অ্যাপশহর

'হঠাৎই রবিবার মনে পড়েছিল শাঁওলীদির কথা'

খবরটা শুনলাম রবিবার রাতে। বুকের ভেতরটা কাঁদছে। রবিবার দুপুরেই মনে পড়ছিল শাঁওলীদির কথা। শাঁওলী মিত্র সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কলম ধরলেন অভিনেত্রী ও অধ্যাপিকা সুকৃতি লহরী।

Ei Samay 18 Jan 2022, 3:04 pm

হাইলাইটস

  • রবিবারই দুপুর বা বিকেলের দিকে হঠাৎই মনে পড়েছিল শাঁওলীদির কথা বলে জানালেন সুকৃতি লহরী
  • সুদৃশ্য মঞ্চসজ্জা আর শাঁওলীদির অনুপম সাজ, ওই কণ্ঠস্বর ম্যাজিকের মতো মোহমুগ্ধ করে রাখতো।
  • মঞ্চে দেখেছি প্রথম 'নাথবতী অনাথবৎ'।
EiSamay.Com SHAOLI MITRA NEWS
শাঁওলী মিত্র
সুকৃতি লহরী
খবরটা শুনলাম রবিবার রাতে। বুকের ভেতরটা কাঁদছে। এখনও। কী ভাবে বলবো যে রবিবারই দুপুর বা বিকেলের দিকে হঠাৎই মনে পড়েছিল শাঁওলীদির কথা। ভেবেছিলাম একবার দেখা করবো। কতদিন দেখা হয় না। শাঁওলীদি যখন 'বহুরূপী'-তে নেই, আমি সেই সময়পর্বে ১৯৮৫-তে এসেছিলাম 'বহুরূপী'-তে। একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ ঘটেনি কখনও। কিন্তু কী করে যেন আমি হয়ে উঠেছিলাম একলব্যের মতো। আমাদের অভিনয়ের বড় হওয়া শাঁওলীদির অভিনয় দেখে। মঞ্চকে শাসন করতেন। 'নাথবতী অনাথবৎ' সম্পর্কে শাঁওলীদির একটি লেখার সূত্রে গিয়েছিলাম ওঁর ল্যান্সডাউনের ফ্ল্যাটে। আলাপ হলো, সম্পর্ক তৈরি হলো। ভালোবাসার সম্পর্ক। অভিনয় শেষে সব সময় দেখা করে আসতাম। এক মুখ হাসি নিয়ে বলতেন, 'এসেছিস!' 'চাঁদ বণিকের পালা' পাঠাভিনয়ের পর যখন অ্যাকাডেমি মঞ্চের গ্রিনরুমে গিয়েছি, চোখভর্তি জল আমার। অসম্ভব কষ্ট হচ্ছিল। শাঁওলীদির মুঠোর মধ্যে দু' হাত ভরে দিয়ে শক্ত করে ধরে আমার অনুভবকে প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। শাঁওলীদির পাঠাভিনয় সত্যি এক অভিজ্ঞতা!

প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ হয়ে যেত। সুদৃশ্য মঞ্চসজ্জা আর শাঁওলীদির অনুপম সাজ, ওই কণ্ঠস্বর ম্যাজিকের মতো মোহমুগ্ধ করে রাখতো। এত সুন্দর দেখাত। শেষ শুনেছি 'সীতা'-র পাঠাভিনয়।

শম্ভু ও তৃপ্তি মিত্রের মাঝের দূরত্ব মেটাতেন শাঁওলি: শুভাপ্রসন্ন

মঞ্চে দেখেছি প্রথম 'নাথবতী অনাথবৎ'। তারপর 'রাজা', 'কথা অমৃতসমান', 'বিতত বিতংস', 'পুতুল খেলা', 'পশুখামার'...না চণ্ডালী আমার দেখা হয়নি। দ্রৌপদী, সুদর্শনা, তিস্তা, বুলু...স্বপ্নের সব চরিত্ররা...চরিত্রায়ণ! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার গবেষণাপত্রের অনেকটা অংশ জুড়ে শাঁওলীদির কথা- নাট্যনির্দেশক শাঁওলী মিত্র। তখন শাঁওলী মিত্রের লেখা পড়তে পড়তে আমার কানে বাজতো শাঁওলীদির কণ্ঠস্বর।

আড়ালে চিরবিদায় শাঁওলি মিত্রের, শোকার্ত সতীর্থরা

বেশ কিছুদিন আগে শাঁওলীদি 'চাঁদ বণিকের পালা' প্রযোজনা করবেন বলে স্থির করেছিলেন। আমার সৌভাগ্য অর্পিতা (ঘোষ) আমাকে জানায় শাঁওলীদি একটি চরিত্রে আমাকে ভেবেছেন। প্রযোজনা হয়নি। দুঃখ হয়েছিল। আর আবেগে আপ্লুত হয়েছিলাম, বাংলা আকাদেমিতে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে শাঁওলীদি আমার নাম প্রস্তাব করেছিলেন। বেশ অনেকক্ষণ ধরে একটা গল্প পাঠ করেছিলাম। সামনের সারিতে শাঁওলীদি। অনেকগুলো চরিত্রে গলা বদলে বদলে আমি অভিনয় করেছিলাম। খুব প্রশংসা করেছিলেন। আমি তো আহ্লাদে আটখানা। সে দিন খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল শাঁওলীদিকে। বলেছিলাম, 'খুব সুন্দর লাগছে তোমায়। এক্কেবারে তরুণী!'খুব হাসছিলেন। আবারও গল্পপাঠের ডাক পেলাম! বাংলা আকাদেমির অনুষ্ঠান। শুভময় বললো, শাঁওলীদি তোর নাম বলেছে। হাত কাঁপছে লিখতে, কেন মনে পড়লো আজ তোমায়! কেন!

পরের খবর