অ্যাপশহর

ফুড পর্ন-এর রেসিপি

‘সাইকো’ ছবির জন্য হিচকক রক্ত তৈরি করেছিলেন চকোলেট সস দিয়ে৷ কিন্তু ‘ফুড পর্ন’ কীভাবে তৈরি হয়, তা কি জানেন?

EiSamay.Com 18 Apr 2017, 12:21 pm
‘সাইকো’ ছবির জন্য হিচকক রক্ত তৈরি করেছিলেন চকোলেট সস দিয়ে৷ কিন্তু ‘ফুড পর্ন’ কীভাবে তৈরি হয়, তা কি জানেন? সিনেমা আর খাবারের এই যে হলায়গলায় সম্পর্ক, সেটাই কাল্টিভেট করার চেষ্টা করলেন ভাস্বতী ঘোষ
EiSamay.Com director pratim d gupta talks abouthis film macher jhol
ফুড পর্ন-এর রেসিপি



মাছের টুকরো কেটে ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিয়ে হালকা হলুদ-নুন মাখিয়ে টগবগে তেলে ছেড়ে দিন৷ মাছ ভেজে তুলে নিয়ে অন্য একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে কোন ফোড়নটা দেবেন জানেন তো? যদি না জানেন, পরিচালক প্রতীম ডি গুপ্তা শিখিয়ে দেবেন৷ তিনি যে ‘মাছের ঝোল’ বানাচ্ছেন! প্রতীমের দাবি, এটি বাংলার প্রথম ফুড ফিল্ম৷ আসলে এ বছর বাংলার বেশ কিছু ছবির নাম কোনও না কোনও বাঙালি খাবারের নামে৷ এই যেমন ‘পোস্ত’৷ বা ‘প্রজাপতি বিস্কুট’৷ তবে এইসব ছবির মধ্যে কিছু খাবারের নাম এলেও, তার পরিচালকরা কেউই এগুলোকে ফুড ফিল্ম হিসেবে দাবি করেননি৷
কিন্ত্ত ‘মাছের ঝোল’ হেঁশেল সর্বস্ব৷ প্রতীম বলছেন, ‘ছবির নাম ‘মাছের ঝোল’ বলে যে শুধু বাঙালি রান্নাই রয়েছে, এমন নয়৷ সারা পৃথিবীর প্রায় ২৫ রকম রান্না রয়েছে ছবিতে৷ ফুড আমার ছবির ‘ফরেন লোকেশন’৷ মানে জিভে জল আনা জিনিসটা৷’ মজার ব্যাপার হল, ছবির রান্নাঘর আর বাঙালি বাড়ির রান্নাঘরে কিন্ত্ত বিস্তর ফারাক৷ ঠিক কীভাবে শ্যুটিং হয় একটা ফুডফিল্ম-এর, তা জেনে তাক লেগে যেতে পারে অনেকেরই৷ সাধারণত এই পদ্ধতি কেউ প্রকাশ্যে আনতে চান না৷ কিন্ত্ত ‘অন্য সময়’-এর লক্ষ্য ছিল সেই পদ্ধতিই প্রকাশ্যে আনা৷


ছবিতে ঋত্বিক চক্রবর্তী একজন শেফ৷ তাঁর সহকারী সৌরশেনী মৈত্র৷ আবার ঋত্বিকের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন মমতা শংকর৷ শেফ হয়ে রান্নাবান্না করার দৃশ্যে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠার জন্য কীরকম ধরনের প্রস্ত্ততি নিতে হয় অভিনেতাদের, প্রথমে সেটা জেনে নেওয়া যাক৷ প্রতীম বলছেন, ‘ঋত্বিক একসময় একা থাকত৷ রান্নাবান্না করতে পারে৷ সৌরশেনীকে ছবিতে একটা ডেজার্ট বানাতে হয়েছে৷ সেটা ঠিকভাবে করার জন্য ও বাড়িতে পদটা বানানোর অভ্যাস করত৷’


ধরা যাক মাছের ঝোল রান্না করার দৃশ্যের শ্যুটিং৷ সেখানে প্রথম টেক যদি পরিচালকের পছন্দ না হয়, তা হলে তিনি দৃশ্যটি আবার শ্যুট করতে চাইবেন৷ তা হলে তো নতুন মাছের ঝোল-এর প্লেট লাগবে? প্রতীম বলছেন, ‘সে কারণেই খাবারের দৃশ্যের শ্যুটিং করার সময় আমরা সবকিছু তিনপ্লেট করে তৈরি রাখতাম৷’ তারপর হেসে যোগ করছেন, ‘অর্থাত্ দু’বার দৃশ্যটি রিটেক করার সুযোগ ছিল (হাসি)৷’


পরিচালকের মুখ থেকেই জানা গেল, প্রোডাকশন ডিজাইনার শাশ্বতী (কর্মকার) খাবারের দৃশ্যের জন্য বিশেষভাবে রান্না করতেন৷ প্রতীম বলছেন, ‘শাশ্বতীর রান্না হয়ে গেলে আমি প্লেটে খাবার সাজাতাম৷ তবে এই পদগুলো হাফ-কুকড৷ খাবার পুরোপুরি সেদ্ধ হয়ে গেলে ছবিতে দেখতে ভালো লাগে না৷ তাই যতটুকু সেদ্ধ হলে ছবিতে বা বড়পর্দায় আকর্ষণীয় লাগবে, ততটাই সেদ্ধ করা হত৷ খাবারের যে কোনও বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংও এরকমভাবেই হয়৷’


আর এমন খাবার খাওয়ার দৃশ্য থাকলে? হেসে ফেলে প্রতীম বলছেন, ‘ছবিতে খাওয়ার কিছু দৃশ্য আছে৷ সেই দৃশ্যের জন্য অভিনেতাদের এমন খাবার খেতে হয়েছে, যাতে নুন-ঝাল সব কম৷ একেবারে বিস্বাদ৷ তবে দেখতে দারুণ! সেই খেয়ে তাঁরা এমন তৃপ্তির হাসি হেসেছেন যে বোঝা যায় পাকা অভিনেতা৷’ এরপরই প্রতীম যোগ করছেন, ‘ফুডফিল্ম শ্যুটিংয়ের সময় শট চলাকালীন খেতে হয় বলে, অভিনেতাদের লাঞ্চ বা ডিনারে কম খেয়ে থাকতে হয়!’ প্রতীম দাশগুপ্ত নিজেও ভোজনরসিক৷ ছবির বিষয়ভাবনা তার প্রমাণ৷ ছবি তৈরির সময় যখন খাবার নিয়ে শ্যুটিং করছিলেন, কেমন লাগছিল? প্রতীম বলছেন, ‘মাছের গা দিয়ে ঝোলটা যখন গড়িয়ে পড়ছিল, জিভে জল এসে যাচ্ছিল৷ এই ছবি ফুড পর্ন৷ আশা করি, সে কারণে এবার আমায় সেন্সর কয়েকহাত নেবে না!’

গোপন কথাটি...

পাভেল: ‘রসগোল্লা’ ছবির পরিচালক৷ পাভেল বলছেন, ‘আমাদের শ্যুটিংয়ের সময় ফুড এক্সপার্ট ফ্লোরে থাকবেন৷ ছবিতে শুধু যে রসগোল্লা তৈরি করলেই হবে, তা তো নয়৷ আমাদের ব্যর্থ রসগোল্লা-ও তৈরি করতে হবে৷ মানে ছানা ফুলে ফেটে গেল, সেটাও দেখাতে হবে৷ তাই কিছু ক্ষেত্রে কম্পিউটার গ্র্যাফিক্স ব্যবহার করার কথা ভাবছি৷’ পরিচালকের কাছ থেকেই জানা যাচ্ছে ছবির নায়ক উজান (গঙ্গোপাধ্যায়) রসগোল্লা তৈরির ওয়ার্কশপে যাবেন ক’দিন পর থেকেই৷ পুরনো দিনের মিষ্টির দোকানে কীভাবে মিষ্টি তৈরি হত, তা শিখবেন তিনি৷ পাশাপাশি ধীমান দাসের (রসগোল্লার ‘আবিষ্কর্তা’ কে সি দাসের অধুনা কর্ণধার) দোকানেও যাবেন ছানা মাখা বা মিষ্টি তৈরির যাবতীয় কিছু শিখতে৷


সৌকর্য: ‘রেনবো জেলি’ ছবির পরিচালক৷ এই ছবিতে আটরকম পদ রান্না দেখানো হচ্ছে৷ সাত স্বাদের-সাত রঙা পদের মিশেলে শেষে তৈরি হবে রেনবো জেলি৷ যে পদ খেলেই মানুষ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে৷ পরিচালক জানাচ্ছেন, ‘কিছু উপকরণ দিয়ে যেমন রান্না হয়েছে এই পদ, তেমন আলো, দৃশ্যগ্রহণ ইত্যাদির কিছু ট্রিকে বড়পর্দায় পদটিকে লোভনীয় দেখতে লাগবে৷’

সুদীপা: বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় রান্নার শো ‘রান্নাঘর’-এর অ্যাঙ্কর৷ সুদীপা বলছেন, ‘বাঙালি পদ যখন রান্না করি, তখন আসল রান্নাটাই পরিবেশন করা হয়৷ কিন্ত্ত একটু অন্য ধরনের পদের ক্ষেত্রে আমাদের শ্যুটিংয়ের পদ্ধতি আলাদা৷ একবার ‘দাওয়াতে রান’ বানিয়েছিলাম৷ মানে পাঁঠার একটা গোটা ঠ্যাং রান্না করা হয়েছিল৷ এই সব রান্নায় মাংস পুরো সেদ্ধ হয়ে গেলে ফেটে যায়৷ দেখতে ভালো লাগে না৷ তাই এইসব রান্নার শ্যুটিংয়ে দু’বার রান্না করা হয়৷ একপ্লেট পুরো সেদ্ধ, খাওয়ার জন্য৷ অন্য প্লেট হাফ কুকড, যা পরিবেশন করলে দেখতে ভালো লাগে৷ রান্নার ক্লোজআপ শট নেওয়ার জন্য বোতলে করে রোগান স্প্রে রাখা থাকে৷ ওটা স্প্রে করে ছবি তোলা হয়৷ শ্যুটিংয়ের আগে নায়ক-নায়িকা যেমন মেকআপ করেন, সেরকমই!

পরের খবর

Entertainmentসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল