অ্যাপশহর

রানাঘাটের রানুর জীবনযুদ্ধ এ বার বড় পর্দায়

নদিয়ার বোগোপাড়ার বাসিন্দা রানুর জীবনযুদ্ধ এ বার উঠে আসবে বড় পর্দায়। সবকিছু ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বর মাস থেকেই শুরু হয়ে যাবে সিনেমার কাজ। পরিচালক নবাগত হৃষীকেশ মণ্ডল। তবে এই পরিকল্পনার পিছনে যাঁর মস্তিষ্ক, তিনি ক্যাকটাসের গায়ক সিদ্ধার্থ রায় ওরফে সিধু।

EiSamay.Com 30 Aug 2019, 12:11 pm
চিত্রদীপ চক্রবর্তী
EiSamay.Com time for biopic on Ranu Mondal, shooting will start from September
মুম্বইয়ের সমুদ্রসৈকতে রানু।


প্ল্যাটফর্ম থেকে উঠে এসে হিমেশ রেশমিয়ার ঝাঁ চকচকে স্টুডিয়োতে পৌঁছে যাওয়া রানু মণ্ডলকে নিয়ে ফের নতুন চমক।

নদিয়ার বোগোপাড়ার বাসিন্দা রানুর জীবনযুদ্ধ এ বার উঠে আসবে বড় পর্দায়। সবকিছু ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বর মাস থেকেই শুরু হয়ে যাবে সিনেমার কাজ। পরিচালক নবাগত হৃষীকেশ মণ্ডল। তবে এই পরিকল্পনার পিছনে যাঁর মস্তিষ্ক, তিনি ক্যাকটাসের গায়ক সিদ্ধার্থ রায় ওরফে সিধু। ছবির সঙ্গীত পরিচালকও তিনি। আর ছবিতে একাধিক গান গাইবেন রানু নিজেই। বর্তমান মুম্বইয়ে হিমেশ রেশমিয়ার সঙ্গে গানের রেকর্ডিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন রানু। সঙ্গে আছেন এই গায়িকাকে তুলে আনার নেপথ্য নায়ক অতীন্দ্র চক্রবর্তী। ফোনে অতীন্দ্র বলেন, ‘হ্যাঁ, সিধুদার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এখন ২ তারিখ পর্যন্ত সম্ভবত এখানে থাকতে হবে। ফিরে গিয়ে বিস্তারিত কথা বলব। এখানকার কয়েকজন পরিচালকও এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।’ অন্য দিকে, সিধুর বক্তব্য, ‘আমি ওঁর গান শুনেছি। বেশ ভালো গাইছেন। তার চেয়েও বড় কথা হিমেশ রেশমিয়া রানুদিকে একটা সুযোগ দিয়েছেন। ফলে এটা আশা করা যেতেই পারে আগামী ছ’মাস অন্তত এই ক্রেজটা থাকবে। এই সময়ের মধ্যে তিনি এই ধারাটা বজায় রাখলে অবশ্যই তা গানের জন্য ভালো খবর।’


দীর্ঘদিন আগে স্বামীর সঙ্গে কাজের সন্ধানে মুম্বই গিয়েছিলেন রানু। অভিনেতা ফিরোজ খানের বাড়িতে তিনি কাজও করতেন। সেখানে থাকার সূত্রে হিন্দি বলা এবং শব্দ উচ্চারণে দক্ষতা অর্জন করেন। তার পর নদিয়াতে ফিরে আসার কিছুদিন পর স্বামী চলে যান। বিয়েও হয়ে যায় মেয়েদের। নিজের মাসি-মেসো একা হয়ে যাওয়া রানুকে নিজেদের বাড়িটি দিয়ে দেন। কিন্তু থাকার জায়গা হলেও খাবেন কী? অতএব রানু খাবারের সন্ধানে রোজ হাজির হওয়া শুরু করেন রানাঘাট স্টেশনের পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। চলতি বছরের ২৭ তারিখ ওই প্ল্যাটফর্মে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে অতীন্দ্র নিজের মোবাইলে রেকর্ড করেন রানুর কণ্ঠে লতার গান। সোশ্যাল মিডিয়ায় তা পোস্ট করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিয়ো। আর ফিরে তাকাতে হয়নি এই ফুটপাথের গায়িকাকে।

বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করা হলে পরিচালক হৃষীকেশ বলেন, ‘ছবিতে রানুর চরিত্রে অভিনয় করার জন্য টলিউডের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এক অভিনেত্রীর সঙ্গে একদম প্রাথমিক পর্যায়ে কথা বলেছি। এই ছবিতে মূল চরিত্র বলতে তো দু’জন। রানু আর অতীন্দ্র। ওই রোলের জন্যও একজনকে বাছা হবে। আপাতত ছবির নাম ভাবা হয়েছে, ‘প্লাটফর্ম সিঙ্গার রানু মণ্ডল’। আগে এক মহিলা ফুটবলারের জীবনী নিয়ে ‘কুসুমিতার কথা’ নামে একটি সিনেমা তৈরি করেছি। ছবিটি শুরু হবে সাংবাদিকদের সামনে রানু সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন সেই দৃশ্য দিয়ে। আশা করছি অনুমতি পেতে সমস্যা হবে না।’

সিনেমার গল্পের মতোই এ ভাবে আচমকা উত্থানের পর রানু কি নিজের জায়গা ধরে রাখতে পারবেন? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খ্যাতির বিড়ম্বনা তো আছেই, আচমকা খ্যাতির মানসিক অভিঘাতও নেহাত কম নয়। তা সকলে সমান ভাবে সামলাতে পারে না। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রামের কথায়, ‘লাইমলাইটের আলো হঠাৎ কারও উপর পড়লে, ব্যাপারটা যখন উপলব্ধি করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, তখন তা মারাত্মক মানসিক চাপ তৈরি করে। আচমকাই তিনি বুঝতে পারেন, জীবনটা আর তাঁর ব্যক্তিগত নেই। অনেক কিছুই এসে পড়ছে প্রকাশ্যে, একেবারে জনতা বাজারে। সেই অনুভূতিটা এক-একজনের উপর এক-এক রকম প্রভাব ফেলে। কেউ দাম্ভিক হয়ে পড়েন, কেউ বা নেশার কবলে নিজেকে সমর্পণ করে বসেন। কেউ খুব সহজে ব্যাপারটা সামলে নিয়ে সরল-সাধারণ জীবনযাত্রা আঁকড়েই বেঁচে থাকেন। তাঁরাই দেখা যায়, বেশি সফল।’ আর এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ প্রদীপ সাহা মনে করেন, ‘অনেক নবীন প্রতিভার কাছে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য অধরাই থেকে যায়। অথচ খ্যাতির আলো সামলে নিতে পারলে হয়তো তাঁরা আরও সফল হতে পারতেন।’

পরের খবর

Entertainmentসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল