অ্যাপশহর

গান কোথায় গেল? রংহীন রানু

মাস কয়েক আগেও তিনি ছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম আলোচিত নাম। এখন কী হল রানাঘাটের রানু মণ্ডলের? কী ভাবে আড়ালে চলে গেলেন? লিখলেন চিত্রদীপ চক্রবর্তী....

EiSamay.Com 6 Jun 2020, 11:52 am
‘ইয়ে প্যায়ার কা নাগমা হ্যায়।’ এই একটি গানের ভেলায় চেপে নদিয়ার বেগোপাড়া থেকে মুম্বইয়ের স্টুডিয়োতে পৌঁছে গিয়েছিলেন রানু মণ্ডল। রকেটের গতিতে উত্থান হয়েছিল তাঁর। তারপর মাঝে মাত্র সাত-আটমাসের ব্যবধান। যেন প্রায় থমকেই গিয়েছে সেই গানের গলা। প্রথমে বিতর্ক, তারপর লকডাউন রাতারাতি জনপ্রিয় রানুকে ফের ঘরবন্দি করে দিয়েছে।
EiSamay.Com himesh-reshammiya and ranu mondal
সুরকার হিমেশ রেশমিয়ার সঙ্গে রানু মন্ডল


মাসখানেক আগে একটি ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তিনি আবেদন জানিয়েছিলেন কিছু ত্রাণের জন্য। যা নিজের হাতে দুঃস্থদের দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সেই ত্রাণ আসার পর রানু তেমন উৎসাহ না দেখানোয় পাড়ার ছেলেরাই উদ্যোগ নিয়ে তা পৌঁছে দেন বেশ কয়েকজনের হাতে। রানুকে যিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম তুলে ধরেছিলেন, সেই অতীন্দ্র চক্রবর্তী অবশ্য বলছেন,‘দিদির বাড়িতে কয়েকজন গরীব মানুষকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি বিভিন্ন সামগ্রী তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।’

কিন্তু এতটা এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে পড়লেন কেন এই গায়িকা? সেই ঘটনা জানতে হলে যেতে হবে গত ডিসেম্বরে। হিমেশ রেশমিয়ার দৌলতে পর পর কয়েকটি গান রেকর্ডিং করার পর বাড়তে থাকে রানুর টিআরপি। ডাকও আসতে শুরু করে দেশবিদেশ থেকে। কাতারে বসবাসকারী ভারতীয়দের নিজস্ব সংগঠন আমন্ত্রণ জানায়। সেখানে ছিলেন হিমেশ নিজেও। আয়োজকরা শিল্পীদের নিয়ে যান একটি শপিং মলে। ভিতরে এক বাঙালি মহিলা সেলফি তোলার জন্য পিছন দিক থেকে রানুর ঘাড়ের কাছে টোকা দেন। আর তাতেই ভয়ঙ্কর চটে প্রকাশ্যে অপমান করেন লতাকন্ঠী গায়িকা। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে কয়েক মিনিটের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ফুটেজ। রানুর ওই প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হন হিমেশও। শোনা যায়, তিনি রানুর এক ঘনিষ্ঠের মাধ্যমে বলেন, ‘বিষয়টা এতটাই ছোট যে একজন ফ্যানের সঙ্গে এমন আচরণ করা মোটেই ঠিক কাজ হয়নি। বরং নিজের কৃতকর্মের জন্য তাঁর ‘সরি’ বলা উচিত।’ কিন্তু রানু সেই অনুরোধ অগ্রাহ্য করেন। কোনও দুঃখপ্রকাশ তিনি করেননি।

ওই ঘটনার জের কতটা সুদূরপ্রসারী ছিল তা বোঝা যায় দু’সপ্তাহের মধ্যে। ৩১ ডিসেম্বর মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের বর্ষশেষের অনুষ্ঠানে রানুকে শিল্পীদের তালিকায় রাখা হয়েছিল। যে অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিল খোদ অমিতাভ বচ্চনের। কিন্তু কাতারের ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ তালিকা থেকে রানুর নাম বাদ দিয়ে দেন। তারপর কেরলের একটি স্বর্ণবিপণীর উদ্বোধন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অনুষ্ঠান ছাড়া আর কোনও ডাক আসেনি। পরের মাস থেকেই তো কার্যত লকডাউন দেশজুড়ে।

যেখানে রানু থাকেন, সেই বেগোপাড়ার বাসিন্দারা কী বলছেন? তাঁরা মনে করেন, অতীন্দ্র নিজের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যেখানে তাঁকে পৌছে দিয়েছিলেন, ওই জায়গা ফেরত পাওয়া কষ্টসাধ্য শুধু নয়, অসম্ভবও। বর্তমানে স্থানীয় ক্লাবের ছেলে তপন এবং মিঠুরাই খোঁজখবর নিয়ে বাজার করে দেন। অন্যান্য কাজ করে দেন। আর্থিক দিকটাও সামলান তাঁরা। কয়েকটি অনুষ্ঠান করে যে টাকা পেয়েছিলেন, তা দিয়ে এখন একার সংসার চলে রানুর। প্রত্যেকেই মনে করেন, নিজের আচরণ তাঁকে আজ একঘরে করে দিয়েছে। শুধু রানুর জন্য কোনও স্বার্থ ছাড়া কাজ করতে গিয়ে বিতর্কে জড়াতে হয়েছে অতীন্দ্র-তপনদের। এখন মেয়েও দেখতে আসেন না তেমন ভাবে।

আর তাই বোধহয় অভিমান অতীন্দ্রের গলাতেও। যদিও বললেন, ‘দিদির প্রতি আমার কোনও রাগ-অভিমান নেই। উনি ভালো থাকুন। আরও বেশি করে গান করে সবাইকে আনন্দ দিন। তবে আমার তো থেমে থাকলে চলবে না। এই বাংলাতে প্রচুর প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে। তাঁদের খুঁজে বের করার কাজটাও চালিয়ে যেতে হবে আমাকে।’

রানু অবশ্য কোনও বিষয় নিয়েই কথা বলতে আগ্রহী নন। সাংবাদিকদের সঙ্গে তো নয়ই। কিন্তু তাঁর গান কোথায় গেল?

পরের খবর

Entertainmentসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল