সাবেরী গুপ্ত
পরীক্ষায় মোটের উপর পাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। রবিবার রাজ্যে টেট মিটেছে নির্বিঘ্নে। তারই সঙ্গে নতুন প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে এই পরীক্ষা। প্রশ্নটা হলো - হলে ঢোকার আগে বহু মহিলা পরীক্ষার্থীকে শাঁখা-পলা খুলতে হয়েছে বলে যে বিতর্ক বেধেছে, তার গোড়ায় গলদ নেই তো? শাঁখা-পলার নেপথ্যে শুধুই বিশ্বাস। যে বিশ্বাস থেকে অনেক পরীক্ষার্থীই শাঁখা-পলা খুলতে গিয়ে স্বামীর মঙ্গল-অমঙ্গলের চিন্তায় পড়ে যান। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আপত্তি তোলেন সঙ্গে যাওয়া বাড়ির লোকও। কিন্তু মহিলা-পুরুষের সমানাধিকার, সাম্য নিয়ে যখন লড়াই, তখন এমন সব ভাবনা কি প্রাসঙ্গিক? ফিরে দেখা যাক শাঁখা-পলা পরার তথাকথিত কারণগুলির দিকে। পুরাণ মতে, মহাভারতের সময়ে শাঁখার ব্যবহার শুরু। শঙ্খাসুর নামে এক অত্যাচারী অসুরকে বশে আনতে না পেরে দেবতারা বিষ্ণুর শরণ নেন। বিষ্ণু শঙ্খাসুরকে বধ করেন। কিন্তু অসুরের স্ত্রী স্বামীকে ফিরে পেতে বিষ্ণুর উদ্দেশে ধ্যানে বসেন। তাঁর মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে না পেরে শঙ্খাসুরের হাড়গোড় দিয়ে বানানো শাঁখা তুলসীকে দেন বিষ্ণু। স্বামীর মঙ্গলকামনায় শাঁখা পরার সেই শুরু। কেউ বলেন, হিন্দুত্বে রাক্ষস বিবাহ মতে শাঁখা-পলার প্রচলন। এতে মহিলাদের জোর করে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে বিয়ে করা হতো। বন্দিত্বের প্রতীক হিসাবে শুরু হয় শাঁখা পরা। যাতে গোত্রান্তরেরও ইঙ্গিত লুকিয়ে থাকে। আবার কারও মতে, শাঁখা-পলা যেহেতু সহজে ভেঙে যায়, তাই তা পরিয়ে মেয়েদের শান্তশিষ্ট হতে একপ্রকার বাধ্য করা হয়। বোঝা যায়, সব অর্থেই মহিলাদের নানা নিয়ম, নিগড়ে বাঁধতেই শাঁখা-পলা।
রবিবারের টেটে মোবাইল, ঘড়ি থেকে শুরু করে কোনও ইলেকট্রনিক গ্যাজেট যে নিয়ে যাওয়া যাবে না, তা আগেই জানিয়েছিল পর্ষদ। জানানো হয়, কোনও ধরনের গয়না গায়ে রাখা যাবে না। স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু পরীক্ষার স্বার্থে, নকল রুখতেই এই ব্যবস্থা। সেই সূত্রেই শাঁখা-পলা খোলা, কোথাও কোথাও তা খুলতে না পারায় ভাঙানো হয় বলে খবর। যা নিয়ে বাধে বিতর্ক। পর্ষদের সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচি রবিবারই বলেন, পরীক্ষার দিনে এ নিয়ে এত বিতর্কের কী আছে? পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী এ প্রসঙ্গে বলেন, 'মহাভারতে একবার কর্ণের সঙ্গে অশ্বত্থামার যুদ্ধ বাধে। দ্রোণাচার্যের পুত্র অশ্বত্থামা ব্রাহ্মণ। তাঁকে কর্ণ বলেন - ব্রাহ্মণ বলে তোমাকে ছেড়ে দিলাম। অশ্বত্থামা তখন নিজের উপবীত নামিয়ে রেখে কর্ণকে যুদ্ধে আহ্বান জানান। অনেক ব্রাহ্মণ যে মনে করেন, উপবীত খোলা যায় না, সেই ধারণা ঠিক নয়। কোথাও যদি নিয়ম হয় যে গয়না পরে ঢোকা যাবে না, মানতে আপত্তি কোথায়?'
সাহিত্যিক বাণী বসু ও সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই মতের পন্থী। বাণী বলেন, 'আমি কুসংস্কারের বিরোধী। এগুলো কুসংস্কার। হাসপাতালে অপারেশনের সময়ে তো এ সবই খুলে রাখতে হয়। তাতে আপত্তি না থাকলে এখানে সমস্যা কোথায়?' সঙ্গীতা তুলছেন বোরখার প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, 'শাঁখা-পলা হোক বা বোরখা - সবই কুসংস্কার। স্বচ্ছতার স্বার্থে শাঁখা-পলা আটকালে বোরখাও আটকাতে হবে। আর নিয়ম তো মানাই উচিত।' পর্ষদ-সভাপতি গৌতম পাল সোমবার বলেন, 'এখন যে কোনও পরীক্ষাতেই ইলেকট্রনিক গ্যাজেট নিয়ে বা গয়না পরে ঢোকা নিষিদ্ধ। তাতে মেটাল ডিটেক্টরে মোবাইল বা চিপের উপস্থিতি বুঝতে বিভ্রান্তি হতে পারে। কিন্তু কোনও পোশাকে এমন বাধা নেই।' হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টে সপ্তপদী বা সাতপাকের উল্লেখ থাকলেও শাঁখা-পলা-সিঁদুরের কথা নেই। আইনজীবী এক্রামুল বারির মতে, এ নিয়ে কেউ মামলা করলেও তা হয়তো খুব জোরালো হবে না।
পরীক্ষায় মোটের উপর পাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। রবিবার রাজ্যে টেট মিটেছে নির্বিঘ্নে। তারই সঙ্গে নতুন প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে এই পরীক্ষা। প্রশ্নটা হলো - হলে ঢোকার আগে বহু মহিলা পরীক্ষার্থীকে শাঁখা-পলা খুলতে হয়েছে বলে যে বিতর্ক বেধেছে, তার গোড়ায় গলদ নেই তো? শাঁখা-পলার নেপথ্যে শুধুই বিশ্বাস। যে বিশ্বাস থেকে অনেক পরীক্ষার্থীই শাঁখা-পলা খুলতে গিয়ে স্বামীর মঙ্গল-অমঙ্গলের চিন্তায় পড়ে যান। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আপত্তি তোলেন সঙ্গে যাওয়া বাড়ির লোকও। কিন্তু মহিলা-পুরুষের সমানাধিকার, সাম্য নিয়ে যখন লড়াই, তখন এমন সব ভাবনা কি প্রাসঙ্গিক? ফিরে দেখা যাক শাঁখা-পলা পরার তথাকথিত কারণগুলির দিকে। পুরাণ মতে, মহাভারতের সময়ে শাঁখার ব্যবহার শুরু। শঙ্খাসুর নামে এক অত্যাচারী অসুরকে বশে আনতে না পেরে দেবতারা বিষ্ণুর শরণ নেন। বিষ্ণু শঙ্খাসুরকে বধ করেন। কিন্তু অসুরের স্ত্রী স্বামীকে ফিরে পেতে বিষ্ণুর উদ্দেশে ধ্যানে বসেন। তাঁর মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে না পেরে শঙ্খাসুরের হাড়গোড় দিয়ে বানানো শাঁখা তুলসীকে দেন বিষ্ণু। স্বামীর মঙ্গলকামনায় শাঁখা পরার সেই শুরু।
রবিবারের টেটে মোবাইল, ঘড়ি থেকে শুরু করে কোনও ইলেকট্রনিক গ্যাজেট যে নিয়ে যাওয়া যাবে না, তা আগেই জানিয়েছিল পর্ষদ। জানানো হয়, কোনও ধরনের গয়না গায়ে রাখা যাবে না। স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু পরীক্ষার স্বার্থে, নকল রুখতেই এই ব্যবস্থা। সেই সূত্রেই শাঁখা-পলা খোলা, কোথাও কোথাও তা খুলতে না পারায় ভাঙানো হয় বলে খবর। যা নিয়ে বাধে বিতর্ক। পর্ষদের সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচি রবিবারই বলেন, পরীক্ষার দিনে এ নিয়ে এত বিতর্কের কী আছে? পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী এ প্রসঙ্গে বলেন, 'মহাভারতে একবার কর্ণের সঙ্গে অশ্বত্থামার যুদ্ধ বাধে। দ্রোণাচার্যের পুত্র অশ্বত্থামা ব্রাহ্মণ। তাঁকে কর্ণ বলেন - ব্রাহ্মণ বলে তোমাকে ছেড়ে দিলাম। অশ্বত্থামা তখন নিজের উপবীত নামিয়ে রেখে কর্ণকে যুদ্ধে আহ্বান জানান। অনেক ব্রাহ্মণ যে মনে করেন, উপবীত খোলা যায় না, সেই ধারণা ঠিক নয়। কোথাও যদি নিয়ম হয় যে গয়না পরে ঢোকা যাবে না, মানতে আপত্তি কোথায়?'
সাহিত্যিক বাণী বসু ও সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই মতের পন্থী। বাণী বলেন, 'আমি কুসংস্কারের বিরোধী। এগুলো কুসংস্কার। হাসপাতালে অপারেশনের সময়ে তো এ সবই খুলে রাখতে হয়। তাতে আপত্তি না থাকলে এখানে সমস্যা কোথায়?' সঙ্গীতা তুলছেন বোরখার প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, 'শাঁখা-পলা হোক বা বোরখা - সবই কুসংস্কার। স্বচ্ছতার স্বার্থে শাঁখা-পলা আটকালে বোরখাও আটকাতে হবে। আর নিয়ম তো মানাই উচিত।' পর্ষদ-সভাপতি গৌতম পাল সোমবার বলেন, 'এখন যে কোনও পরীক্ষাতেই ইলেকট্রনিক গ্যাজেট নিয়ে বা গয়না পরে ঢোকা নিষিদ্ধ। তাতে মেটাল ডিটেক্টরে মোবাইল বা চিপের উপস্থিতি বুঝতে বিভ্রান্তি হতে পারে। কিন্তু কোনও পোশাকে এমন বাধা নেই।' হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টে সপ্তপদী বা সাতপাকের উল্লেখ থাকলেও শাঁখা-পলা-সিঁদুরের কথা নেই। আইনজীবী এক্রামুল বারির মতে, এ নিয়ে কেউ মামলা করলেও তা হয়তো খুব জোরালো হবে না।