অ্যাপশহর

সমানাধিকারের লক্ষ্যে অবশ্যই দৃঢ় পদক্ষেপ

এক সঙ্গে তিন তালাক বলে বিবাহ বিচ্ছেদ পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বৈরাচার, যা পুরুষ-মহিলারদের সাংবিধানিক সমানাধিকারের পরিপন্থী।

Ei Samay 23 Aug 2017, 10:24 am
এক সঙ্গে তিন তালাক বলে বিবাহ বিচ্ছেদ পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বৈরাচার, যা পুরুষ-মহিলারদের সাংবিধানিক সমানাধিকারের পরিপন্থী। লিখছেন অরুনাভ ঘোষ
EiSamay.Com post editorial on instant talaq unlawful
সমানাধিকারের লক্ষ্যে অবশ্যই দৃঢ় পদক্ষেপ


মুসলিম মহিলাদের বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য ১৯৩৯ সালেই তৈরি করা হয়েছিল ডিসোল্যুশন অফ মুসলিম ম্যারেজ অ্যাক্ট৷ সেই আইনটি আজও বহাল রয়েছে৷ কোনও মুসলিম মহিলা বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য এই আইন অনুযায়ীই আবেদন করতে পারেন৷ কিন্ত্ত , মুসলিম পুরুষ যদি বিবাহ বিচ্ছেদ চান , তবে তালাক -তালাক -তালাক বলেই বিবাহ বিচ্ছেদ করে চলছিলেন মুসলিম পার্সোনাল ল -এর নামে৷ সুপ্রিম কোর্ট মনে করছে , পুরুষ এবং নারীর ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে আইনে বৈষম্য কাজ করছে৷ এই পরিপ্রেক্ষিতেই তিন তালাক ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলেছে সুপ্রিম কোর্ট৷ আগামী ছ’মাসের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য নতুন একটি আইন প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ৷ ততদিন পর্যন্ত তিন তালাক ব্যবস্থার উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে দেশের শীর্ষ আদালত৷ সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী , এই অধিকার কোর্টের রয়েছে৷ আইনটি তৈরির জন্য ছ’মাস সময় দরকার কারণ , এই ধরনের অভিযোগগুলি কোথায় জানাতে হবে , পদ্ধতি কী হবে , কোন কোন বিষয় বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হিসাবে গণ্য করা হবে --এমন অনেকগুলি বিষয় ঠিক করতে হবে নতুন আইনে৷

সমস্যা হল , তিন তালাকের ব্যবহার যে ভাবে চলছে , তা কিন্ত্ত মুসলিম পার্সোনাল ল -এ বলা হয়নি৷ সেখানে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে , মহিলাদের তিনটি ঋতুচক্রে তালাক দিতে হবে৷ একই সঙ্গে সম্পর্কটি টিঁকিয়ে রাখা যায় কিনা , সে সম্পর্কে চেষ্টা করার কথাও বলা হয়েছে৷ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে , সম্প্ূর্ণ খামখেয়ালি ভাবে এক সঙ্গে তিন তালাক বলেই মুসলিম মহিলাদের পরিত্যাগ করা হয়৷ এটি পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বৈরাচার যা পুরুষ -মহিলাদের সাংবিধানিক সমানাধিকারের পরিপন্থী৷

তবে , বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে মুসলিমদের একাধিক বিয়ের মতো বিষয়গুলি মুসলিম সমাজের নেতারা যে ভাবে মহম্মদের বাণী বলে প্রচার করেন , তাতেও সমস্যা রয়েছে৷ বহু ক্ষেত্রেই তা বিকৃত করা হচ্ছে৷ অম্লান দত্তের মতো মানুষ মনে করতেন , মহম্মদের তিনটি সত্তা রয়েছে৷ আল্লাহর বাণী শুনতে উনি পাহাড়ে যেতেন৷ সেখানে উনি যা শুনতেন তা এসে প্রচার করতেন৷ মুখে মুখেই প্রচার হত সেই বাণী৷ সেটি ছিল ধর্মীয় নেতা হিসাবে তাঁর সত্তা৷ মহম্মদের দ্বিতীয় সত্তা ছিল , সামাজিক নেতা হিসাবে৷ সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি বেশ কিছু নিদান দিয়েছিলেন৷ অথচ , সেগুলির বিকৃতি ঘটানো হয়েছে পরবর্তী সময়ে৷ যেমন , সেই সময় আরব -সহ পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধবিগ্রহে বহু মানুষেরই প্রাণ যেত৷ বহু মহিলাই বিধবা হয়ে যেতেন৷ সে কারণে উনি চার জন মহিলার সঙ্গে যৌন সংসর্গ, বিয়ের কথা বলেছিলেন৷ তবে একই সঙ্গে তাঁদের সকলকেই সমান চোখে দেখা এবং তাঁদের সঙ্গে সমান ব্যবহারের কথাও বলেছিলেন৷ তবে , কোনও ভাবেই এটিকে উত্সাহিত করেননি৷ শুধু তাই নয় , বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে প্রাক্তন স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার কথাও বলেছিলেন৷ আবার যেমন বলেছিলেন , কাউকে অর্থ দিলে তার জন্য সুদ নেওয়া যাবে না৷ কারণ , উনি মনে করতেন আল্লাহর অর্থই তুমি তাকে দিচ্ছ৷ সুতরাং , তার জন্য বেশি পরিমাণ অর্থ তুমি নিতে পারো না৷

আবার যেমন মুসলিম ধর্মে সকলেই আল্লাহর অনুগামী৷ সবাই সমান৷ তাই কেউ চাকর নয়৷ তা থেকেই এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল৷ সেই সময়ে প্রায়ই যুদ্ধ লেগে থাকত৷ বিজয়ী রাজা এবং সোনাদের বিজিত রাজার রানিকে শারীরিক ভাবে ভোগ করার প্রবণতা ছিল৷ যা নিষিদ্ধ করেছিলেন মহম্মদ৷ এই নিদানগুলি ভালো ভাবে খতিয়ে দেখলে দেখা যায় , সাম্যবাদী ধারণার অনেক বার্তাই রয়েছে ইসলামে৷ মহম্মদের তৃতীয় সত্তা ছিল ট্রাইবাল নেতা হিসাবে৷ যে সময়ে মারপিট -সংঘর্ষ যেহেতু লেগেই থাকত , তাই উনি বলেছিলেন তোমাকে যদি কেউ আক্রমণ করে , তবে তাকে রেয়াত কোরো না৷ আত্মরক্ষার অধিকার তোমারও রয়েছে৷ তবে যদি সে তোমার সামনে নতি স্বীকার করে তবে তাকে ক্ষমা করতে হবে৷ শুধু তাই নয় , সে সময়ে ইউরোপ -সহ অন্যান্য এলাকার ভালো দিকগুলিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ইসলাম ধর্মে৷

পরের খবর

Editorialসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল