় শ’দুয়েক ছেলেমেয়ে৷ আর ‘লাভ সার্কেল ’! বললেই কাছাকাছি যে কয়েকজন থাকছে তারা পরস্পরকে জড়িয়ে জড়িয়ে ছোট ছোট বৃত্ত তৈরি করছে৷ প্রথমে গোলগুলো শৃঙ্খলাবদ্ধ হচ্ছিল না৷ ক্রমে হতে লাগলো৷ আর হাসি ফুটলো নাদিরা জাহির বব্বরের মুখে৷ বলা বাহুল্য, এই ওয়ার্কশপ থিয়েট্রিক্যাল৷

কিন্ত্ত যাঁরা তাঁর এই ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরা ম্যানেজমেন্ট স্টুডেন্ট৷ ঘটনাস্থল ইন্টারন্যাশনাল ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট৷ সেখানেই কথা বলতে বসলেন এক ফাঁকে৷ স্বাভাবিক কারণেই জানতে ইচ্ছে হল, তাহলে ম্যানেজমেন্ট পড়তে হলেও থিয়েটারের প্রয়োজন ? হেসে ফেললেন, ‘দেখুন, আমি তো মনে করি থিয়েটার প্রত্যেকের জীবনেই প্রয়োজন৷ থিয়েটারে অল্প কিছুটা করে সময় কাটালেও মানুষের পক্ষে কোনও পরিস্থিতি ফেস করা অনেক সহজ হয়৷ আবার কারও সামনে নিজেকে ঠিকঠাক উপস্থাপন করতেও শেখায় থিয়েটার৷ ’

কিন্ত্ত এতখানিই যদি প্রয়োজনীয় তাহলে থিয়েটার কেন জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে ? কেন মানুষ থিয়েটার দেখতে সেভাবে ভিড় করেন না ? নাদিরা বলছেন, ‘না , এটা মানতে পারলাম না৷ আমার মনে হয় ব্যাপারটা কিছুটা শিফট করেছে৷ বড় বড় শহরের মানুষরা যেন মোবাইল , গ্যাজেট , নেট , সিনেমা এইসব নিয়েই মেতে আছে৷ কিন্ত্ত তুলনায় ছোট শহরের মানুষ এখনও নাটকের সঙ্গে একাত্ম আছেন৷ তাঁরা নতুন নতুন দল গড়ছেন নাটকের৷ চেষ্টা করছেন৷ এই তো আমি হালে বরেলি গিয়েছিলাম , বেগুসরাই গিয়েছিলাম৷ অনেক নতুন দলকে চেষ্টা করতে দেখলাম৷ ভালো লাগলো খুব৷’এনএসডি থেকে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত, সঙ্গীত-নাটক পুরস্কারজয়ী এই নাট্যশিল্পী একদা স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানি গিয়েছিলেন৷

গ্রটস্কি , পিটার ব্রুকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ মিলেছে৷ কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা , জানতে ইচ্ছে হল৷ বললেন , ‘ওখানকার থিয়েটার খুব উচ্চমানের৷ সকলে প্যাশন নিয়ে কাজ করেন সব সত্যি৷ কিন্ত্ত সত্যি বলুন তো ‘মহাভারত ’ ছাড়া পিটার ব্রুকের কথা আর শুনেছেন ? ওঁর প্রতি সমস্ত সম্মান রেখে বলছি , উনি ধারাবাহিকভাবে ভালো কাজ করে যেতে পারেননি৷ প্রচুর অ্যাভারেজ কাজও করেছেন৷ অন্য দেশের থিয়েটার ব্যক্তিত্ব বলেই আমাদের কাঁধ ঝুঁকে যাওয়ার কিন্ত্ত কোনও কারণ নেই৷

জানি আমার মতো করে এই কথাটা এতখানি সাহস নিয়ে খুব কম মানুষই বলেন , কিন্ত্ত দায়িত্ব নিয়ে বলছি নাট্যশিল্প নিয়ে আমরা ভারতীয়রা যথেষ্ট গর্ব করার মতো জায়গায় আছি , ভাবনায় এবং পারফরম্যান্সে৷ আমাদের দেশের নাট্যধারাটা খুব প্রাচীন আর সমৃদ্ধ৷ আমার গুরু ইব্রাহিম আলকাজির কাছে আমি যা শিখেছি তা ওঁদের থেকে শিখতে পারিনি৷ ’রাজ বব্বরের প্রথমা স্ত্রী -র সঙ্গে কথা বলতে বসে , রাজ বব্বরের প্রসঙ্গ একেবারে উঠবে না তা হয় নাকী ? শোনা যায় এনএসডি -তে পড়ার সময়েই তাঁদের প্রেম ! ‘উফফ , অনেক বয়স হয়ে গিয়েছে৷ ওইসব পুরনো লাভস্টোরির কথা ছাড়ুন তো৷ না এনএসডি -তে ঠিক প্রেম হয়নি৷ হয়েছিল বাইরে৷ ’

ব্যক্তিগত প্রসঙ্গগুলোয় ঢুকতে চাইছিলেন না নাদিরা৷ কথায় কথায় রাজ বব্বর -স্মিতা পাতিল প্রসঙ্গ চলে আসুক, তিনি সম্ভবত চাইছিলেন না৷ তবু স্মিতা অসময়ে চলে যাওয়ার পর রাজ ফিরে এসেছিলেন তাঁর কাছে৷ রাজ একসময়ে রাজনীতিতে যোগ দেন৷ নাদিরার বাবা সাজ্জাদ জাহির বামপন্থী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন প্রত্যক্ষভাবে৷ রাজনীতিতে আসার সময় কি তিনি নাদিরার পরামর্শ নিয়েছিলেন ? নাদিরা বলছেন , ‘না৷ ওটা ওঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত ছিল৷ তাছাড়া রাজ বারো ক্লাসে পড়ার সময় থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ এটা ওঁর হঠাত্ করে আসা নয়৷ ’ছেলে আর্য বব্বর অভিনয়ে যুক্ত৷ মেয়ে জুহিও অভিনয় ও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন৷ তাঁদের মা তথা অভিনেতা হিসেবে কোনও পরামর্শ দেন ? একটু ভেবে বললেন , ‘আমি খুব বেশি কাউকে পরামর্শ দেওয়ার পক্ষপাতী নই৷ আমার মনে হয় সকলকে স্বাভাবিকভাবে নিজের মতো করে গ্রো করতে দেওয়া উচিত৷ প্রত্যেকে নিজের সময়ের মতো করে নিজেকে তৈরি করে৷ আমার ভাবনা এই সময়ের সঙ্গে ম্যাচ করবেই এমন ভেবে নেওয়া ঠিক নয়৷ হ্যাঁ, ওরা যখন অভিনয়ের ব্যাপারে আমার কাছে নিজে থেকে এসে কিছু জানতে চায় , অবশ্যই টিপস দিই৷ তাছাড়া , অ্যাকটিং তো একটা পারফর্মিং আর্ট৷ মুখে অনেক কিছু বলে শেখানো যায় না৷ করতে করতে শিখতে হয়৷ ’কমার্শিয়াল ছবিতে খুব কম হলেও কাজ করেছেন নাদিরা৷

‘ব্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস ’ ছবিতে তিনি ঐশ্বর্যা রাইয়ের মা হয়েছেন৷ সলমন খানের মা হয়েছেন ‘জয় হো ’ ছবিতে৷ এঁদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ? অভিনেতা হিসেবে এঁদের কেমন মনে হয় ? নাদিরা বলছেন , ‘ওঁরা কমার্শিয়াল ছবিতে কাজ করেন বলেই ওঁদের খাটো নজরে দেখবো এটা কিন্ত্ত আমার মধ্যে নেই৷ দর্শকের মধ্যে ওঁরা যে রকম ছবিতে কাজ করেন তার চাহিদা তো রয়েছে , তবেই তো ওঁরা কাজ করছেন৷ আর দর্শকের চাহিদার জন্য ওঁরা যে বরফের মধ্যে স্বল্প পোশাকে নাচ -গান করেন , রাজস্থানের মরুভূমিতে প্রচণ্ড গরমে ঘাম মুছতে মুছতে প্রেমের ডায়ালগ দেন , এটাও কিন্ত্ত সহজ কাজ নয়৷ ’

থিয়েটারের লোকজন যে ফিল্মে , সিরিয়ালে কাজ করেন এই ব্যাপারটা তাঁর কেমন লাগে ? ‘খুব ভালো লাগে৷ বিশ্বাস করুন৷ নতুন ছেলেমেয়েরা জিজ্ঞাসা করলে নিজেই বলি টিভি -ছবিতে কাজ করতে৷ আরে বাবা , কাজটা তো অভিনয়েরই৷ তাছাড়া একজন শিল্পীকে তো খেয়ে -পরে বেঁচে থাকতে হবে !’কলকাতার থিয়েটার দেখেছেন ? ‘এখনকার বাংলা থিয়েটার আমার দেখা হয়নি৷ কিন্ত্ত রুদ্রপ্রসাদ সেনগুন্ত , শম্ভু মিত্র , উত্পল দত্ত এঁদের নাটক একসময়ে ছুটে ছুটে দেখতে গিয়েছি৷ উত্পলদার সঙ্গে অনেক থিয়েটার ফেস্টিভ্যালে একসঙ্গে ট্র্যাভেলও করেছি৷ অনেক কিছু শিখেছি ওঁর থেকে৷ থিয়েটার করি , কলকাতার থিয়েটার দেখিনি হয় নাকি !’

পরের খবর

Entertainmentসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল