অ্যাপশহর

সহজ পাঠ থেকে সোজা ইতিহাসের স্নাতক স্তরে

একচেটিয়া সেরা ডেবিউ পুরস্কার জেতার পর মানস মুকুল পালের পরের দু’টি ছবি বাংলার অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের নিয়ে৷ প্রথমটি দীনেশ গুপ্তর জীবনের ওপর বড় বাজেটের ছবি৷

EiSamay 23 Feb 2018, 2:20 pm
একচেটিয়া সেরা ডেবিউ পুরস্কার জেতার পর মানস মুকুল পালের পরের দু’টি ছবি বাংলার অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের নিয়ে৷ প্রথমটি দীনেশ গুপ্তর জীবনের ওপর বড় বাজেটের ছবি৷ লিখছেন ভাস্বতী ঘোষ
EiSamay.Com manas mukul pal who started his career with the movie sahaj paather gappo
সহজ পাঠ থেকে সোজা ইতিহাসের স্নাতক স্তরে


দর্শকমনে জায়গা তৈরি করা অপেক্ষাকৃত সহজ৷ সেই জায়গা ধরে রাখা কঠিন৷ ঠিক এমন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পরিচালক মানস মুকুল পাল৷ যাঁর প্রথম ছবি ‘সহজ পাঠের গপ্পো ’৷ যে ছবি জাতীয় পুরস্কার থেকে ফিল্মফেয়ার -ইস্ট, সবই শৃঙ্গ ছুঁয়ে ফেলেছে৷ এরপর অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন হল , মানস দ্বিতীয় ছবিতে তাঁর ম্যাজিক ধরে রাখতে পারবেন তো? সে উত্তর পেতে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে৷ কিন্ত্ত মানসের দ্বিতীয় ছবিটি কী হবে, তা নিয়েও চর্চা টলিউডে ? আজকে সেটাই জানার৷ এবারের ছবি কী নিয়ে ? মানস বলছেন, ‘দীনেশ গুপ্ত-র বায়োপিক তৈরি করার কথা ভেবেছি৷ বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম অন্য অনেকের মতোই আমাকে ভীষণভাবে ভাবায়৷ সেই বিষয়ের ওপর চিত্রনাট্য সাজানো শুরু করেছিলাম ‘সহজ পাঠের গপ্পো ’-র আগেই৷ কিন্ত্ত ছবিটা বানাতে যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন সেটা তখন পাওয়া সম্ভব ছিল না৷ এখন মনে হচ্ছে , এটাই সেই ছবি বানানোর জন্য ঠিক সময়৷ ’ এমন বিষয় নির্বাচন কেন ? মানস বলছেন , ‘সূর্য সেন , ক্ষুদিরাম বসু বা প্রফুল্ল চাকী , এমন মানুষদের জীবনকাহিনি যখন পড়েছি , দেখেছি ব্রিটিশ আমলে যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন , তাঁদের বেশিরভাগের বয়স কুড়ি থেকে বাইশ৷

কিন্ত্ত ফাঁসির মঞ্চে উঠেছেন বীরের মতো৷ ‘বন্দেমাতরম’ বলতে-বলতে হাসিমুখে দেশের জন্য প্রাণত্যাগ করেছেন৷ দীনেশের ফাঁসি হয়েছে ১৯৩১-এ, ২০ বছর বয়সে৷ তিনি স্বাধীনতা দেখে যেতে পারেননি , কিন্ত্ত বিশ্বাস করেছেন তাঁর মৃত্যুবরণ নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাবে দেশের জন্য ভাবতে ...দেশ বলেও তো আসলে কিছু হয় না, মানুষের জন্য ভাবতে৷ ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য-র যখন ফাঁসি হয় , তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ভয় করছে কিনা৷ তাঁর উত্তর ছিল, ‘অমাবস্যার রাতে শ্মশানে ভীতুরা ভয় পায় , সাধক সিদ্ধিলাভ করে’৷ এঁদের কথা যখন পড়েছি মনে হয়েছে আজও এমন মানুষ জন্মায় যাঁরা দীনেশ বা ক্ষুদিরাম হতে পারে৷ কিন্ত্ত আজ সেই পরিস্থিতি বা পরিবেশ নেই৷ এই বিপ্লবীদের তৈরি করার পিছনে অনেক মানুষের অবদান ছিল সে সময়৷ তাঁরাই তরঙ্গ আর শহিদরা তরঙ্গশীর্ষ৷ এঁদের কথা পড়তে-পড়তে একটা বইয়ে দেখি লেখা রয়েছে , বিপ্লবীদের কথা যিনি নতুন প্রজন্মের সামনে নিয়ে আসেন তিনি প্রকৃত দেশপ্রেমিকের কর্তব্য পালন করেন৷ তখন মনে হয় এই বিষয় নিয়ে ছবি তৈরি করা দরকার৷’

মানস এই ছবি তৈরির জন্য গবেষণা করছেন গত দু’-তিন বছর৷ সম্প্রতি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও পরিচালকের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে ছবির সময়কাল নিয়ে৷ আপাতত এই বিষয়ে ৬৪-তম বইটি পড়ছেন মানস৷ কখনও কলেজ স্ট্রিট আবার কখনও জতীয় গ্রন্থাগারে ছোটাছুটি করছেন৷ কলেজ স্ট্রিট বই পাড়ার কফিহাউজে বসে মানস বলছিলেন , ‘২০১৮ -য় আমরা এখন খুব আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছি৷ আমাদের প্রজন্ম বা পরবর্তী প্রজন্মের একাংশ দুর্নীতিগ্রস্ত৷ কিন্ত্ত একেবারে নতুন প্রজন্ম, যারা সবে পড়াশোনা শুরু করেছে, তারা যদি ছবির মাধ্যমে এই বিপ্লবীদের কথা জানতে পারে , তা হলে তারা বড় হয়ে মানুষের জন্য ভাবতে শিখবে৷ আর তাহলেই যে বিপ্লবীরা প্রাণ দিয়েছেন , তাঁরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছবেন, কারণ তাঁরা একটা উন্নত স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন৷ ঠিক এই জায়গা থেকেই নতুন ছবিতে হাত দিচ্ছি৷’

মানস আরও যোগ করেন, ‘অনেকেই মজা বা ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘আমি বার খেয়ে ক্ষুদিরাম হচ্ছি না ’৷ কিন্ত্ত তাঁরা ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগ সম্পর্কে কতটুকু জানেন ? বাঙালির অধিকাংশই আসলে বিনয় -বাদল -দীনেশ নামটুকু জানে৷ কিন্ত্ত বিস্তারিত ক’জন জানতে পারেন ? আমার ছবি দেখে যদি একজন মানুষও নিজের দেশের মানুষদের ভালোবাসার বা তাঁদের জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা পান , তা হলেই আমার ছবি করা সার্থক হবে৷’

ছবির গল্প এগোবে কীভাবে ? মানস বলছেন, ‘বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে দু’টো ছবি করতে চাই৷ প্রথম ছবির সময়কাল ১৯২৮ থেকে ১৯৩১৷ সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এগোবে গল্প৷ দীনেশের পাশাপাশি বিনয় আর বাদলও আসবেন ছবিতে৷ দীনেশ ভালো ছাত্র ছিলেন৷ পাশাপাশি তাঁকে সাহিত্যিকও বলা যায়৷ ঠিক কী কারণে তিনি বিপ্লবী হয়ে উঠলেন , এই সবকিছু নিয়েই চিত্রনাট্য সাজাচ্ছি৷’ বিনয় -বাদল-দীনেশকে বিষয় করে একটি ছবি তৈরির ভাবনা আছে দেবের প্রযোজনা সংস্থারও৷ সে কথা জানেন নিশ্চয়ই ? মানসের উত্তর, ‘একই বিষয়ের ওপর দু’ জন পরিচালক ছবি তৈরি করতেই পারেন৷’ প্রসঙ্গত এ বছরের গোড়াতেই একটি অ্যাওয়ার্ড শো -র শেষে নায়ক দেব যোগাযোগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন মানস মুকুল পালের সঙ্গে৷ এরপর দু’ জনের দেখা৷ অন্য ছবিটিতে , যেখানে বাঘাযতীনকে নিয়ে কাজের কথা ভাবছেন মানস , তার জন্য দেবের সঙ্গেও কথা হয়েছে৷

পরের খবর

Entertainmentসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল