অ্যাপশহর

কলকাতা একদিন বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত হবে ?

প্রায়শই শুনতে পাই বিতর্ক, ‘কলকাতা কি নির্মল বাতাস আবার ফিরে পাবে ?

EiSamay.Com 3 Oct 2016, 2:27 pm
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সহায়তায় , উপযুক্ত অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেটি সম্ভব৷ লিখছেন জয়শ্রী রায়
EiSamay.Com one day kolkata will be free from air polution
কলকাতা একদিন বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত হবে ?


প্রায়শই শুনতে পাই বিতর্ক, ‘কলকাতা কি নির্মল বাতাস আবার ফিরে পাবে ?’ আমি খুব আশাবাদী এবং নিশ্চিত যে যদি আমরা চাই আমরা অবশ্যই পাব নির্মল বাতাস এই কলকাতাতেই৷ কলকাতার বাতাস উন্নত মানের করা বা না -করা আমাদের হাতেই৷ এই অসাধারণ সুযোগ হারাই কেন ? কলকাতার বাতাসকে আবার এমনই নির্মল করা সম্ভব যাতে করে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলেও ফুসফুস বা শ্বাসনালীর কোনও ক্ষতি হবে না , নিঃশ্বাস বন্ধ করা অবস্থা হবে না , বহু দূরের দৃশ্য দেখতে পাব ধোঁয়াশা লাগবে না , রাস্তায় আবার হাঁটতে পারব বিনা নাক -মুখ ঢেকেই ? শুনে মনে হচ্ছে এ কি স্বপ্নের কলকাতা ? না , স্বপ্ন নয় সত্যি এক ভবিষ্যতের সুলুক সন্ধান ! কিন্ত্ত সত্যিকে সাকার করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে ধারাবাহিক ভাবে৷ কী হবে সেই পদক্ষেপগুলো , তা ক্রমশ প্রকাশ্য৷ পদক্ষেপের আগে আমি একটু বলি কোথা থেকে পেলাম এমন দৃঢ় ভরসা৷

কোথা থেকে পেলাম এমন ভরসা ? আসলে আমার আশাবাদিতা আসে সারা পৃথিবীর দেশগুলোর স্বপ্ন সাকার করার উদাহরণ দেখে , গবেষণা করে , বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ করে , পরিসংখ্যান থেকে , নীতি নির্ধারণের ও কার্যে রূপায়িত করার ধারার পরিবর্তনের গতিপ্রকৃতি বিচার করে আর প্রযুক্তির উত্তরোত্তর অগ্রগতি দেখে৷ তা ছাড়া , আর একটা আশার কথা হল , প্রাথমিক বিজ্ঞানের ধারণা আমাদের বলে যে কলকাতার বায়ুদূষণ যে যে কারণে হচ্ছে সেগুলো খুব ক্ষণস্থায়ী৷ বলা যেতে পারে , এরাও জন্ম মৃত্যুর আবর্তে চলে৷ এরা খুবই ক্ষণস্থায়ী মানে , খুব বেশি হলে এক সন্তাহের মধ্যে এরা প্রকৃতির নিয়মেই চলে যায়৷ যেহেতু এরা দীর্ঘস্থায়ী নয় , এদের যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করি , বাতাস দূষণমুক্ত হয়ে যাবে৷ এটাই বড়ো ভরসার কথা এই সমস্যা সমাধানের পথে৷ সেই জন্যেই বলেছি আমরা যদি চাই সমস্যার সমাধান সম্ভব৷ এই বিজ্ঞানের ভিত্তিতেই তো সারা বিশ্বের সব দেশ তাদের শহরগুলোকে দূষণমুক্ত করেছে , আর সুস্থ ভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছে৷ তবে হ্যাঁ, ওই যে বললাম , চাই সদিচ্ছা আর লেগে থেকে সমস্যা সমাধানের পথগুলোকে কার্যকরী করা৷ কলকাতা যে দূষণমুক্ত নির্মল বাতাসের হতে পারে তার কিছু কিছু নিদর্শন আমরা হাতে কলমে সবাই পেয়েছি , কিন্ত্ত সে ভাবে কখনও ভাবিনি৷ কেন ভাবিনি কেউ উদাহরণ দিলেই বুঝবেন৷ আগে থেকে বলি , শেষ পর্যন্ত না পড়ে আমায় ভুল বুঝবেন না যেন৷ কেননা গবেষণার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার একটা বড়ো অবস্থান গবেষককে নিতে হয়৷

আসুন সেই উদাহরণের কথা বলি৷ কলকাতার একটা বন্ধের দিন যদি মনে করেন (জানি আমার মতো কেউ সেই কর্মনাশা দিনগুলোকে মনে করতে চান না ) তা হলে সব খারাপের মধ্যেও একটা ভালো শিক্ষণীয় দিকের কথা বলি৷ আমরা পরিসংখ্যান বিচার করে দেখেছি , শুধুমাত্র এক দিনের বন্ধও কলকাতাকে সু-উচ্চমানের নির্মল বাতাস উপহার দিতে পারে৷ সে এমনই সু-উচ্চমানের যা কিনা ভারতের জন্যে প্রযোজ্য বায়ুদূষণ মাপার যা যা সূচক আছে তাদের থেকেও অনেক ভালো মানের পরিবেশ যা কিনা বিশ্বমানের সর্বাপেক্ষা উত্কৃষ্ট মানের সমোপযোগী দূষণ মুক্ত৷ আমরা কী ভাবে জানলাম ? খুব সোজা , দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যে বিভিন্ন পরিমাপ যন্ত্রগুলো আছে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে আর যারা কিনা অন্য দিনগুলোকে অতিরিক্ত মাত্রার দূষণ এর পরিমাপ দেখায় , তারাই বন্ধের দিনের পরিমাপ দেখায় যে কলকাতার স্বাভাবিক দূষণমাত্রা বিশ্বের সর্বোত্তম সূচকেরও নীচে৷ বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে রোজ পরিমাপ ও গুণগত মানগুলো সর্বসাধারণের অগ্রগতির জন্যে প্রকাশ করাটা একটা বড়ো অগ্রগতিমূলক পদক্ষেপ নিশ্চয়ই৷

আমার এই ভূমিকা থেকে সিদ্ধান্তে আসবেন না যে আমি অর্থনৈতিক উন্নতির পরিপন্থী৷ বরঞ্চ সম্পূর্ণ উল্টো দিকের মেরুতে আমার অবস্থান৷ এই উদাহরণটা এই জন্যে দিলাম এই বোঝাতে যে আমরা যদি যে কারণে দূষণগুলো হয় তার যথার্থ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তা হলে নির্মল বাতাসের কলকাতার স্বপ্ন সাকার করতে পারব৷ নিয়ন্ত্রণ কী কী ভাবে সম্ভব ? নীতি আর প্রয়োগের মাধ্যমে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে৷ যারা পরিবেশের অর্থনীতি নিয়ে চর্চা করেন , এমনকী স্নাতকস্তরের পরিবেশের অর্থনীতির ছাত্ররাও জানেন যে যেহেতু শহরের বায়ুদূষণের স্থানীয় সমস্যা এবং সমাধানযোগ্য , তাই এমন আর্থিক নীতি নির্ধারণ করা যায় যার মাধ্যমে আর্থিক অগ্রগতি আর পরিবেশের সংরক্ষণের মাধ্যমে দুইয়েরই অগ্রগতি সম্ভব৷ কেননা পরিবেশের নিয়ন্ত্রণকে একটা নতুন অর্থনৈতিক ক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে৷ স্যুম্পিটার -এর চিন্তার অনুসরণে বলা হয় , বিগত শতক দেখেছে তথ্য প্রযুক্তির বৈপ্লবিক অগ্রগতির মাধ্যমে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন৷ বহনীয় -সহনীয় উন্নয়নের অর্থনীতির ভাষায় এই শতক দেখবে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন , তথ্য প্রযুক্তি আর পরিবেশের প্রযুক্তির মেলবন্ধনে বৈপ্লবিক উন্নয়নের হাত ধরে৷ যারা তথ্য প্রযুক্তিকে ঠেলে দিয়েছিলেন কর্মসংস্থান হারানোর ভয়ে তারা অগ্রগতির ধারায় পিছিয়ে পড়ছেন৷ তাই এখন যখন কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে নতুন উন্নয়নের খসড়া তৈরি হচ্ছে , পরিবেশের প্রযুক্তির অগ্রগতি একটা নতুন দিক খুলে দেবার সম্ভাবনা রাখে৷

কলকাতাকে দূষণমুক্ত দেখাটা আমার স্বপ্ন নয়৷ আমার কাছে এক বাস্তব সম্ভাবনা৷ কৌশলগত ভাবে নির্ধারিত পদক্ষেপের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সহায়তায় , উপযুক্ত অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমেই পৃথিবী জুড়ে বহু বহু দেশ তাদের শহরগুলোকে বায়ুদূষণমুক্ত করেছে৷ তার ফলে শহরে বিনিয়োগ বেড়েছে , উন্নয়ন বেড়েছে , শহরের বাসোপযোগিতার সূচক বেড়েছে , ফলে আরও বিনিয়োগ বেড়েছে৷ কলকাতার জন্যে এমন সুবর্ণ সুযোগ আবার আসবেনা , তাই এখনই কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে নির্মল আকাশ বাতাস তৈরির কাজকে অর্থনৈতিক বিনিয়োগের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করে এগোতে হবে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দেখেই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে পারি সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷

পরের খবর

Editorialসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল