অ্যাপশহর

ডিগ্রি নেই... সারস্বত আছে

সরস্বতী পুজোর দিন, একটু পড়াশোনা নিয়ে চর্চা৷ প্রথাগত না জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষা? স্যাম্পেল এরিয়া: টালিগঞ্জ৷

EiSamay.Com 1 Feb 2017, 10:02 am
সরস্বতী পুজোর দিন, একটু পড়াশোনা নিয়ে চর্চা৷ প্রথাগত না জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষা? স্যাম্পেল এরিয়া: টালিগঞ্জ৷ তার মধ্যে কলেজ-স্কুল এড়ানো সাত৷ কথা বললেন ভাস্বতী ঘোষ
EiSamay.Com tollywood celebs who dont have higher educational degrees
ডিগ্রি নেই... সারস্বত আছে



টালিগঞ্জে যে নায়িকা যখন সাফল্যের শীর্ষে, তখন তাঁর সম্পর্কে একটা বাক্য ব্যবহার করার চল রয়েছে-রূপে লক্ষ্মী, গুণে সরস্বতী৷ আর যদি কোনও নায়ক সাফল্যের শীর্ষে থাকেন, কিঞ্চিত্ রসিকতা করে তাঁকে নারায়ণ বলা হয়৷ অর্থাত্ সরস্বতী আর লক্ষ্মী দুই-ই তাঁর জীবনে বর্তমান৷ কিন্তু বাঙালিদের কাছে সরস্বতী যে সর্বপ্রথমে বিদ্যার দেবী৷ সরস্বতী পুজো মানে বাঙালির হাতেখড়ি৷ বোর্ড পরীক্ষার বছরে সরস্বতীর কাছে প্রার্থনাটা একটু বেশিক্ষণ ধরে করে বাঙালি- পরীক্ষার নম্বরটা যেন ভালো হয়!

অথচ টালিগঞ্জ পাড়ায় খোঁজ নিলে দেখা যাবে, যাঁদের ওপর সরস্বতী আর লক্ষ্মী বেজায় সদয়, তাঁদের পুঁথিগত বিদ্যা কিন্তু বেশ কম! ব্যতিক্রম আছে৷ কিন্তু টলিউডে বেশিরভাগ উজ্জ্বল মুখের ঝুলিতেই বিরটা-বিরাট ডিগ্রি নেই৷ আর তা নিয়ে তাঁদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথাও নেই৷ তাঁরা মনে করেন, পুঁথিগত বিদ্যার চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন শিক্ষার, জীবনে যদি বাকি পাঁচজনের চেয়ে আলাদা হতে হয়, নজর কাড়তে হয়, এমনকী তারকা হতে হয়৷ এমনই কিছু টলি তারকার দরজায় কড়া নাড়া গেল, এই সরস্বতী পুজোর দিনে৷

শ্রাবন্তী: ছেলে এত ছোট, আমি তখনও পেরে উঠিনি
এই নায়িকাকে সরস্বতী বা লক্ষ্মী সাজানো নাকি সবচেয়ে সহজ, তাঁর মুখে আদল এমনই৷ দারুণ অভিনেত্রী৷ শ্রাবন্তী কিন্তু খুব কম বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে একপ্রকার বাধ্যই হন৷ বলছেন, ‘আমি মনে করি শেখার কোনও বয়স হয় না৷ আমি এখনও গুরুজনদের কাছ থেকে শিখি৷ তারপর আমি যে কাজটা করি, মানে যে কোনও সৃজনশীল কাজের দেবীই তো সরস্বতী৷ কিন্তু এটা ঠিক আমি বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারিনি বিভিন্ন কারণে৷ স্কুলে পড়তে-পড়তে নায়িকা হয়ে গিয়েছিলাম৷ পড়াশোনা করা হল না তখন ঠিকমতো৷ কিন্তু আমার মন চাইত, আরও কিছুটা পড়াশোনা করতে৷ আমি তারপরও চেষ্টা করেছিলাম৷ কিন্তু যখন সে চেষ্টা শুরু করলাম, তখন আমার ছেলে হয়ে গিয়েছে৷ ছেলে এত ছোট, আমি তখনও পেরে উঠিনি৷ কিন্তু এটা মনে করি, শিক্ষাটাই আসল৷’

মানালি: গ্র্যাজুয়েট না হয়েও, যা অর্জন করেছি, চারপাশের অনেক গ্র্যাজুয়েট পারেননি
এরপর কলিং বেল মানালি দে-র বাড়িতে৷ মানালি দে টেলিভিশনের এতটাই জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন এক সময়, গ্রামের দিকে গৃহবধূদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত, মানালিকে একবার দেখার জন্য৷ কিন্ত্ত ‘বউ কথা কও’-এর মৌরি হয়ে উঠতে গিয়ে মানালির যে ডিগ্রিতে টান পড়ল৷ মানালি বলছেন, ‘‘বউ কথা কও’ শুরু করি মাধ্যমিক দেওয়ার পর৷ তখন এতটাই কাজের চাপ, আমার আর উচ্চমাধ্যমিক দেওয়া হয়নি৷ আমার সেটা বলতেও কোনও অসুবিধে নেই৷ আমাকে অনেকেই বলেন, কিছু সংস্থায় টাকা দিলে সার্টিফিকেট পাওয়া যায়৷ কিন্তু আমি সেরকমভাবে একটা গ্র্যাজুয়েশনের সার্টিফিকেট নিয়ে কী করব? একটা সময় একটু খারাপ যে লাগত না, তা নয়৷ কিন্ত্ত এখন মনে হয়, আমি গ্র্যাজুয়েট না হয়েও, জীবনে যা অর্জন করেছি, তা তো আমার চারপাশের অনেক গ্র্যাজুয়েট-ও পারেননি৷’

ইন্দ্রাশিস: ইলেভেন থেকে পড়াশোনায় খুব একটা মন ছিল না
টেলিভিশন থেকে সিনেমার জনপ্রিয় মুখ ইন্দ্রাশিস রায়৷ ইন্দ্রাশিসও কলেজ জীবনে খুব যে একটা পড়াশোনা করতেন, তা নয়৷ বলছেন, ‘আমি অ্যাভারেজের চেয়ে অল্প ভালো ছাত্র ছিলাম৷ সেটা ক্লাস টেন অবধি৷ ইলেভেন থেকে পড়াশোনায় খুব একটা মন ছিল না, তাই ফল-ও ভালো হয়নি৷ কলেজে গিয়ে বুঝলাম ফোকাস তখন থেকেই শুধু অভিনয়ে৷ তাই আর ফিরে তাকাইনি৷ কোনও আফশোস নেই৷ আমি যে কাজটা করছি গত দশ বছর ধরে, সেটার প্রাপ্তি খুব বেশি, কিন্তু লক্ষ্য থেকে সরে গেলে, সে প্রাপ্তিও ছেড়ে চলে যায়৷ তাই অন্য কিছু নিয়ে ভাবার ইচ্ছে থাকলেও, সেটার অনুমতি বা সময় নেই৷ তবে নতুন প্রজন্মের কেউ, খুব আত্মবিশ্বাসী না হলে তার গ্র্যাজুয়েশন করা দরকার৷ তবে বাচ্চারা আত্মবিশ্বাসী হলে, বাবা-মা’রা সেটা করতে দিন, যেটা বাচ্চা করতে চায়৷’

প্রিয়াঙ্কা: কলেজ যাওয়া থেমে গেলেও, ‘পড়াশোনা’ কোনওদিন থামেনি
টালিগঞ্জে আরেক নায়িকা প্রিয়াঙ্কা সরকার৷ একজন মা-ও বটে৷ প্রিয়াঙ্কা ক্লাস সিক্স থেকে মেগাধারাবাহিকে নিয়মিত কাজ করা শুরু করেন৷ বলছেন, ‘আমি উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারিনি৷ সেটা হয়তো আমার দোষ৷ কারণ অনেকেই দেখি, দু’টো সুন্দরভাবে ব্যালান্স করেন৷ তবে এ কথাও ঠিক, ডিগ্রি অর্জনের যেমন দরকার আছে, প্রকৃত শিক্ষিত হয়ে ওঠা-ও দরকার৷ তাই কলেজ যাওয়া থেমে গেলেও, আমার ‘পড়াশোনা’ কোনওদিন থামেনি৷’ ছেলের ব্যাপারে তিনি কী ভাবেন? প্রিয়াঙ্কা বলছেন, ‘আমি যেমন কলেজে পড়িনি, তেমন রাহুল পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেছে৷ আমার ছেলে দু’টো দেখেই সিদ্ধান্ত নেবে৷ তবে এটা বলব, ওর বেসিক এডুকেশন যাতে ঠিকঠাক হয়, সে ব্যাপারে আমি সতর্ক৷ কোথাও গিয়ে ইংলিশ-এ কথা বলতে না পেরে, ও যাতে ইনসিকিওরড অনুভব না করে, সেইমতো ওকে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমি নিয়েছি৷’

রুদ্রনীল: আমি ঘষে-ঘষে গ্র্যাজুয়েশন
অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ, যিনি রাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, যোগ করছেন, ‘টালিগঞ্জ পাড়ায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সম্পূর্ণ করেছে দারুণভাবে, এমন সংখ্যা হয়তো হাতে গোনা৷ আমি যেমন ঘষে-ঘষে গ্র্যাজুয়েশন৷ মানে ফার্স্ট ইয়ার থেকেই থিয়েটারে মন৷ মনে পড়ছে একদিন এক প্রেমিকার কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ প্রেমিকা বেরোতে দেরি করল৷ তখন তার কলেজের দেওয়ালে সংস্কৃতে একটা লাইন লেখা ছিল, যেটা মন দিয়ে দেখছিলাম৷ এই সরস্বতী পুজোয় সেই লাইনের অর্থ বেশি করে বুঝতে পারি-যা মানুষকে কুসংস্কার থেকে মুক্ত করে, তাই শিক্ষা৷ আমার কাছে বিদ্যাও সেটা৷ সরস্বতী তারই দেবী৷’

পরের খবর

Entertainmentসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল