Governor Of Andhra Pradesh : এক ডজন রাজ্যপাল নিয়োগ ও ‘খেলা হবে’র ইঙ্গিত
ফের জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। এবারের ঘটনা অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল নিয়োগ নিয়ে। রইল বিস্তারিত আলোচনা...
হাইলাইটস
- অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল নাজিরের নিয়োগ নিয়েই এই প্রশ্ন উঠেছে।
- যদিও জানুয়ারি মাসের 4 তারিখে বিচারপতি এস আব্দুল নাজিরের মেয়াদকাল শেষ হয়েছে।
- এই অবসর নেওয়ার মাসখানেকের ভেতরেই রাজ্যপাল হিসাবে তাঁর নিয়োগ বেশ ইন্টারেস্টিং।
প্রশান্ত ভট্টাচার্য
তিনি কি পুরস্কৃত হলেন? অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল নাজিরের (Abdul Nazir) রাজ্যপাল নিয়োগ নিয়েই এই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। মনে রাখতে হবে এই জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে বিচারপতি এস আব্দুল নাজিরের মেয়াদকাল শেষ হয়েছে, তিনি অবসর নিয়েছেন। এই অবসর নেওয়ার মাসখানেকের ভেতরেই রাজ্যপাল হিসাবে তাঁর নিয়োগ বেশ ইন্টারেস্টিং। তাঁর প্রতি মোদী সরকারের কৃতজ্ঞতারই প্রকাশ। কেন না, একটু যদি আমরা হিসেব করে দেখি তাহলে দেখব এই নাজির একাধিক ঐতিহাসিক মামলার বিচারপতি ছিলেন। সবচেয়ে বড় মামলাটি হচ্ছে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ বিতর্কিত মামলা। এই মামলার যে বেঞ্চ হয়েছিল, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন বিচারপতি নাজির। সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) এই বেঞ্চ হিন্দু সংগঠনের পক্ষে রায় দিয়েছে। বিচারপতি নাজির স্বয়ং হিন্দু সংগঠনের পক্ষেই রায় দিয়েছিলেন। এখানে উল্লেখ্য, অযোধ্যার রাম মন্দিরের পক্ষে যে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রায় দিয়েছিল তার মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে অবসরের কিছুদিনের মধ্যেই রাজ্যসভায় মনোনীত সদস্য করা হয়েছে। ওই বেঞ্চের আরও এক বিচারপতি অশোক ভূষণকে ভারতের জাতীয় কোম্পানি আইন আপিল ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়েছে। হয়ত এগুলো সবই কাকতালীয়। কিন্তু খোঁচা থেকে যায়। আর নাজির মোদী সরকারের তিন তালাক নীতি নিয়ে মামলাতেও বিচারপতি ছিলেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হয়েও তিন তালাকের তিনি বিরোধিতা করেছিলেন। এ তো গেল ধর্মাধর্মর ব্যাপার। এর বাইরেও আছে।
মোদীর নোটবন্দি নিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা হয়েছিল, তাতে যে বেঞ্চ গঠিত হয়েছিল বিচারপতিদের নিয়ে সেখানেও ছিলেন নাজির। খেয়াল রাখবেন এই মামলায় মোদীকে স্বস্তি দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আমরা যদি একটা নিছক রাজনীতি না-ও বলি, তবু কোথাও যেন একটু খোঁচা থেকে যায়। কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র জয়রাম রমেশ সে কারণেই বিবৃতি দিয়েছেন, যাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) জন্য কাজ করেছেন তাঁদেরই রাজ্যপাল পদে নিয়োগ করে পুরস্কৃত করছে কেন্দ্রীয় সরকার। জয়রাম রমেশ না হয় কংগ্রেসের নেতা, এসব বলবেনই। কিন্তু আমার একটা পুরনো কথা মনে পড়ছে। BJP-র নেতা তথা প্রথিতযশা আইনজীবী প্রয়াত অরুণ জেটলি একসময় বলেছিলেন, "অবসরের পর নতুন পদ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বিচারপতিদের অবসরের আগের মামলাগুলোর রায়কে প্রভাবিত করে। এটা বিচারবিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে বিপজ্জনক।" অরুণ জেটলির তির ছিল কংগ্রেস সরকারকে লক্ষ্য করে।
আসলে রাজ্যপাল নিয়োগ কিংবা বদল প্রথামাফিক একটি প্রক্রিয়া হলেও বরাবরই এর সঙ্গে রাজনৈতিক অনুষঙ্গ জড়িয়ে থাকে। কংগ্রেস বা BJP সব আমলেই রাজ্যপাল নিয়োগের পেছনে এই রাজনীতির ছায়া কাজ করেছে। এই যে এক ডজন রাজ্যের রাজ্যপাল নিয়োগ করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (President Draupadi Murmu), তা-ও রাজনীতির মুক্ত নয়। বরং বলা যায় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে নজরে রেখে এই নিয়োগ ১০০ শতাংশই রাজনৈতিক। ফলে এই নিয়োগকে ঘিরে কিছু আলোচনা হচ্ছে এবং আলোড়ন উঠেছে।
শুধু নতুন নিয়োগই নয়, একাধিক ক্ষেত্রে রাজ্যপালের পদের রদবদলও করা হয়েছে। আমরা জানি যে, ২০২৩ সাল জুড়ে ছোট বড় রাজ্য বিলিয়ে ন'টি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন আছে। ভোটের ফলের পর এই রাজ্যগুলোর বিধায়কদের যে পাটিগণিত তৈরি হবে, তা নির্ণয় করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়েও রাজ্যপালের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেদিকে দৃষ্টি রেখেই পছন্দের ব্যক্তিকে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে বসানো হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। মনে রাখতে হবে, ছোট বড় মিলিয়ে যে ন’টি রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন হতে চলেছে তার মধ্যে প্রায় কোনওটিতেই BJP খুব সুবিধার জায়গায় নেই। আর যেহেতু গত কয়েকটি নির্বাচন থেকে আমাদের এই অভিজ্ঞতা যে, অমিত শাহরা বিধায়ক নির্বাচনে খরচ করার চেয়ে বিধায়ক কেনার ক্ষেত্রে অনেক বেশি বিনিয়োগ করে থাকেন। সেই কাজটা সম্পূর্ণ সমাধান করতে হলে রাজ্যপালের ভূমিকাটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দু'বছর আগে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কেশোয়ারি মধ্যরাতের পরে ফডনবিসকে মুখ্যমন্ত্রীর শপথবাক্য পড়িয়ে খেল দেখিয়েছিলেন।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাজ্যপাল নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানে একাধিক ক্ষমতা দেওয়া আছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, কেন্দ্র ইচ্ছে করলে রাজ্যপালের মেয়াদ শেষের আগেই তাঁকে বরখাস্ত করে নতুন রাজ্যপাল নিয়োগ করতে পারে। একই সঙ্গে পারে রাজ্যপালের মেয়াদের সময়সীমাও বাড়াতে। মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কেশোয়ারিকে যেমন মেয়াদ শেষের আগেই সরানো হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য নিয়োগগুলোর মধ্যে আমার কাছে বেশ মজার লেগেছে অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যপাল পদে নিয়ে আসা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার বিডি মিশ্রকে। চিনের লাগোয়া অরুণাচল প্রদেশের একটি আলাদা জিওপলিটিক্যাল ইম্পর্ট্যান্স আছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করেই একজন ব্রিগেডিয়ারকে নিয়ে আসা। একইসঙ্গে তাঁকে লাদাখের উপরাজ্যপালের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, লাদাখ নিয়েও চিনের সঙ্গে আমাদের কিছু সমস্যা রয়েছে।
সম্প্রতি সীমান্তে যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, সেক্ষেত্রে রাজ্যপালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলেই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজনকে লাদাখে গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মণিপুরের রাজ্যপাল ছিলেন না গণেশন। জগদীপ ধনখড়কে (Jagdeep Dhankhar) উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করে নিয়ে যাওয়ার পরে তিনি কিছুদিন পশ্চিমবাংলায় অস্থায়ী রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই গণেশনকে এবার মণিপুর থেকে সরিয়ে নাগাল্যান্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এগুলো খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় সেই অর্থে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, যে রাজ্যগুলোর রাজ্যপাল বদল হল তার মধ্যে নাগাল্যান্ড এবং মেঘালয়ে বিধানসভা ভোট হচ্ছে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি। তার আগেই রাজ্যপাল বদল।
এই দুই রাজ্যে BJP ক্ষমতায় আসার মতো জায়গায় নেই। আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে তাকে সম্পর্ক তৈরি করে টিকে থাকতে হয়। মেঘালয়ে তৃণমূল এই মুহূর্তে প্রধান বিরোধী দল এবং নির্বাচনে যথেষ্ট শক্তির পরিচয় দিচ্ছে। ফলে এই রাজ্যে বিহারে নীতীশকে বিরক্ত করার অন্যতম কারিগর ফাগু চৌহানকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি। এই দুই রাজ্যের ভোটের ফল বেরোবার পর অনেক পারমুটেশন কম্বিনেশন হবে। কোনও দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে কে সরকার গড়বে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্যপালের একটা ভূমিকা থাকে। সেইটা মাথায় রেখে মোদী সরকার রাজ্যপাল বদলে বিচক্ষণতা দেখাল। যেমন হিমাচল প্রদেশে রাজ্যপাল করে আনা হয়েছে এমন লোককে, যাঁকে দিয়ে অনেক কিছু খেলা করা যায়। মনে রাখতে হবে হিমাচল প্রদেশ BJP-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার (J. P. Nadda) হোমস্টেট। সর্বশেষ বিধানসভার নির্বাচনে এখানে BJP হেরেছে। কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করেছে। কিন্তু কংগ্রেস শাসিত হিমাচলে কংগ্রেসের মধ্যকার যে দ্বন্দ্ব তাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা নিচ্ছে BJP। সেই রাজ্যে রাজ্যপালকে দিয়ে কোনরকম প্রশাসনিক বাধা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এমন বদল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা।
বিহার নিয়েও BJP খুব একটা খুশিতে নেই। নীতীশ কুমার মোদীর হাত ছাড়ার পর যেভাবে তেজস্বীর হাত চেপে ধরেছেন, তাতে বিহারের রাজ্যপালকে দিয়ে কিছু খেলা খেলাতে চাইবে BJP। একই খেলা আছে ছত্তিশগড়ে। ঝাড়খণ্ড নিয়েও স্বস্তিতে নেই BJP। বর্তমানে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা যেখানে ক্ষমতায়, সেখানে রাজ্যপাল করে আনা হয়েছে এমন লোককে যাঁকে দিয়ে প্রয়োজনে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার ভিড় আলগা করা যায়। আরও এক বিতর্কিত ব্যাপার মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি। নিজেই সরে যেতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে (Narendra Modi) চিঠি দিয়েছিলেন। সেখানে রাজ্যপাল করে পাঠানো হয়েছে ঝাড়খণ্ডের বর্তমান রাজ্যপাল কে রমেশ ব্যাসকে। যিনি আবার বিজেপির টিকিটে ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুর থেকে সাতবার সাংসদ হয়েছিলেন। আর ঝাড়খণ্ডে আনা হয়েছে তামিলনাডুর BJP নেতা সি পি রাধাকৃষ্ণণকে। তবে সবটাই বিরোধীদের কোণঠাসা করার পরিকল্পনা নয়, বরং দলের গোষ্ঠী কোন্দলও চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন মোদী-শাহ।
যেমন গুলাবচাঁদ কাটারিয়ার কেস। তিনি এতদিন রাজস্থানের বিরোধী দলনেতা ছিলেন। এ বছর নভেম্বরে রাজস্থানে বিধানসভার ভোট। তার আগে বিরোধী দলনেতা কাটারিয়াকে রাজ্যপাল করে অসমে পাঠিয়ে BJP আসলে দলীয় কোন্দল থামানোর চেষ্টা করল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তিনি কি পুরস্কৃত হলেন? অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল নাজিরের (Abdul Nazir) রাজ্যপাল নিয়োগ নিয়েই এই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। মনে রাখতে হবে এই জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে বিচারপতি এস আব্দুল নাজিরের মেয়াদকাল শেষ হয়েছে, তিনি অবসর নিয়েছেন। এই অবসর নেওয়ার মাসখানেকের ভেতরেই রাজ্যপাল হিসাবে তাঁর নিয়োগ বেশ ইন্টারেস্টিং। তাঁর প্রতি মোদী সরকারের কৃতজ্ঞতারই প্রকাশ। কেন না, একটু যদি আমরা হিসেব করে দেখি তাহলে দেখব এই নাজির একাধিক ঐতিহাসিক মামলার বিচারপতি ছিলেন।
মোদীর নোটবন্দি নিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা হয়েছিল, তাতে যে বেঞ্চ গঠিত হয়েছিল বিচারপতিদের নিয়ে সেখানেও ছিলেন নাজির। খেয়াল রাখবেন এই মামলায় মোদীকে স্বস্তি দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আমরা যদি একটা নিছক রাজনীতি না-ও বলি, তবু কোথাও যেন একটু খোঁচা থেকে যায়। কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র জয়রাম রমেশ সে কারণেই বিবৃতি দিয়েছেন, যাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) জন্য কাজ করেছেন তাঁদেরই রাজ্যপাল পদে নিয়োগ করে পুরস্কৃত করছে কেন্দ্রীয় সরকার। জয়রাম রমেশ না হয় কংগ্রেসের নেতা, এসব বলবেনই। কিন্তু আমার একটা পুরনো কথা মনে পড়ছে। BJP-র নেতা তথা প্রথিতযশা আইনজীবী প্রয়াত অরুণ জেটলি একসময় বলেছিলেন, "অবসরের পর নতুন পদ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বিচারপতিদের অবসরের আগের মামলাগুলোর রায়কে প্রভাবিত করে। এটা বিচারবিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে বিপজ্জনক।" অরুণ জেটলির তির ছিল কংগ্রেস সরকারকে লক্ষ্য করে।
আসলে রাজ্যপাল নিয়োগ কিংবা বদল প্রথামাফিক একটি প্রক্রিয়া হলেও বরাবরই এর সঙ্গে রাজনৈতিক অনুষঙ্গ জড়িয়ে থাকে। কংগ্রেস বা BJP সব আমলেই রাজ্যপাল নিয়োগের পেছনে এই রাজনীতির ছায়া কাজ করেছে। এই যে এক ডজন রাজ্যের রাজ্যপাল নিয়োগ করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (President Draupadi Murmu), তা-ও রাজনীতির মুক্ত নয়। বরং বলা যায় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে নজরে রেখে এই নিয়োগ ১০০ শতাংশই রাজনৈতিক। ফলে এই নিয়োগকে ঘিরে কিছু আলোচনা হচ্ছে এবং আলোড়ন উঠেছে।
শুধু নতুন নিয়োগই নয়, একাধিক ক্ষেত্রে রাজ্যপালের পদের রদবদলও করা হয়েছে। আমরা জানি যে, ২০২৩ সাল জুড়ে ছোট বড় রাজ্য বিলিয়ে ন'টি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন আছে। ভোটের ফলের পর এই রাজ্যগুলোর বিধায়কদের যে পাটিগণিত তৈরি হবে, তা নির্ণয় করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়েও রাজ্যপালের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেদিকে দৃষ্টি রেখেই পছন্দের ব্যক্তিকে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে বসানো হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। মনে রাখতে হবে, ছোট বড় মিলিয়ে যে ন’টি রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন হতে চলেছে তার মধ্যে প্রায় কোনওটিতেই BJP খুব সুবিধার জায়গায় নেই। আর যেহেতু গত কয়েকটি নির্বাচন থেকে আমাদের এই অভিজ্ঞতা যে, অমিত শাহরা বিধায়ক নির্বাচনে খরচ করার চেয়ে বিধায়ক কেনার ক্ষেত্রে অনেক বেশি বিনিয়োগ করে থাকেন। সেই কাজটা সম্পূর্ণ সমাধান করতে হলে রাজ্যপালের ভূমিকাটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দু'বছর আগে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কেশোয়ারি মধ্যরাতের পরে ফডনবিসকে মুখ্যমন্ত্রীর শপথবাক্য পড়িয়ে খেল দেখিয়েছিলেন।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাজ্যপাল নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানে একাধিক ক্ষমতা দেওয়া আছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, কেন্দ্র ইচ্ছে করলে রাজ্যপালের মেয়াদ শেষের আগেই তাঁকে বরখাস্ত করে নতুন রাজ্যপাল নিয়োগ করতে পারে। একই সঙ্গে পারে রাজ্যপালের মেয়াদের সময়সীমাও বাড়াতে। মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কেশোয়ারিকে যেমন মেয়াদ শেষের আগেই সরানো হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য নিয়োগগুলোর মধ্যে আমার কাছে বেশ মজার লেগেছে অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যপাল পদে নিয়ে আসা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার বিডি মিশ্রকে। চিনের লাগোয়া অরুণাচল প্রদেশের একটি আলাদা জিওপলিটিক্যাল ইম্পর্ট্যান্স আছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করেই একজন ব্রিগেডিয়ারকে নিয়ে আসা। একইসঙ্গে তাঁকে লাদাখের উপরাজ্যপালের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, লাদাখ নিয়েও চিনের সঙ্গে আমাদের কিছু সমস্যা রয়েছে।
সম্প্রতি সীমান্তে যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, সেক্ষেত্রে রাজ্যপালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলেই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজনকে লাদাখে গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মণিপুরের রাজ্যপাল ছিলেন না গণেশন। জগদীপ ধনখড়কে (Jagdeep Dhankhar) উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করে নিয়ে যাওয়ার পরে তিনি কিছুদিন পশ্চিমবাংলায় অস্থায়ী রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই গণেশনকে এবার মণিপুর থেকে সরিয়ে নাগাল্যান্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এগুলো খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় সেই অর্থে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, যে রাজ্যগুলোর রাজ্যপাল বদল হল তার মধ্যে নাগাল্যান্ড এবং মেঘালয়ে বিধানসভা ভোট হচ্ছে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি। তার আগেই রাজ্যপাল বদল।
এই দুই রাজ্যে BJP ক্ষমতায় আসার মতো জায়গায় নেই। আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে তাকে সম্পর্ক তৈরি করে টিকে থাকতে হয়। মেঘালয়ে তৃণমূল এই মুহূর্তে প্রধান বিরোধী দল এবং নির্বাচনে যথেষ্ট শক্তির পরিচয় দিচ্ছে। ফলে এই রাজ্যে বিহারে নীতীশকে বিরক্ত করার অন্যতম কারিগর ফাগু চৌহানকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি। এই দুই রাজ্যের ভোটের ফল বেরোবার পর অনেক পারমুটেশন কম্বিনেশন হবে। কোনও দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে কে সরকার গড়বে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে রাজ্যপালের একটা ভূমিকা থাকে। সেইটা মাথায় রেখে মোদী সরকার রাজ্যপাল বদলে বিচক্ষণতা দেখাল। যেমন হিমাচল প্রদেশে রাজ্যপাল করে আনা হয়েছে এমন লোককে, যাঁকে দিয়ে অনেক কিছু খেলা করা যায়। মনে রাখতে হবে হিমাচল প্রদেশ BJP-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার (J. P. Nadda) হোমস্টেট। সর্বশেষ বিধানসভার নির্বাচনে এখানে BJP হেরেছে। কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করেছে। কিন্তু কংগ্রেস শাসিত হিমাচলে কংগ্রেসের মধ্যকার যে দ্বন্দ্ব তাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা নিচ্ছে BJP। সেই রাজ্যে রাজ্যপালকে দিয়ে কোনরকম প্রশাসনিক বাধা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এমন বদল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা।
বিহার নিয়েও BJP খুব একটা খুশিতে নেই। নীতীশ কুমার মোদীর হাত ছাড়ার পর যেভাবে তেজস্বীর হাত চেপে ধরেছেন, তাতে বিহারের রাজ্যপালকে দিয়ে কিছু খেলা খেলাতে চাইবে BJP। একই খেলা আছে ছত্তিশগড়ে। ঝাড়খণ্ড নিয়েও স্বস্তিতে নেই BJP। বর্তমানে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা যেখানে ক্ষমতায়, সেখানে রাজ্যপাল করে আনা হয়েছে এমন লোককে যাঁকে দিয়ে প্রয়োজনে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার ভিড় আলগা করা যায়। আরও এক বিতর্কিত ব্যাপার মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি। নিজেই সরে যেতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে (Narendra Modi) চিঠি দিয়েছিলেন। সেখানে রাজ্যপাল করে পাঠানো হয়েছে ঝাড়খণ্ডের বর্তমান রাজ্যপাল কে রমেশ ব্যাসকে। যিনি আবার বিজেপির টিকিটে ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুর থেকে সাতবার সাংসদ হয়েছিলেন। আর ঝাড়খণ্ডে আনা হয়েছে তামিলনাডুর BJP নেতা সি পি রাধাকৃষ্ণণকে। তবে সবটাই বিরোধীদের কোণঠাসা করার পরিকল্পনা নয়, বরং দলের গোষ্ঠী কোন্দলও চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন মোদী-শাহ।
যেমন গুলাবচাঁদ কাটারিয়ার কেস। তিনি এতদিন রাজস্থানের বিরোধী দলনেতা ছিলেন। এ বছর নভেম্বরে রাজস্থানে বিধানসভার ভোট। তার আগে বিরোধী দলনেতা কাটারিয়াকে রাজ্যপাল করে অসমে পাঠিয়ে BJP আসলে দলীয় কোন্দল থামানোর চেষ্টা করল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।