অ্যাপশহর

বিভূতিভূষণের ‘তালনবমী ’ এবার আসছে বড় পর্দায়

গল্পটা খুব চেনা৷ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তালনবমী ’৷ স্কুলের পাঠ্যবইয়ে এই গল্প প্রায় সকলেই পড়েছেন৷

Ei Samay 19 Aug 2017, 2:31 pm
‘সহজ পাঠের গপ্পো ’ ছবির পরিচালক মানস মুকুল রায়ের সঙ্গে কথা বলে লিখছেন ইন্দ্রনীল শুক্লা
EiSamay.Com sahaj paather gappo colours of innocence is an upcoming bengali film directed by manas mukul pal and produced by avijit saha
বিভূতিভূষণের ‘তালনবমী ’ এবার আসছে বড় পর্দায়

গল্পটা খুব চেনা৷ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তালনবমী ’৷ স্কুলের পাঠ্যবইয়ে এই গল্প প্রায় সকলেই পড়েছেন৷ কিন্ত্ত সেটা যদি পর্দায় দেখা যায় কেমন হতে পারে ? সেটাই ঘটেছে এবার৷ বিভূতিভূষণের সেই চেনা গল্প অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘সহজ পাঠের গপ্পো ’ ছবিটি৷ ছবির পরিচালক মানসমুকুল রায়৷ এটিই তাঁর নির্দেশিত প্রথম ছবি৷ ছবির পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল , মূল গল্প প্রায় একই রাখা হয়েছে৷ তবে পূর্ণাঙ্গ স্ক্রিপ্ট তৈরির সময়ে সংলাপ রচনার স্বাধীনতা তো নিতেই হয়েছে৷ মানস বলছেন , ‘বিভূতিভূষণের রচনা থেকে ছবি বহু পরিচালক বানিয়েছেন৷ সত্যজিত্ রায়ের অপু ট্রিলজি তো ইতিহাস !

তবে যেটা লক্ষ্য করার ব্যাপার তা হল , এমনিতে বিভূতিবাবুর উপন্যাসে কথোপকথন এতোটাই সুন্দর থাকে যে তা সরাসরি সংলাপে ব্যবহার করা যায় খুব সহজেই৷ কিন্ত্ত আমি কাজটা করেছি ছোটগল্প নিয়ে৷ মাত্র তিন পাতার একটা গল্প থেকে আমি ৬৫ পাতার স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছি৷ সেদিক দিয়ে চেষ্টাটা অন্য রকমের৷ ’এই ফাঁকে একবার গল্পটার দিকে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে৷ সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষ জ্যোতি পিসিমার বাড়িতে তালনবমী উত্সবের আয়োজন চলেছে৷ কিন্ত্ত গ্রামের বড় সংখ্যক নিম্ন মধ্যবিত্ত বাড়ির বাসিন্দারা তখন বিপন্ন৷ কারও বাড়িতে বৃষ্টিতে ফাটল ধরে জল পড়ছে৷ কারও বাড়িতে ভাতের হাঁড়ি চড়েনি৷ তেমনই এক বাড়ি থেকে আসা দু’টি ভাইকে আমরা দেখি গল্পে৷

তারা তালনবমীর জন্য জ্যোতি পিসিমাকে তাল এনে দেওয়ার প্রতিশ্রীতি দেয়৷ বড়ভাই চায় তাল দিয়ে তার বিনিময়ে টাকা নিতে৷ কিন্ত্ত ছোটভাই টাকা নিতে রাজি নয়৷ সে মনে করছে তালের দাম না নিলেই বরং উত্সবের নিমন্ত্রণ মিলবে৷ তখন কয়েকটা তালের বড়া জুটতে পারে৷ সেই ভাবনা থেকেই সে লুকিয়ে জ্যোতি পিসিমাকে তাল দিয়ে আসে কোনও দাম না নিয়েই৷ কিন্ত্ত শেষটায় তালের বড়া কি জুটল ? সেই ক্লাইম্যাক্সই টেনে নিয়ে যায় গল্পকে৷ প্রথম ছবি বিভূতিভূষণের গল্প নিয়ে কেন ? পরিচালক বলছেন , ‘এর কোনও বিশেষ কারণ নেই৷ স্কুলে থাকতে ‘আলোর ফুলকি ’ নামে একটা বই পড়ি৷ তাতে অনেকগুলো গল্প ছিল৷ তার মধ্যে এই গল্পটা খুব ভালো লেগেছিল৷ মাথায় রয়ে গিয়েছিল৷ ছবি করার সময় গল্প বাছতে গিয়ে এটার কথাই মনে এলো৷ তাছাড়া এই গল্পের বাচ্চা ছেলেগুলোর মধ্যে যে আশা -আকাঙ্খা এবং পরে স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারটা আছে , সেটা কিন্ত্ত আমাদের সকলের জীবনেই ঘটে থাকে৷ সকলেই কোনও না কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে আইডেন্টিফাই করতে পারবেন৷ ’

উল্লেখ করার মতো ব্যাপার ছবির এই ছবিতে দু’জন মুখ্য অভিনেতা নূর ইসলাম এবং সামিউল আলম অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন , শ্রেষ্ঠ শিশু অভিনেতা হিসেবে৷ এই বিশেষ বিভাগটিতে দীর্ঘ তিরিশ বছর পর বাংলা ছবি জাতীয় পুরস্কার অর্জন করল৷ এই প্রতিভাবান শিশু অভিনেতাদের খুঁজে পেলেন কোথায় ? হেসে ফেলে মুকুল বলেন , ‘এঁরা সেই অর্থে অভিনেতাই নয়৷ গল্পের দুই ভাইয়ের ভূমিকায় কাজ করার জন্য আমি নতুন মুখ খুঁজছিলাম৷ চাইল্ড থিয়েটার কিংবা সিরিয়ালে অভিনয়ে অভ্যস্ত কাউকে দিয়ে আমি কাজ করাতে চাইনি৷ ’ তাহলে এদের পাওয়া গেল কোথায় ? ‘সে এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া৷ গল্পে যে ডায়ালেক্ট ব্যবহার করা হয়েছে , সেটা আমার মনে হয়েছে টাকি -বসিরহাট অঞ্চলের৷ সেজন্য আমি ওই দিককার গ্রামে , গ্রামের স্কুলে মুখের সন্ধান শুরু করি৷ দেগঙ্গা থেকে আরও খানিক ভিতরে বেলপুরে এক স্কুল থেকে জোগাড় করি নূর ইসলামকে৷

আর বেড়াচাপা দেউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পেয়ে যাই সামিউল আলমকে৷ দু’জনই অজ পাড়াগাঁয়ের বাসিন্দা৷ সন্ধের পর এদের গ্রাম এখনও ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকে৷ অভিনয় না জেনেও সহজেই চরিত্রের মধ্যে ঢুকতে পেরেছে এরা৷ ’ পরিচালকের থেকে জানা গিয়েছে , একাধিক চলচ্চিত্র উত্সবে ‘সহজ পাঠের গপ্পো ’ প্রদর্শিত হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে মুম্বই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব৷ সেখানে এটিই ছিল একমাত্র নির্বাচিত বাংলা সিনেমা৷ ২০১৬ সালের ইন্ডিয়ান প্যানোরামা বিভাগে নির্বাচিত হয় এই ছবি৷ আমন্ত্রণ পেয়েছে সুইডেনের গোটেবর্গ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ও নিউ ইয়র্ক ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও৷ পরিচালক জানালেন এই ছবি কলকাতায় মুক্তি পাবে এ বছরেই৷ সামান্যই অপেক্ষা৷

পরের খবর

Entertainmentসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল