স্নেহাশিস নিয়োগী
করোনা আবহে গত বছর ১২ নভেম্বরে সমীক্ষার আওতায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এ রাজ্যে তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণিতে যথাক্রমে ৩৮ ও ৩৩ শতাংশ পড়ুয়ার বাড়িতে অনলাইন পাঠ-প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার মতো কোনও ডিভাইস অর্থাৎ মোবাইল (Mobile), ল্যাপটপই (Laptop) নেই। অষ্টম শ্রেণির ক্ষেত্রে এটা ৮৬ শতাংশ। আবার দশম শ্রেণির ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে এই অসুবিধা রয়েছে।
তবে করোনা অতিমারীর এই দুঃসময়টা পড়ুয়ারা বাড়িতে বাবা-মা, দাদু-ঠাকুমার সঙ্গে মোটামুটি আনন্দময় পরিবেশেই কাটিয়েছে। একই সঙ্গে একঘেয়েমি কাটাতে আঁকা, গান, যোগাভ্যাস, ইন্ডোর গেমসের (Indoor Games) পাশাপাশি অনেকে রান্না করাও শিখে ফেলেছে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। যা বেশ বিস্ময়কর বলেই মত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। বিভিন্ন ক্লাস হিসেবে এই বিষয়ে উৎসাহের তারতম্যও বেশ কৌতূহল তৈরি করেছে। তৃতীয় শ্রেণিতে এই শেখার ঝোঁক ৫৭ শতাংশ, পঞ্চমে ৬২, অষ্টমে ৩৬, আবার দশমে ৬২ শতাংশ।
গোটা দেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের সরকারি, সাহায্যপ্রাপ্ত, পোষিত এবং বেসরকারি স্কুলে চারটি শ্রেণির ভাষা, অঙ্ক এবং পরিবেশ বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা হয়েছিল। তাতে অবশ্য চারটি ক্লাসেই ৮০ শতাংশ পড়ুয়ার মান কমেছে। পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নয়। তবে জাতীয় গড়ের তুলনায় এ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার মানের নিরিখে বিভিন্ন শ্রেণি ও নানা বিষয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে। এমনকী আর্থ-সামাজিক ভাবে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া পরিবারের সন্তানেরাও নানা স্তরে সঠিক উত্তর লেখার ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরের চেয়ে বেশি পারদর্শী বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ জাতির পাশাপাশি তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির পরিবারের সন্তানদেরও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে সাফল্যের হার ইতিবাচক।
রাজ্য সিলেবাস কমিটির (State Syllabus Committee) চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারের কথায়, ''প্রাপ্তবয়স্করা অনলাইনে পড়াশোনা ও পরীক্ষার ক্ষেত্রে সড়গড় হলেও স্কুল পড়ুয়াদের কাছে যন্ত্রের মাধ্যমে পাঠদান মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা ক্লাসরুমেই স্বচ্ছন্দ। এই সমীক্ষা আবারও দেখাল, পশ্চিমবঙ্গে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ছে, এই অভিযোগ সারবত্তাহীন। পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাঙ্গনে গিয়ে ভালো ফল করাও আমাদের খুবই আশ্বস্ত করবে।'' স্কুল ও কলেজ পড়ুয়াদের পড়াশোনার ধরন বিষয়ে ইচ্ছার তারতম্যের বিষয়ে শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের বক্তব্য, ''স্কুল-কলেজে গিয়ে সশরীরে পড়াশোনা করাটাই স্বাভাবিক বিষয়। শিক্ষালয়ে শিক্ষক ও পড়ুয়ার মধ্যে আদানপ্রদানে শেখাটাই অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বেশি বুদ্ধিমান। তারা কেরিয়ার ও বেশি নম্বরের আশায় অনলাইনে পড়াশোনা ও পরীক্ষা চায়। তবে এই 'অসুস্থ' তফাৎটা মোটেই কাম্য নয়।''