অ্যাপশহর

টুকলিতেই ব্লকবাস্টার, মুন্না ভাই থেকে শুরু করে চক দে, সবই টোকার ফল

টোকা মহান শিল্প যদি না পড়ো ধরা.. টুকে টুকেই বক্স অফিসে লক্ষ্মীর কামাল... ব্লকবাস্টার তকমার জেরে ঘরে উপছে পড়েছে অ্যাওয়ার্ড কিন্তু প্রশ্ন উঠছে মৌলিকত্ব নিয়ে... এই সুপার ডুপার হিট টুকলি ছবির নামগুলো শুনলে আপনিও চমকে উঠবেন...

Lipi 22 Jun 2021, 9:51 am
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: টোকা ধর্ম মহা ধর্ম, যদি না পড় ধরা। যদিও বিশ্বায়নের যুগে টুকলি জিনিস ধরে ফেলা খুবই সহজ। গুগল-কাকার কাছে শুধু একটা নাম টাইপ করে দিন। সমস্ত ঠিকুজি-কুষ্ঠি সব বের দেবে সে। এমনকি কোন সালে শব্দটি সৃষ্টি হয়েছিল সেটিও অনায়াসে বলে দেবে। তাই বক্তৃতা হোক বা সিনেমা টুকে দিলেই কেল্লাফতে একথা ভাবার কোনও কারণ নেই। তবে হ্যাঁ, টোকার ফল যদি সুস্বাদু হয় তাহলে স্রেফ 'অনুপ্রেরণা' বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। আর সিনেমার কথা যখন উঠলই তখন টুকলি সিনেমা নিয়ে সামান্য কাটা ছেঁড়া চলবেই।
EiSamay.Com cinema posters


দক্ষিণী ছবি টোকা হয় বলে টলিউডের পরিচালকদের বড্ড 'দুয়ো' শুনতে হয়। কিন্তু বলিউডের তাবড় তাবড় সেনাপতিরাও যে কম যান না। তাহলে তাদের বেলা কেন দোষ মাফ হবে? দোষ মাফ হতেই পারে যদি টোকার মধ্যেও নিজস্ব শৈলী থাকে। হুবহু না টুকে আইডিয়া নিয়ে তাঁকে নিজের মতো করে পেশ অনুপ্রেরণা বলে কাটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু ফ্লপ হলেই বিপদ। ওই যে বলে না, বিজয়ীরা বরাবর এখানে ভগবান আর পরাজিতরা সব পাপীর দল?

আজকাল তাও হলিউডি বা দক্ষিণী ছবির স্বত্ত্ব কিনে রিমেক করার কথা প্রযোজক-পরিচালকরা ঘোষণা করেন। কিন্তু কিছুদিন আগেও এসবের চল ছিল না। টোকা জিনিস অনায়াসে নিজের নামে চালাতেন সবাই। তালিকায় রয়েছে সুপারস্টার থেকে শুরু করে সাদামাটা তারকাও। আর ছবির তালিকা বাছতে গেলেও ঠগ বাছতে গাঁ থুড়ি বলিউড উজার হবে।

Munna Bhai MBBS

সঞ্জয় দত্ত অভিনীত, রাজকুমার হিরানির সুপারহিট ছবি মুন্না ভাই এমবিবিএস দেখে হেসে কুটোপাটি খাননি এমন ভারতীয় সিনেমাপ্রেমী হয়তো কমই আছে। ২০০৪ সালে সেরা জনপ্রিয় ছবি হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে এই ছবি। রাজকুমার হিরানির সেল্ফ ক্রিয়েশন বলে সবাই জানলেও এটি আসলে ১৯৯৮ সালের হলিউড ছবি প্যাচ অ্যাডামস্-এর দ্বারা অনুপ্রাণিত। হলিউড ছবিটি আবার তৈরি হয়েছিল সত্য ঘটনা অবলম্বনে।

Qayamat

মুন্না ভাইয়ের মতোই আরেকটি অনুপ্রাণিত ছবি হল অজয় দেবগণ অভিনীত কায়ামত। একটু ভুল হল। কায়ামত অনুপ্রাণিত নয় এটি টোকা ছবি। কারণ এটি ছিল সুপার ফ্লপ। নিকোলাস কেজ-এর ছবি দ্য রক-এর খুব নিম্নমানেরবলিউডি কপি ছিল এটি।

Judwaa

জ্যাকি চ্যানের টুইন ড্রাগনের বলিউডি মশলা দেওয়া কপি সলমন খানে জুড়ওয়া। ছবিতে দুই যমজ ভাইয়ের মধ্যে একজন বোকা এবং একজন চালাক। এমনকি জ্যাকি চ্যানের ছবির গল্পের বহু দৃশ্যের সঙ্গে ডেভিড ধাওয়ান পরিচালিত এই ছবির অসম্ভব মিল। শুধু গল্পের মাঝে মাঝে হঠাৎ করে নাচগানের দৃশ্যগুলিই পরিচালকের 'অভিনব' প্রয়াস ছিল। জুড়ওয়ারও আবারা রিমেক হয়। তবে নতুন বোতলে পুরোনো মদের স্বাদের তো আর বিশেষ পরিবর্তন হয় না। তাই রিমেকে বরুণ ধাওয়ানও একই রকম বিরক্তিকর ছিলেন। যদিও বক্স অফিসে ছবিগুলির কালেকশন ছিল দুর্দান্ত।

Dostana

অভিষেক বচ্চন, জন আব্রাহাম এবং প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনীত দোস্তানা ছবির নামটি সাতের দশকের ছবির কপি। আর গল্পটি কপি করা হয় হলিউডি ছবি নাও আই প্রোনাউন্স ইউ চাক অ্যান্ড ল্যারি থেকে। ছবির বক্স অফিস সাফল্য ছিল অসাধারণ। যদিও হলিউডি মুভির তুলনায় দোস্তানা একটু কম ভালো।

Jo Jeeta Wohi Sikandar

নামটা শুনে অবাক লাগলেও এই ছবিটিও ১৯৭৯ সালের হলিউডি ছবি ব্রেকিং অ্যাওয়ের বলিউডি ভার্শন। দেশীয় দর্শক আমির খান অভিনীত ছবিটির সারল্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন বটে। কিন্তু পশ্চিমী দর্শক আসল ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন সেই সাতের দশকের শেষ দিকেই।

Zindaa

সঞ্জয় দত্ত এবং জন আব্রাহাম অভিনীত জিন্দা ছবিটি মুক্তি পায় ২০১১ সালে। যাঁরা বিশ্বমানের ছবি দেখেন তাঁরা ভালো মতোই জানেন যে জিন্দা ছবিটি প্রকৃত পক্ষে একটু কোরিয়ান ছবি কপি। পার্ক চ্যান উকের অসাধারণ অ্যাকশন থ্রিলার অল্ড বয়দএর বলিউডি ভার্শন ছিল জিন্দা। যদিও পরিচালনা, গল্প, চিত্রনাট্যের ওল্ড বয়ের ধারে কাছেও যেতে পারেনি জিন্দা। বক্স অফিসেও মুখ থুবড়ে পড়েছিল ছবি।


A Wednesday

অস্কারজয়ী অভিনেতা বেন কিংস্লে অভিনীত আ কমন ম্যানের রিমেক আ ওয়েডনেস ডে। বলিউডি ছবিটিতে বেনের চরিত্রে দেখা গিয়েছিল নাসিরুদ্দিন শাহকে। সাধারণ দর্শক এবং চিত্রসমালোচক উভয়েরই প্রশংসা পেয়েছিল আ ওয়েডনেস ডে। ছবিতে নাসিরুদ্দিন শাহের অভিনয়ের ছিল দুর্দান্ত। তাই রিমেক জানার পরও বিশেষ সমালোচনা শুনতে হয়নি ছবির পরিচালক-প্রযোজকদের।

Dhamaal
ইন্দর কুমার পরিচালিত এই মাল্টিস্টারার কমেডি ছবি দেখতে বসে হাসতে হাসতে আজও দর্শকের পেটে খিল ধরে যায়। এটিও ১৯৬৩ সালের ছবি ইটস্ আ ম্যাড, ম্যাড, ম্যাড, ম্যাড ওয়ার্ল্ড-এর দ্বারা অনুপ্রেরিত ছবি। যদিও ধামাল আমেরিকান কমেডি ছবির অফিশিয়াল রিমেক। দুটিই ছবিই দর্শককে হাসতে হাসতে পাগল করে দেবে।

Bazigaar
চমকে ওঠার কিছু নেই। ১৯৯৩ সালে শাহরুখ কাজল জুটির প্রথম হিট ছবি বাজিগরও A Kiss Before dying (১৯৯১)-এর রিমেক। বরং বলা যায় হুবহু নকল। তবে শাহরুখ-কাজলের জাদু এবং নয়ের দশকের বাণিজ্যিক ছবির ভক্তদের আন্তর্জাতিক ছবি সম্পর্কে তুলনামূলক কম জ্ঞানের কারণে ছবি নিয়ে কোনোদিন কোনও বিতর্ক বাধেনি।

Dushman
কাজল, আশুতোষ রানা, সঞ্জয় দত্ত অভিনীত সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার দুশমন যে ছবিটি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছে সেটি হল আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার আই ফর দ্য আই (১৯৯৬)।

Agneepath
১৯৯০ সালে অগ্নিপথ ছবিতে বিজয় দিননাথ চৌহানের চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। যদিও অনেকেই সেই পুরস্কারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সে যাই হোক বিগ বি-র জাতীয় পুরস্কার লাভের চেয়েও যেটি অনেককেই অবাক করবে তা হল এটি হলিউড ছবি স্কারফেসের নকল। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৮৩ সালে। অমিতাভের ছবির আবার রিমেক হয়েছিল ২০১২ সালে। সেই ছবিতে বিজয় দিননাথ চৌহানের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন হৃত্বিক রোশন।


Mohabbatein
অমিতাভ বচ্চন এবং শাহরুখ খান অভিনীত মোহব্বতেঁ-র বক্স অফিস কালেকশন কিন্তু ছিল ঈর্ষণীয়। ২০০০ সালের এই মাল্টি স্টারার মেলোড্রামা কিশোর-কিশোরী এবং সদ্য যৌবনে পা দেওয়া তরুণ-তরুণীদের বেশ পছন্দ হয়। যদিও এটিও ছিল একটি হলিউড ছবির কপি। ১৯৮৯ ছবি ডিড পোয়েটস্ সোস্যাইটি-র খবর খুব কম লোকেই রাখে।

Koi Mil Gaya
বিশ্ব বিখ্যাত স্কাই-ফাই পরিচালক স্পিল-বার্গের ইটি-র বলিউডি ভার্শন হৃত্বিক রোশন অভিনীত কোই মিল গায়া। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ছবির পরিচালক রাকেশ রোশন এটিকে তাঁর নিজের ক্রিয়েশন বলে চালালেও এটি আদতে ইটি-র হিন্দি রিমেক। ইটি আবার ছিল সত্যজিৎ রায়ের বঙ্কুবাবুর বন্ধু গল্পের দ্বারা অনুপ্রাণিত। জানিয়েছিলেন পরিচালক স্পিলবার্গ স্বয়ং।

Aitrazz
হলিউডের ডিসক্লোজার (১৯৯৪) ছবি মুক্তির ঠিক দশ বছর পর মুক্তি পায় বলিউডি ছবি অ্যায়েতরাজ (২০০০)। অক্ষয়কুমার, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এবং করিনা কাপুর অভিনীত এই ছবি মুক্তির পর বক্স অফিসে ভালো সাফল্য না পেলেও পরবর্তী সময়ে দর্শকের প্রশংসা পেয়েছে।

পার্টনার
হলিউড ছবি হিচ দর্শককে কাতুকুতু দিয়ে হাসানোর চেষ্টা করেছিল। তারই বলিউড ভার্সন পার্টনারের অবস্থাও তথৈবচ। সলমন খান, গোবিন্দা, ক্যাটরিনা কাইফ, লারা দত্ত অভিনীত পার্টনারের গল্পে অবশ্য খানিকটা পরিবর্তন হয়। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি।

Chak de india

মেয়েদের হকি টিমকে ওয়ার্ল্ড কাপ জেতানোর পণ নিয়েছিলেন শাহরুখ খান। আর হলিউডি ছবিতে কার্ট রাসেলের লক্ষ্য ছিল অলিম্পিক জেতানো। যদিও চক দে ইন্ডিয়া প্রাক্তন হকি খেলোয়াড় মীর রঞ্জন নেগির জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত। তবুও ছবির চিত্রনাট্য সংলাপে হলিউড ছবি মিরাকল-এর স্পষ্ট কপি। হকি টিমের খেলোয়াড়দের যেভাবে শাহরুখ উৎসাহ মূলক ভাষণ দেন তা ছিল মিরাকলের কার্চ রাসেলের বক্তৃতার হিন্দি অনুবাদ।

কম বাজেটের বহু বলিউডি ছবি হলিউড ছবির হুবহু নকল। ইমরান হাশমি অভিনীত প্রথম দিককার ছবি কিংবা বিক্রম ভাট বা মহেশ ভাটের বহু ছবিই হলিউডের পাই টু পাই কপি। সেরকমভাবে দেখতে গেলে ঠগ বাছতে গাঁ উজার হবে। তাই নকল হোক বা আসল ভালো সিনেমা দেখুন, দেখা প্র্যাকটিস করুন।

পরের খবর

Entertainmentসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল