অ্যাপশহর

সৌমিত্রকে ‘পুলু’ ডাকেন, উত্তম ছিলেন ‘ভালো বন্ধু’

কলকাতায় তনুজার দ্বিতীয় দিন। বহুদিন পর আবার ছবিতে। তার ওপর বাংলায়। পরমব্রত চট্টোপাধ্যয়ের শ্যুটিংয়ে।

EiSamay.Com 21 Oct 2017, 2:35 pm
কলকাতায় তনুজার দ্বিতীয় দিন। বহুদিন পর আবার ছবিতে। তার ওপর বাংলায়। পরমব্রত চট্টোপাধ্যয়ের শ্যুটিংয়ে। সাক্ষী ভাস্বতী ঘোষ আর অর্ণব চক্রবর্তী।
EiSamay.Com tanuja is all set to work with parambrata chatterjees upcoming film sonar pahar
সৌমিত্রকে ‘পুলু’ ডাকেন, উত্তম ছিলেন ‘ভালো বন্ধু’


ভবানীপুরে কচুরি -মিষ্টির দোকান শ্রীহরির সামনে উপচে পড়ছে ভিড়৷ সব দৃষ্টি যে দিকে , সেখানে দৃষ্টি চালালে দেখা যাবে রাস্তা দিয়ে লাঠি হাতে হেঁটে আসছেন তনুজা ৷ সঙ্গে ছোট্ট শ্রীজাত৷ যে পরিচালক ফ্রেমবন্দি করছেন এ দৃশ্য , তাঁর নাম পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ৷ ভবানীপুরের এমন জনবহুল এলাকায় রাস্তায় নেমে শ্যুটিং করছেন ...পরমব্রত বলছেন , ‘সাহসের বলিহারী যাকে বলে আর কী !’

এ বছর অবশ্য পরমব্রত অধিকাংশ সিদ্ধান্ত বেশ সাহস করে নিয়েছেন৷ যেসব ছবির সঙ্গে অভিনেতা হিসেবে তাঁর নাম জড়িয়ে রয়েছে, যেমন ‘যকের ধন’ বা ‘সমান্তরাল’, তার পরিচালকরা নতুন৷ আবার ফেলুদা ওয়েব -সিরিজ পরিচালনা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন পরমব্রত৷ ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিজে৷ ফেলুদার কাজ নিয়ে এখনও যথেষ্ট ব্যস্ত৷ কিন্ত্ত তারই মধ্যে এবার শুরু করলেন নতুন ছবি পরিচালনার কাজ৷ ‘গ্রিনটাচ এন্টারটেইনমেন্ট’-এর প্রযোজনায় ছবির নাম ‘সোনার পাহাড় ’৷ পরমব্রত বলছেন , ‘২০১৫ সালের শুরু থেকে গল্পটা লিখছি৷ ২০১৬ সালে একবার ছবিটা তৈরি করার কথা ভাবি৷ কিন্ত্ত শেষ মুহূর্তে মনে হল , আরও কিছু সময় নিলে কাজটা ভালো হবে৷ সে কারণেই বছরখানেক অপেক্ষা করে এখন শুরু করলাম ছবিটা৷ ’

ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন তনুজা , যিশু সেনগুন্ত ৷ পরমব্রত নিজেও রয়েছেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে৷ আর ছবির প্রাণভোমরা খুদে শ্রীজাত (বন্দ্যোপাধ্যায় )৷ যার ডাকনাম মোহর৷ জওহরলাল নেহেরু চিলড্রেন ’স মিউজিয়ামে নাটকের ক্লাস থেকে যাকে খুঁজে পেয়েছেন পরমব্রত৷ ছবির গল্পটা কীরকম ? পরমব্রত বলছেন , ‘একটি বাচ্চা এবং একজন বয়স্ক মহিলার অসমবয়সী বন্ধুত্বের গল্প৷ বাচ্চাটি জীবনে আসার পর মহিলার জীবনে এক ধরনের উত্তরণ ঘটে৷ সে তার জীবনের হারিয়ে যাওয়া সময়ে ফিরে যায়৷ ছেলের সঙ্গে গত কয়েক বছরে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছিল৷ এই বাচ্চাটি এসে সেই ফাঁকা জায়গা পূর্ণ করে৷ ছেলের এক বন্ধু, যার সঙ্গে হঠাত্ করে দেখা হয়ে যায় মহিলার, তার মাধ্যমেই বাচ্চাটি মহিলার জীবনে আসে৷ ছেলেটি এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত৷ এই চরিত্রটি আমি করছি৷’ তা হলে ছবিতে তনুজার ছেলের চরিত্রে দেখা যাবে যিশুকে ? পরমব্রত বলছেন, ‘হ্যাঁ৷ একদম শুরুতে আমি যে চরিত্র করছি , সেখানে ঋত্বিককে ভেবেছিলাম৷ ঋত্বিকের মনে হয়নি ও চরিত্রটা করতে চায়৷ তারপর সেই চরিত্রে সৃজিতের কথা ভাবি৷ সৃজিত ভীষণভাবে করতেও চেয়েছিল এই চরিত্র৷ কিন্ত্ত এখন ‘উমা ’ নিয়ে ব্যস্ত৷

যিশুর কথা মনে হল , কারণ যিশু আর আমি দু’জনেই অল্প বয়সে মা’কে হারিয়েছি৷ সেখানে আমাদের একটা কানেক্ট আছে৷ আমি ওকে জিজ্ঞেস করি , ‘তুই কোন চরিত্রটা করতে চাস ?’ যিশু বলল , ‘আবেগের জায়গা থেকে আমার ছেলের চরিত্রটাই করতে ইচ্ছে করছে৷ ’ সে কারণেই যিশু ছেলের চরিত্রটি করছে৷ ’ ছবির সঙ্গীত হেঁশেল সামলাচ্ছেন নীল দত্ত৷ চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে রয়েছেন শুভঙ্কর ভড়৷ সিকিমে ছবির একটা অংশের শ্যুটিং হবে৷ তবে আপাতত জোরকদমে শ্যুটিং চলছে কলকাতায়৷ বেলতলা গার্লস স্কুলের কাছে রাস্তায় এদিন চলছিল শ্যুটিং৷ কাঁচা -পাকা চুলে , সাধারণ শাড়িতে এ এক অন্য তনুজা৷ আপনাকে তো ‘বাঙালি ’ বলেই মনে করেন বাঙালিরা ? তনুজা হেসে বলছেন , ‘আমি ‘বাঙালি ’ নই৷ বাঙালির সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে সেটা ঠিক৷ তবে বাংলার সঙ্গে একাত্ম বোধ করি৷ ’৬২ সালে প্রথম এসেছিলাম মনে হয়৷ এখানে এলে এখনও মনে হয় নিজের জায়গাতেই এসেছি৷’

মুম্বই শহরে খুব ধুমধাম করে দীপাবলি পালন করা হয়৷ প্রতিবার কাজলকেও দেখা যায় দীপাবলি উদ্যাপনে৷ সেখানে উপস্থিত থাকাটা মিস করছেন কি ? তনুজার উত্তর , ‘আমি কোনও আচারে বিশ্বাস করি না৷ মনে যা আছে , সেটা মনের মধ্যেই রাখব৷ বিশ্বাসের জোরই সেটা৷ পুজো যদি করি , সেটা এখানে করলাম নাকি মুম্বইয়ে করলাম , সেটায় কোনও ফারাক হয় না৷ ’খুব কম ছবির পরিচালক আপনার থেকে ‘হ্যাঁ’ শুনতে পান৷ এই ছবি করতে রাজি হলেন কেন ? ‘আই ডোন্ট এনকারেজ৷ খুব পরিচিত কেউ কোনও কাজের অফার নিয়ে এলে শুনে দেখি করতে ইচ্ছে করছে কিনা৷

টাকার জন্য আমি কাজ করি না৷ যদি মনে হয় কোনও চরিত্র আমাকে অভিনেত্রী হিসেবে সন্ত্তষ্টি দিতে পারবে , তা হলেই সে চরিত্র করি৷ পরমব্রতর ছবির জন্য ঠিক কার মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছিল মনে পড়ছে না৷ কিন্ত্ত গল্পটা শুনে আমার ভালো লাগল৷ তাই ছবিটা করতে ইচ্ছে করল ,’ উত্তর তনুজার৷ বাংলা ছবিতে কাজ করছেন শুনে কাজল কী বললেন ? তনুজা হেসে বলছেন , ‘অফ কোর্স ওরা খুশি৷ আমার কোনও কাজে বাধা দেয় না৷ আমি ওদের বড় করেছি সেই ভাবেই৷ আমার পছন্দের ব্যাপারে আমি কড়া৷ সেখানে আমার বাচ্চাদের কিছু বলার নেই৷ আমার পছন্দ ওদের ভালো লাগুক বা না লাগুক , তা নিয়ে ওদের কিছু করার আছে বলে আমি মনে করি না৷ ’

দীপাবলিতে আপনার জামাই অজয় দেবগণের ছবি মুক্তি পেল৷ সিনেমাহলে গিয়ে ছবি দেখেন ? তনুজার উত্তর , ‘খুব যে যাওয়া হয় তা নয়৷ তবে বাড়িতে অনেক ধরনের ছবি দেখি৷ সাউথ ইন্ডিয়ান ফিল্মস , মারাঠি ফিল্মস , গুজরাতি ফিল্মস৷ বাংলা ছবিও দেখি , কারও থেকে যদি শুনি কোনও বাংলা ছবি খুব ভালো , তা হলে৷ ’ ট্যাব হাতে এদিন বই পড়ছিলেন তনুজা , সাক্ষাত্কার শুরুর আগে৷ শ্যুটিং না থাকলে কী করেন ? তনুজা বলছেন , ‘আই লিভ ওয়ান ডে অ্যাট আ টাইম৷ লোনাভলায় আমার এনজিওর কাজ নিয়েও খুবই ব্যস্ত থাকি৷ ’

এতদিন পরে শ্যুটিং করার জন্য কোনও প্রস্ত্ততি নিলেন ? তনুজা বলছেন , ‘দরকার পড়ে না৷ একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী কোনও চরিত্রকে মনের মধ্যে সেইভাবে লালন করেন না , যেভাবে পরিচালক করেন৷ তিনি যেমনভাবে চরিত্রটিকে ভেবেছেন , সেটা তাঁর থেকে জেনে নিতেই স্বচ্ছন্দ আমি৷ ’ এদিন তনুজা জানালেন মাছ , পোস্ত খেতে ভালোবাসেন৷ কিন্ত্ত কলকাতার মিষ্টির প্রতি তাঁর কোনওরকম আসক্তি নেই৷ তনুজাকে সামনে পেয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠল ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি ’ আর ‘তিন ভুবনের পারে ’-র দৃশ্য ...সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই মনে প্রশ্ন এল৷ করেও ফেলা গেল সে প্রশ্ন--- উত্তম আর সৌমিত্রর মধ্যে আপনি তফাত্ করেন কীভাবে ? তনুজা বললেন , ‘পুলু ইজ স্টিল মাই ফ্রেন্ড৷ ভালো লোক৷ আমাদের যোগাযোগ রয়েছে৷ একদম পরিবারের মতো৷ ’ আর উত্তম ? ‘ভালো বন্ধু,’ ঠোঁটের কোণে হাসি খেলে যায় তনুজার৷

পরের খবর

Entertainmentসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল