'উরি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' হোক বা হোক সে 'হায়দরাবাদ এনকাউন্টার'-- গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্যকে কথা বলতে শোনা যায় প্রায় সব ক্ষেত্রেই। কিন্তু ইদানিং তিনি মুখে কুলুপ এঁটেছেন! সম্প্রতি MX Player-এর অরিজিনাল সিরিজ Flames Season 2-এর জন্য ললিত পণ্ডিতের (যতীন-ললিত) সুরে গান গাইলেন বহুদিন পর। বেশ হিট সেই গান। কলকাতায় এসে খোলামেলা আড্ডা দিলেন এই সময় ডিজিটাল-এর সঙ্গে।
এতদিন পরে ললিত পণ্ডিতের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
ললিতের সঙ্গে চার বছর আগেও একটা গান গেয়েছিলাম। 'বেশরম' ছবিতে রণবীর কাপুরের জন্য। আসলে কাজ আমরা রোজই করতে থাকি। কিন্তু আমার জন্য ফিল্মে গান গাওয়া একমাত্র কাজ নয়! আগেকার দিনে গান মানেই ছিল ফিল্মের মিউজিক। আর ফিল্মের মিউজিক মানেই মুম্বইতে বসে বসে গান গাওয়া। আমি একটা ভবঘুরে মানুষ। আজ এই দেশ, কাল সেই দেশ কনসার্ট করে বেড়াই। লোকে কনসার্টে অন্যের গান গায়। আর আমি গাই নিজের গান। এখানেই আকাশ-পাতাল ফারাক। তাহলে কী বলছেন! ফিল্মে গান গাওয়া আপনার কাছে এখন গুরুত্বহীন?
আমার মনে হয়, ফিল্মে যতটা কাজ করার দরকার, তার চেয়ে কিছুটা বেশিই আমি কাজ করে ফেলেছি। নোংরা, অসভ্য গান হিট হতে এক মিনিটও সময় লাগে না। কিন্তু আমি ভাগ্যবাণ যে, আমার ঝুলিতে সব হিট গান রয়েছে। আর সবই উচ্চমানের, যেটা একসময়ে খুবই জরুরি ছিল।
'ওলে ওলে' গানটি তো আপনারই গলায়! বিশাল হিট! উচ্চমানের?
একদম! 'ওলে ওলে' গানটিকে কেবল পার্টি সং বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা যাবে না। ওটা পেপ্পি নাম্বার। কিন্তু এক্কেবারেই চালু গান নয়। ওর একটা আলাদা মান এবং গুরুত্ব আছে। আজকের 'অশ্লীল' গানগুলোর মতো নয়।
সেই 'ওলে ওলে'-ই তো সইফ আলি খানের নতুন ছবি 'জাওয়ানি জানেমন'-এ রিমিক্স করা হয়েছে। আপনার গলাই মেশানো হয়েছে। আপনাকে কেন ডাকা হল না?
আসলে রিমিক্স, র্যাপ এইসবের জন্য কেউ আমাকে ডাকতে সাহসই পায় না! জানে তো খারাপ করে দেব! রবিশংকর কে কেউ যদি বলেন খঞ্জনি বাজাতে বা ওস্তাদ জাকির হুসেন কে কেউ যদি ঝুমঝুমি বাজাতে বলেন, তাহলে কেমন হবে!
আর এখন ইন্ডাস্ট্রিতে খুব কম সুরকারই আছেন যাঁরা অভিজিৎ দা-কে দিয়ে গান গাওয়ানোর যোগ্য। আমাকে বলার আগেই ভয়ের চোটে কাঁপে। আসলে ওঁদের পেটের মধ্যে গানই নেই। আমাকে দু'লাইন গেয়েই শোনাতে পারবে না। হারমোনিয়াম জানে না, কিসসু জানে না। শুধু এদিক থেকে লোড করে ওদিক থেকে পেস্ট করে দিল। ব্যস! খেল খতম!
এই জন্যই কী বলিউড অভিজিৎকে আজকাল আর ডাকে না? ভয়ের চোটে বা তাঁকে দিয়ে গাওয়ানোর মতো উচ্চমানের গানই নেই!
অভিজিৎকে বরাবরই কিছু সীমিত গানের জন্য ডাকা হত। আসলে বলিউডে এখন আর মিউজিক বলে কিছুই নেই। সবই মায়া! একটা গান আসছে, দুই দিনে মিলিয়ন, ব্যস তিন দিনের দিন হাওয়া। সবাই গান লিখছে আর সুর দিচ্ছে ইদানিং। কিন্তু তাঁরা কে বা কারা, কেউ জানে না! আমি লাকি যে, আমাকে ডাকা হচ্ছে না। আমি ওই লটের লোক নই। আমাকে কেন ডাকবে! আমাকে রাস্তায় ডেকে রোল খাওয়াতে পারবে না। ফাইভ স্টার হোটেলে ডিনার দিতে হবে।
১১ বছর আগে আপনি 'ওম শান্তি ওম' ছবির জন্য বিশাল-শেখরের সঙ্গে গান গেয়েছিলেন! সেই বিশাল-শেখর তো এখনও সমসাময়িক এবং বলিউড দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন! হিটও হচ্ছে তাঁদের গান।
কিচ্ছু না। কটা সিনেমা করছে ওঁরা! আর তার মধ্যে কটা হিটই বা হচ্ছে! আমরা আনন্দ-মিলিন্দ, যতীন-ললিতের সঙ্গে বছরে ৩০টা করে গান গাইতাম। কে বিশাল-শেখর? ওই ১১ বছর আগেই ওঁরা শেষ হয়ে গিয়েছিল। এঁদের সুরকার বলে না। শংকর-এহসান-লয় তিনজন সুরকার। আর বছরে একটা সিনেমা। তা-ও হয়তো নয়। আর এখন একটা সিনেমার পাঁচটা করে সুরকার। রহমান তো ১৫ বছরে মোট ছ'টা সিনেমা করেছে! প্রীতম দু'বার 'বদতমিজ দিল' 'বদতমিজ দিল' করল হয়ে গেল! মার্কেটেই নেই।
আসলে এঁরা সবাই বিয়ে বাড়িতে গান গেয়ে বেড়ায়। আমরা সবাই একসঙ্গে ফ্লাইটে ট্রাভেল করি। নাম বলব না কারও। কিন্তু যেই জিজ্ঞেস করি কোথায় অনুষ্ঠান? বলে হয় তাজে নয় গ্র্যান্ডে না হলে আর অন্য কোনও পাঁচতারা হোটেলে। আর আমাকে জিজ্ঞেস করলেই, এই স্টেডিয়াম নয়তো সেই কনসার্ট। আর এঁরা সব কোথা থেকে এসে রিয়্যালিটি শো'তে জাজ হয়ে বসে পড়ছে। ওঁদের স্টেজ শো কোথায়, সে তো আমাদের আছে।
রিয়্যালিটি শো'তে বিচারক হলে অসুবিধাটা কোথায়?
কেস করে দেওয়া উচিত! গতকালই এই হোটেলে একটা মেয়ের গান শুনছিলাম, কী সুন্দর গাইছিল! আর তার সঙ্গে-সঙ্গেই হোটেলে নানান মানুষের চেঁচামিচি, প্লেটের আওয়াজ, হইহল্লা! কার গলা জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারলাম, রিয়্যালিটি শো থেকে উঠে এসেছে মেয়েটি। এখন ভাবো, এঁটো-কাঁটা, কেউ হাড় চিবোচ্ছে, কেউ মদ খাচ্ছে আর তার সঙ্গে ওঁদের গান। এই তো করছে মিউজিক ডিরেক্টরগুলো। ওঁদের রিয়্যালিটি শো থেকে নিয়ে এসে এক্সপ্লয়েড করছে জঘন্য ভাবে।
আপনাকে দুর্গা পুজো কার্নিভ্যালে তৃণমূলের সুজিত বসুর সঙ্গে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। আবার লোকসভা ভোটের আগে গুঞ্জন, আপনি উলুবেড়িয়া থেকে বিজেপি প্রার্থী হচ্ছেন! গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্যের এখন পলিটিক্যাল স্টেটাস ঠিক কী?
আমেরিকাতেও আলোচনা হচ্ছে যে, ট্রাম্প এবার অভিজিৎ ভট্টাচার্যকে ভোটে দাঁড় করাবেন! আসলে এগুলো তাঁরাই করেন বা রটিয়ে থাকেন, যাঁদের কোনও কাজ নেই। আমি তো অভিজিৎ। লোকে গায়ক অভিজিৎকেই চেনেন আর তাঁকেই পেতে চান!
তাহলে আপনাকে ভবিষ্যতে কখনও পলিটিক্সে দেখা যাবে না?
আমি অভিজিৎ! অন্য ক্যাটেগরিতে পড়ি। জীবনে না আর কিছু পাওয়ার আছে না আছে কিছু দেওয়ার! পলিটিক্সে কোনও চান্সই নেই!
CAA নিয়ে দেশে বিস্তর টালবাহানা। বলিউডের একঝাঁক শিল্পী বলছেন 'কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে'! আর বাংলার বিশিষ্টরা বলছেন 'কাগজ দেখাব না'! একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে অভিজিৎ কী বলছেন?
পুরো ব্যাপারটা যখন ফাইনালি আসবে, তখন দেখবে মতবাদ অনেকটা বদলে গিয়েছে। আজ যাঁরা পক্ষে বা বিপক্ষে তাঁরা অনেকেই না জেনে কথা বলছেন। স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর হাতে পয়সা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলছে পড়ুন। পড়ছে। কেউ কিছু জানেই না।
আমি নিজেই জানি না ঠিক করে। বলব কী! ঠিক করে উচ্চারণও করতে পারি না। আমার মুখ দিয়ে NRC তো কতবার ভুল করে NRI বেরিয়ে গিয়েছে। না জেনে মন্তব্য করাটা বোকামি। যাঁরা পক্ষে আর বিপক্ষে বলছেন, সবাই বোকা। যদি প্রধানমন্ত্রীকেও জিজ্ঞেস করো, তিনিও হয়তো ঠিক করে বলতে পারবেন না ব্যাপারটা আসলে ঠিক কী! কমেডি শো চলছে। বোকামি চলছে।
এই মুহূর্তে বাংলা বা হিন্দিতে আপনার পছন্দের কোনও গায়ক বা গায়িকা কেউ আছেন?
না কেউ নেই। আমি তো বোকার মতো বাড়িতে বসে থাকি। কে কী করছেন, কী গাইছেন, কী কম্পোজ করছেন নজর রাখি না। নজর রাখি না কারণ হেমন্ত, মান্না বা আমাদের প্রজন্মের মতো গায়ক-গায়িকা আর নেই এই দেশে। শুধু রিয়্যালিটি শো'তে বসে গেলেই হয় না। গান গেয়ে রোজগার কোথায় করে ওঁরা! মাইনে পায়। আমাকে রিয়্যালিটি শো'তে বিচারক করতে গেলে চ্যানেলকে চার বার ভাবতে হয়, এত বাজেট কোথা থেকে আসবে?
রিয়্যালিটি শো'য়ের প্রতি আপনার এত বিতৃষ্ণা কেন? এত গায়ক-গায়িকা তো উঠে আসছেন! শো করছেন।
রিয়্যালিটি শো'তে যাওয়া মানে জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল। কারণ গানটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারপর বিয়েবাড়িতে গান গাইতে শুরু করছে। তারপর ট্যাক্সিতে বসে আজকে এঁর সঙ্গে কালকে ওঁর সঙ্গে। হচ্ছেটা কী! গান তো হচ্ছে না। বাবা স্যুটকেস বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মা পিছু পিছু দৌড়চ্ছেন। ওঁকে শুনতে কেউ আসছেন না। শুধু এক বছরের জন্য মাথায় গুঁজে দেওয়া হচ্ছে।
একবছর পর কী হবে? মা-বাবা কাজ ছেড়ে এতদূর এলেন, তাঁদের কী হবে? সব ভুলভাল স্বপ্ন দেখে যাচ্ছে দিনরাত। আমার ছেলে এই করবে। সেই করবে। তারপর তো মুম্বই চলে যাচ্ছে। মুম্বই গিয়ে তো ভিক্ষা অবধি চাইতে পারছে না তাঁরা। আমার দুঃখ হয়! রিয়্যালিটি শো আদতে উঠতি গায়ক-গায়িকাকে পুরোপুরি ভুলপথে চালিত করে। আর ওই মিউজিক ডিরেক্টরগুলোর কাজ নেই। ওঁদের মাথা খাচ্ছে।
সংগীত জগতে মহুয়া লাহিড়ীর প্রয়াণ কতটা প্রভাব ফেলেছে?
ওঁর সঙ্গে আমি কখনও কাজ করিনি ঠিকই। তবে একজন উদ্যোগপতি হিসেবে ওনার অবদান বিরাট। একটা টালমাটাল সময়ে হাল ধরেছিলেন তিনি। সব যখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এক এক করে, তখনই নিজের কোম্পানি খুলেছিলেন। হঠাৎ করেই ওঁর চলে যাওয়া বিস্তর প্রভাব ফেলবে সংগীত জগতে।
এতদিন পরে ললিত পণ্ডিতের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
ললিতের সঙ্গে চার বছর আগেও একটা গান গেয়েছিলাম। 'বেশরম' ছবিতে রণবীর কাপুরের জন্য। আসলে কাজ আমরা রোজই করতে থাকি। কিন্তু আমার জন্য ফিল্মে গান গাওয়া একমাত্র কাজ নয়! আগেকার দিনে গান মানেই ছিল ফিল্মের মিউজিক। আর ফিল্মের মিউজিক মানেই মুম্বইতে বসে বসে গান গাওয়া। আমি একটা ভবঘুরে মানুষ। আজ এই দেশ, কাল সেই দেশ কনসার্ট করে বেড়াই। লোকে কনসার্টে অন্যের গান গায়। আর আমি গাই নিজের গান। এখানেই আকাশ-পাতাল ফারাক।
আমার মনে হয়, ফিল্মে যতটা কাজ করার দরকার, তার চেয়ে কিছুটা বেশিই আমি কাজ করে ফেলেছি। নোংরা, অসভ্য গান হিট হতে এক মিনিটও সময় লাগে না। কিন্তু আমি ভাগ্যবাণ যে, আমার ঝুলিতে সব হিট গান রয়েছে। আর সবই উচ্চমানের, যেটা একসময়ে খুবই জরুরি ছিল।
'ওলে ওলে' গানটি তো আপনারই গলায়! বিশাল হিট! উচ্চমানের?
একদম! 'ওলে ওলে' গানটিকে কেবল পার্টি সং বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা যাবে না। ওটা পেপ্পি নাম্বার। কিন্তু এক্কেবারেই চালু গান নয়। ওর একটা আলাদা মান এবং গুরুত্ব আছে। আজকের 'অশ্লীল' গানগুলোর মতো নয়।
সেই 'ওলে ওলে'-ই তো সইফ আলি খানের নতুন ছবি 'জাওয়ানি জানেমন'-এ রিমিক্স করা হয়েছে। আপনার গলাই মেশানো হয়েছে। আপনাকে কেন ডাকা হল না?
আসলে রিমিক্স, র্যাপ এইসবের জন্য কেউ আমাকে ডাকতে সাহসই পায় না! জানে তো খারাপ করে দেব! রবিশংকর কে কেউ যদি বলেন খঞ্জনি বাজাতে বা ওস্তাদ জাকির হুসেন কে কেউ যদি ঝুমঝুমি বাজাতে বলেন, তাহলে কেমন হবে!
আর এখন ইন্ডাস্ট্রিতে খুব কম সুরকারই আছেন যাঁরা অভিজিৎ দা-কে দিয়ে গান গাওয়ানোর যোগ্য। আমাকে বলার আগেই ভয়ের চোটে কাঁপে। আসলে ওঁদের পেটের মধ্যে গানই নেই। আমাকে দু'লাইন গেয়েই শোনাতে পারবে না। হারমোনিয়াম জানে না, কিসসু জানে না। শুধু এদিক থেকে লোড করে ওদিক থেকে পেস্ট করে দিল। ব্যস! খেল খতম!
এই জন্যই কী বলিউড অভিজিৎকে আজকাল আর ডাকে না? ভয়ের চোটে বা তাঁকে দিয়ে গাওয়ানোর মতো উচ্চমানের গানই নেই!
অভিজিৎকে বরাবরই কিছু সীমিত গানের জন্য ডাকা হত। আসলে বলিউডে এখন আর মিউজিক বলে কিছুই নেই। সবই মায়া! একটা গান আসছে, দুই দিনে মিলিয়ন, ব্যস তিন দিনের দিন হাওয়া। সবাই গান লিখছে আর সুর দিচ্ছে ইদানিং। কিন্তু তাঁরা কে বা কারা, কেউ জানে না! আমি লাকি যে, আমাকে ডাকা হচ্ছে না। আমি ওই লটের লোক নই। আমাকে কেন ডাকবে! আমাকে রাস্তায় ডেকে রোল খাওয়াতে পারবে না। ফাইভ স্টার হোটেলে ডিনার দিতে হবে।
১১ বছর আগে আপনি 'ওম শান্তি ওম' ছবির জন্য বিশাল-শেখরের সঙ্গে গান গেয়েছিলেন! সেই বিশাল-শেখর তো এখনও সমসাময়িক এবং বলিউড দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন! হিটও হচ্ছে তাঁদের গান।
কিচ্ছু না। কটা সিনেমা করছে ওঁরা! আর তার মধ্যে কটা হিটই বা হচ্ছে! আমরা আনন্দ-মিলিন্দ, যতীন-ললিতের সঙ্গে বছরে ৩০টা করে গান গাইতাম। কে বিশাল-শেখর? ওই ১১ বছর আগেই ওঁরা শেষ হয়ে গিয়েছিল। এঁদের সুরকার বলে না। শংকর-এহসান-লয় তিনজন সুরকার। আর বছরে একটা সিনেমা। তা-ও হয়তো নয়। আর এখন একটা সিনেমার পাঁচটা করে সুরকার। রহমান তো ১৫ বছরে মোট ছ'টা সিনেমা করেছে! প্রীতম দু'বার 'বদতমিজ দিল' 'বদতমিজ দিল' করল হয়ে গেল! মার্কেটেই নেই।
আসলে এঁরা সবাই বিয়ে বাড়িতে গান গেয়ে বেড়ায়। আমরা সবাই একসঙ্গে ফ্লাইটে ট্রাভেল করি। নাম বলব না কারও। কিন্তু যেই জিজ্ঞেস করি কোথায় অনুষ্ঠান? বলে হয় তাজে নয় গ্র্যান্ডে না হলে আর অন্য কোনও পাঁচতারা হোটেলে। আর আমাকে জিজ্ঞেস করলেই, এই স্টেডিয়াম নয়তো সেই কনসার্ট। আর এঁরা সব কোথা থেকে এসে রিয়্যালিটি শো'তে জাজ হয়ে বসে পড়ছে। ওঁদের স্টেজ শো কোথায়, সে তো আমাদের আছে।
রিয়্যালিটি শো'তে বিচারক হলে অসুবিধাটা কোথায়?
কেস করে দেওয়া উচিত! গতকালই এই হোটেলে একটা মেয়ের গান শুনছিলাম, কী সুন্দর গাইছিল! আর তার সঙ্গে-সঙ্গেই হোটেলে নানান মানুষের চেঁচামিচি, প্লেটের আওয়াজ, হইহল্লা! কার গলা জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারলাম, রিয়্যালিটি শো থেকে উঠে এসেছে মেয়েটি। এখন ভাবো, এঁটো-কাঁটা, কেউ হাড় চিবোচ্ছে, কেউ মদ খাচ্ছে আর তার সঙ্গে ওঁদের গান। এই তো করছে মিউজিক ডিরেক্টরগুলো। ওঁদের রিয়্যালিটি শো থেকে নিয়ে এসে এক্সপ্লয়েড করছে জঘন্য ভাবে।
আপনাকে দুর্গা পুজো কার্নিভ্যালে তৃণমূলের সুজিত বসুর সঙ্গে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। আবার লোকসভা ভোটের আগে গুঞ্জন, আপনি উলুবেড়িয়া থেকে বিজেপি প্রার্থী হচ্ছেন! গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্যের এখন পলিটিক্যাল স্টেটাস ঠিক কী?
আমেরিকাতেও আলোচনা হচ্ছে যে, ট্রাম্প এবার অভিজিৎ ভট্টাচার্যকে ভোটে দাঁড় করাবেন! আসলে এগুলো তাঁরাই করেন বা রটিয়ে থাকেন, যাঁদের কোনও কাজ নেই। আমি তো অভিজিৎ। লোকে গায়ক অভিজিৎকেই চেনেন আর তাঁকেই পেতে চান!
তাহলে আপনাকে ভবিষ্যতে কখনও পলিটিক্সে দেখা যাবে না?
আমি অভিজিৎ! অন্য ক্যাটেগরিতে পড়ি। জীবনে না আর কিছু পাওয়ার আছে না আছে কিছু দেওয়ার! পলিটিক্সে কোনও চান্সই নেই!
CAA নিয়ে দেশে বিস্তর টালবাহানা। বলিউডের একঝাঁক শিল্পী বলছেন 'কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে'! আর বাংলার বিশিষ্টরা বলছেন 'কাগজ দেখাব না'! একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে অভিজিৎ কী বলছেন?
পুরো ব্যাপারটা যখন ফাইনালি আসবে, তখন দেখবে মতবাদ অনেকটা বদলে গিয়েছে। আজ যাঁরা পক্ষে বা বিপক্ষে তাঁরা অনেকেই না জেনে কথা বলছেন। স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর হাতে পয়সা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলছে পড়ুন। পড়ছে। কেউ কিছু জানেই না।
আমি নিজেই জানি না ঠিক করে। বলব কী! ঠিক করে উচ্চারণও করতে পারি না। আমার মুখ দিয়ে NRC তো কতবার ভুল করে NRI বেরিয়ে গিয়েছে। না জেনে মন্তব্য করাটা বোকামি। যাঁরা পক্ষে আর বিপক্ষে বলছেন, সবাই বোকা। যদি প্রধানমন্ত্রীকেও জিজ্ঞেস করো, তিনিও হয়তো ঠিক করে বলতে পারবেন না ব্যাপারটা আসলে ঠিক কী! কমেডি শো চলছে। বোকামি চলছে।
এই মুহূর্তে বাংলা বা হিন্দিতে আপনার পছন্দের কোনও গায়ক বা গায়িকা কেউ আছেন?
না কেউ নেই। আমি তো বোকার মতো বাড়িতে বসে থাকি। কে কী করছেন, কী গাইছেন, কী কম্পোজ করছেন নজর রাখি না। নজর রাখি না কারণ হেমন্ত, মান্না বা আমাদের প্রজন্মের মতো গায়ক-গায়িকা আর নেই এই দেশে। শুধু রিয়্যালিটি শো'তে বসে গেলেই হয় না। গান গেয়ে রোজগার কোথায় করে ওঁরা! মাইনে পায়। আমাকে রিয়্যালিটি শো'তে বিচারক করতে গেলে চ্যানেলকে চার বার ভাবতে হয়, এত বাজেট কোথা থেকে আসবে?
রিয়্যালিটি শো'য়ের প্রতি আপনার এত বিতৃষ্ণা কেন? এত গায়ক-গায়িকা তো উঠে আসছেন! শো করছেন।
রিয়্যালিটি শো'তে যাওয়া মানে জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল। কারণ গানটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারপর বিয়েবাড়িতে গান গাইতে শুরু করছে। তারপর ট্যাক্সিতে বসে আজকে এঁর সঙ্গে কালকে ওঁর সঙ্গে। হচ্ছেটা কী! গান তো হচ্ছে না। বাবা স্যুটকেস বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মা পিছু পিছু দৌড়চ্ছেন। ওঁকে শুনতে কেউ আসছেন না। শুধু এক বছরের জন্য মাথায় গুঁজে দেওয়া হচ্ছে।
একবছর পর কী হবে? মা-বাবা কাজ ছেড়ে এতদূর এলেন, তাঁদের কী হবে? সব ভুলভাল স্বপ্ন দেখে যাচ্ছে দিনরাত। আমার ছেলে এই করবে। সেই করবে। তারপর তো মুম্বই চলে যাচ্ছে। মুম্বই গিয়ে তো ভিক্ষা অবধি চাইতে পারছে না তাঁরা। আমার দুঃখ হয়! রিয়্যালিটি শো আদতে উঠতি গায়ক-গায়িকাকে পুরোপুরি ভুলপথে চালিত করে। আর ওই মিউজিক ডিরেক্টরগুলোর কাজ নেই। ওঁদের মাথা খাচ্ছে।
সংগীত জগতে মহুয়া লাহিড়ীর প্রয়াণ কতটা প্রভাব ফেলেছে?
ওঁর সঙ্গে আমি কখনও কাজ করিনি ঠিকই। তবে একজন উদ্যোগপতি হিসেবে ওনার অবদান বিরাট। একটা টালমাটাল সময়ে হাল ধরেছিলেন তিনি। সব যখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এক এক করে, তখনই নিজের কোম্পানি খুলেছিলেন। হঠাৎ করেই ওঁর চলে যাওয়া বিস্তর প্রভাব ফেলবে সংগীত জগতে।