অ্যাপশহর

কাশ্মীর হোক বা করাচি, মৃত্যু সবসময়ই মৃত্যু

ঠিক যখন ভারত-পাক পারস্পরিক সম্পর্ক সবচেয়ে স্পর্শর্কাতর, তখনই অভিনেতা পূরব কোহলি করছেন পাকিস্তানের হাতে এক যুদ্ধবন্দীর ঘরে ফেরা নিয়ে ধারাবাহিক৷

EiSamay.Com 20 Oct 2016, 9:58 am
ঠিক যখন ভারত-পাক পারস্পরিক সম্পর্ক সবচেয়ে স্পর্শর্কাতর, তখনই অভিনেতা পূরব কোহলি করছেন পাকিস্তানের হাতে এক যুদ্ধবন্দীর ঘরে ফেরা নিয়ে ধারাবাহিক৷ আবার একই সঙ্গে মুক্তির অপেক্ষায় তাঁর ছবি ‘নূর’, যার জন্ম ওয়াগার ওপারের এক লেখকের কলমে৷ আসছে ‘রক অন’-ও৷ সেই সব এবং আরও অনেককিছু নিয়েই তাঁকে প্রশ্ন করলেন মহুয়া দত্তমিত্র
EiSamay.Com purab kohli talks about his pakistani projects and next movie
কাশ্মীর হোক বা করাচি, মৃত্যু সবসময়ই মৃত্যু


‘হিপ হিপ হুররে’ ধারাবাহিকের যে ক’জন স্কুল ছাত্র-ছাত্রী আজও ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের জায়গা ধরে রেখেছেন তার মধ্যে অন্যতম পূরব কোহলি৷ তিনি শুধু ধরেই রাখেননি, করছেন ভালো ভালো কাজও৷ ২০০১ সালে শেষ হয় ‘হিপ হিপ হুরে’৷ তারপর ছোটপর্দায় কখনও সঞ্চালনা তো কখনও নাচের মঞ্চে প্রতিযোগী হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় পূরবকে৷ আবার প্রায় বছর পনেরো পর তিনি ফিরছেন টেলিভিশনে৷

যুদ্ধ বন্দী

ধারাবাহিকের নাম ‘পি.ও.ডাব্লু (বন্দী যুদ্ধ কি)’৷ টেলিভিশনে প্রমো দেখানো শুরু হয়ে গিয়েছে৷ ‘কাল হো না হো’ খ্যাত পরিচালক নিখিল আডবানি পরিচালিত এই ধারাবাহিকে তিনি একজন যুদ্ধ-বন্দী৷ নায়েব সুবেদার সরতাজ সিং৷ যে পাকিস্তানের জেলে সতেরো বছর বন্দী থেকে নিজের দেশে ফিরছে৷ সঙ্গে রয়েছে স্কোয়াড্রেন লিডার ইমান খান৷ ফিরে আসার পর তাদের জীবনে কী কী ঘটছে তা-ই ধারাবাহিকের বিষয়৷ অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘এয়ারলিফ্ট’ ছবিতে অভিনয় করেছেন পূরব৷ আসছে ‘রক অন টু’, ‘নুর’৷ তাহলে হঠাত্ টেলিভিশনে কেন? ‘হঠাত্ নয়৷ অফার ছিল বরাবরই৷ কিন্ত্ত সিনেমায় অভিনয় করব বলে প্রথম দিকে নিজেকে টেলিভিশন থেকে দূরে রেখেছিলাম৷ এছাড়া আমরা যে সময় টেলিভিশন করতাম, তখন প্রতিদিন শ্যুটিং করতে হত না৷ কারণ ওটা ডেলি শোপ ছিল না৷ আমি এতদিন যে-সব অফার পাচ্ছিলাম সেগুলো ডেলি শোপ-এর৷ যার জন্য আমাকে প্রতিদিন সময় দিতে হত৷ যেটা সিনেমায় অভিনয় করার পাশাপাশি করা সম্ভব নয়৷ এটা সাপ্তাহিক সিরিজ৷ তাই রাজি হই৷ আর সবথেকে উল্লেখযোগ্য কারণ নিখিল আর ভারতীয় সেনা৷ নিখিলের এই প্রজেক্টটা খুবই ইন্টারেস্টিং৷ যুদ্ধ-বন্দীর গল্প৷ এরজন্য আমি কার্গিল যুদ্ধের জওয়ানদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছি৷ সেই সঙ্গে মুম্বইতে ভারতীয় সেনার শিখ রেজিমেন্টের সঙ্গেও দেখা করতে পারি৷ তাঁদের থেকে যুদ্ধের নানা কাহিনি শোনার সৌভাগ্য হয়, সব মিলিয়ে এই কাজটা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ,’ ফোনের ওপারে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন পূরব৷


বর্তমানে ভারত-পাক পরিস্থিতিও খুব স্পর্শকারত অবস্থায় রয়েছে৷ কী মনে হয়, এটা তাঁর নতুন ধারাবাহিকে কোনও প্রভাব ফেলবে? তাঁর মতে, ‘এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার অনেক আগে থেকেই এর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে৷ তাই দুটোর মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই৷ আজকের এই পরিস্থিতির বিষয়ে কাশ্মীর হোক বা করাচি, মানুষের মৃত্যু দিয়ে কখনও কোনও ভালো কাজ হয়নি৷ হবেও না৷ যুদ্ধের ফলে বহু মানুষের মৃত্যু হয়৷ যে দেশই হোক না কেন, মুত্যু সব সময়ই মৃত্যু৷ অনুভূতি ছিলই, এই কাজটা করতে গিয়ে আরও বুঝতে পারছি যুদ্ধের ফল কতটা খারাপ৷’

বাঙালি ছবি

আবার আসছে ‘রক অন টু’৷ শোনা গিয়েছে এই ছবির জন্য তিনি নাকি মাউথ অর্গান বাজানো শিখছেন৷ যতদূর জানা যায় তিনি ছবিতে ড্রামার৷ তাহলে হঠাত্ মাউথ অর্গান কেন? ‘না, না, ছবির জন্য নয়৷ এই ছবিতে আমার একজন সহ-অভিনেতাকে মাউথ অর্গান বাজানো শিখতে হয়েছে৷ সেটা দেখে আমার ইচ্ছে হল, তাই শিখলাম৷ নতুন কিছু শিখতে সব সময়ই ভালো লাগে৷’ জানালেন পূরব৷ একদিকে যুদ্ধ-বন্দী, অন্যদিকে পাকিস্তানি লেখকের গল্পের ভিত্তিতে তৈরি ছবি ‘নুর’-এর অন্যতম অভিনেতা৷ পাকিস্তানের সঙ্গে একটা যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে৷ ‘পুরো বিষয়টাই কাকতলীয়৷ আর ছবির গল্পকার যেকোনও জায়গারই হোক না কেন, গল্প ভালো হওয়া নিয়ে কথা৷ আরে, এখানে তো আমি একজন বাঙালি চরিত্রে অভিনয় করছি,’ বললেন ‘নূর’-এর অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বাঙালি চরিত্রে অভিনয় করছেন, কতটা জানেন বাংলা সম্পর্কে৷ ‘অনেক কিছু৷ আরে বাঙালি পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করেছি৷ অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের হিন্দি ছবি ‘তেরে আনে সে’-তে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে অভিনয় করেছি,’ বলেন পূরব৷ হেসে তিনি আরও যোগ করেন, ‘বাঙালি খাবারের তো কোনও তুলনা হয় না৷ তবে বাঙালির যে বিষয়টা সবথেকে ভালো লাগে, তা হল মিষ্টি কথা৷ যেমন, অগ্নিদা শ্যুটিংয়ের সময় খুব রেগে বকলেন, কিন্ত্ত তা এত মিষ্টি করে বলতেন যে রাগই হবে না তাতে কারো৷’

পরিচালনা-মার্কেটিং

সিনেমায় অভিনয় করার জন্য টেলিভিশন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন নিজেকে৷ কিন্ত্ত তিনি এমন অনেক ছবি করেছেন, যা সেভাবে বক্স-অফিসে সফল হয়নি৷ এমনই একটি ছবি ‘গঙ্গুবাই’৷ সম্প্রতি জি ক্ল্যাসিক চ্যানেলে ছবিটি দেখানো হয়৷ ‘হ্যাঁ, এই ছবিটি বড়পর্দায় সেভাবে মানুষের কাছে পৌঁছায়নি৷ কারণ ঠিকমতো পাবলিসিটিই করা হয়নি৷ অথচ ছবিটা দেখলেই বোঝা যাবে গল্পটা কত ইন্সপায়ারিং৷ আসলে ছবির গল্প ভালো হলেই সব সময় হয় না, ছবির মার্কেটিংও ঠিকমতো করতে হয়৷ ‘গঙ্গুবাই’-এর মার্কেটিং সেভাবে হয়নি৷ যার ফলে ছবিটা খুব বেশি থিয়েটারে জায়গা পায়নি৷ টেলিভিশনে দেখানোর ফলে অনেকে দেখতে পেলেন ছবিটা,’ মত পূরবের৷ পূরব মনে করেন কোন ছবিতে সাফল্য আসবে সেটা আগে থেকে বলা অসম্ভব৷ একটা ছবি সফল হবে কী হবে না, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে দর্শকদের উপর৷ তিনি আরও মনে করেন, ‘শুধু ছবি নয়, নিজেকেও ঠিকমতো মার্কেটিং না করলে আজকের যুগে কাজ পাওয়াটাও কঠিন৷’ পূরব মনে করেন তিনিও নিজেকে ঠিক মতো মার্কেটিং করতে পারেননি, তাই কেরিয়ারের এতগুলো বছরে যে জায়গাটায় যেতে পারতেন, সেটা পারেননি৷ কারণ নিজে থেকে কাজ চাওয়াটা তাঁর আসে না৷


তিনি আনন্দ পরিবারের একজন এটাও কি তাঁকে সিনেমার জগতে নিজের জায়গা পাকা করতে সাহায্য করেনি? না, কোনওভাবেই করেনি৷ কারণ তিনি যে দেব আনন্দ বা চেতন আনন্দের পরিবারের একজন সেটা কোনওদিন বলেননি৷ আর তিনি যখন কাজ শুরু করেন, তখন এই দু’জনেই সিনেমার জগত থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছেন৷ চেতন আনন্দ তো মারাই গিয়েছিলেন তাঁর অভিনয় জগতে আসার আগেই৷ তাই সিনেমায় সুযোগ পাওয়ার জন্য তাঁদের সাহায্য পাওয়া আর হয়ে ওঠেনি তাঁর৷ জানালেন পূরব৷ নিজে কি কোনওদিন পরিচালনায় আসবেন? আসলে কীরকম ছবি করবেন? ‘অবশ্যই বানাতে চাইব ছবি৷ এখনই ঠিক করিনি, তবে যা-ই করব তাতে একটা গল্প থাকবে৷ যেটা দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে,’ দৃঢ়তার সঙ্গে কথাগুলো বলে সাক্ষাত্কারে ইতি টানলেন পূরব কোহলি৷

পরের খবর

Entertainmentসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল