বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
দিব্যেন্দু পালিত আমার বন্ধু ছিলেন। এমনই বন্ধুত্ব যে বয়সের ব্যবধান সেই সখ্যে কোনও ছায়া ফেলতে পারেনি। শুধু যে তাঁর লেখা থেকে তিনটি ছবি করেছি সেই কারণেই নয়, তাঁর সঙ্গে আমার জীবনদৃষ্টি বিষয়েও একটি গভীর সাযুজ্য ছিল। যত কথা বলেছি আমরা, ভাবনা বিনিময় করেছি, দ্বিমত এবং একমত হয়েছি নানা বিষয়ে, সে সবের সালতামামি এ লেখার বিষয় নয়। বরং, বলা যেতে পারে খুব স্বল্প পরিসরে একটি রেট্রসপেক্টিভ। ফিরে দেখা। যিনি প্রয়াত, সেই ব্যক্তিকে তো বটেই, পাশাপাশি সেই মানুষটির অনুষঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি সময়কেও। দিব্যেন্দু পালিতের মধ্যে কী ভাবে আমি সেই সময়কে খুঁজতে চাইছি, তা বোঝানোর জন্য সংক্ষেপে দু’টি প্রসঙ্গ তুলব।
এক, ‘গৃহযুদ্ধ’ ছবির কাহিনিকার তিনি, এ কথা অনেকেই জানেন। যাঁরা জানেন না তা এই যে সেই ছবির প্রথম শটটি দিব্যেন্দুদার গড়িয়াহাটের ফ্ল্যাটেই তোলা। খোলা আকাশে নগরীর স্কাইলাইন থেকে ক্যামেরা ধীরে পিছিয়ে আসছে। এই শটটি তোলার জন্য দু’টি রাত ব্যর্থ প্রতীক্ষায় ছিলাম। শেষে তৃতীয় রাতের শেষে সকালবেলা ঠিকঠাক আলো পাওয়া গেল। ছবিও তোলা হল। শুটিংয়ের সাজসরঞ্জাম নিয়ে পরপর তিনরাত কী ভাবে তাঁকে বিড়ম্বিত করেছিলাম, সে কথা আজও ভুলিনি। দিব্যেন্দুদা অবশ্য হাসিমুখে সয়েছেন সেই অত্যাচার, বার বার চা দিয়েছেন নিশিযাপনের জন্যে, একবারও বুঝতে দেননি কতটা অসুবিধা সইতে হচ্ছে তাদের। এ কথা আজকাল শুনলে খুব অবিশ্বাস্য ঠেকে, কিন্তু যে সময়ে আমরা স্রেফ কবিতার জন্য অমরত্বকেও তুচ্ছ করতে চেয়েছিলাম, সেই সময়ের নিরিখে কিন্তু তা ততটা অস্বাভাবিক ছিল না। দিব্যেন্দু পালিত সেই শিল্পিত সময়কালেরই সার্থক প্রতিনিধি।
দুই, ‘সহযোদ্ধা’র মতো আশ্চর্য উপন্যাস এবং আরও নানা লেখায় যে ভাবে মধ্যবিত্ত জীবনের সংকটকে তুলে ধরেছিলেন, তাতে নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, তাঁর কলমে ছিল কালের আখর। বিশ শতকের শেষ দিকে নগরজীবনের ওঠাপড়াকে যে সব কথাকার খুব বিশ্বস্ত ভাবে ধরেছিলেন, দিব্যেন্দুদা সেই তালিকায় অগ্রগণ্য। মনে রাখা দরকার, কবিতাও ছিল তাঁর বিচরণের জায়গা, যদিও পরে গদ্যের চাপে তা কিঞ্চিৎ পিছু হঠতে বাধ্য হয়। প্রত্যয়ী কিন্তু নম্র, স্বল্পভাষী এবং গভীর সঞ্চারী এই লেখক থেকেই যাবেন আমাদের সঙ্গে। সহযোদ্ধা হয়ে।
দিব্যেন্দু পালিত আমার বন্ধু ছিলেন। এমনই বন্ধুত্ব যে বয়সের ব্যবধান সেই সখ্যে কোনও ছায়া ফেলতে পারেনি। শুধু যে তাঁর লেখা থেকে তিনটি ছবি করেছি সেই কারণেই নয়, তাঁর সঙ্গে আমার জীবনদৃষ্টি বিষয়েও একটি গভীর সাযুজ্য ছিল। যত কথা বলেছি আমরা, ভাবনা বিনিময় করেছি, দ্বিমত এবং একমত হয়েছি নানা বিষয়ে, সে সবের সালতামামি এ লেখার বিষয় নয়। বরং, বলা যেতে পারে খুব স্বল্প পরিসরে একটি রেট্রসপেক্টিভ। ফিরে দেখা। যিনি প্রয়াত, সেই ব্যক্তিকে তো বটেই, পাশাপাশি সেই মানুষটির অনুষঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি সময়কেও। দিব্যেন্দু পালিতের মধ্যে কী ভাবে আমি সেই সময়কে খুঁজতে চাইছি, তা বোঝানোর জন্য সংক্ষেপে দু’টি প্রসঙ্গ তুলব।
এক, ‘গৃহযুদ্ধ’ ছবির কাহিনিকার তিনি, এ কথা অনেকেই জানেন। যাঁরা জানেন না তা এই যে সেই ছবির প্রথম শটটি দিব্যেন্দুদার গড়িয়াহাটের ফ্ল্যাটেই তোলা। খোলা আকাশে নগরীর স্কাইলাইন থেকে ক্যামেরা ধীরে পিছিয়ে আসছে। এই শটটি তোলার জন্য দু’টি রাত ব্যর্থ প্রতীক্ষায় ছিলাম। শেষে তৃতীয় রাতের শেষে সকালবেলা ঠিকঠাক আলো পাওয়া গেল। ছবিও তোলা হল। শুটিংয়ের সাজসরঞ্জাম নিয়ে পরপর তিনরাত কী ভাবে তাঁকে বিড়ম্বিত করেছিলাম, সে কথা আজও ভুলিনি। দিব্যেন্দুদা অবশ্য হাসিমুখে সয়েছেন সেই অত্যাচার, বার বার চা দিয়েছেন নিশিযাপনের জন্যে, একবারও বুঝতে দেননি কতটা অসুবিধা সইতে হচ্ছে তাদের। এ কথা আজকাল শুনলে খুব অবিশ্বাস্য ঠেকে, কিন্তু যে সময়ে আমরা স্রেফ কবিতার জন্য অমরত্বকেও তুচ্ছ করতে চেয়েছিলাম, সেই সময়ের নিরিখে কিন্তু তা ততটা অস্বাভাবিক ছিল না। দিব্যেন্দু পালিত সেই শিল্পিত সময়কালেরই সার্থক প্রতিনিধি।
দুই, ‘সহযোদ্ধা’র মতো আশ্চর্য উপন্যাস এবং আরও নানা লেখায় যে ভাবে মধ্যবিত্ত জীবনের সংকটকে তুলে ধরেছিলেন, তাতে নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, তাঁর কলমে ছিল কালের আখর। বিশ শতকের শেষ দিকে নগরজীবনের ওঠাপড়াকে যে সব কথাকার খুব বিশ্বস্ত ভাবে ধরেছিলেন, দিব্যেন্দুদা সেই তালিকায় অগ্রগণ্য। মনে রাখা দরকার, কবিতাও ছিল তাঁর বিচরণের জায়গা, যদিও পরে গদ্যের চাপে তা কিঞ্চিৎ পিছু হঠতে বাধ্য হয়। প্রত্যয়ী কিন্তু নম্র, স্বল্পভাষী এবং গভীর সঞ্চারী এই লেখক থেকেই যাবেন আমাদের সঙ্গে। সহযোদ্ধা হয়ে।