শ্বৈতী দাস
অবশেষে অপেক্ষার অবসান। জগতের যাবতীয় অশুভশক্তিকে পরাজিত করে আশ্বিনের শারদপ্রাতে মর্ত্যলোকে আবির্ভূতা হলেন দেবী দূর্গা। মহালয়ার পুণ্য তিথিতে যখন গঙ্গার ঘাটে ঘাটে পিতৃতর্পণ, দেবীপক্ষের সূচনায় উৎসবের রোশনাইয়ে আলোকিত ত্রিভুবন, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী- তিথির পর তিথি এগোতে থাকে সর্বজনীন উৎসবের মহালগ্নের দিকে, ঠিক তখনই এসবের থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে হাজারো, লাখো দূর্গা ‘নষ্টমেয়ে’ হয়ে পড়ে থাকে নোংরা বিছানায় অথবা কোনও ঝাঁ-চকচকে হোটেলের ঘরে। আমার লেখনীর এইসব দূর্গারা দশভুজা নয়, ত্রিনয়নী নয়, অস্ত্র সজ্জায় সজ্জিতও নয়। আবহমান কাল ধরে আমার এই দূর্গারা অসহায়। ওরা সময়–অসময়-স্থান-কাল নির্বিশেষে অসুরের হাতে বধ হয়। দেবীপক্ষের উল্টোপুরানে রচিত হয় না কোনও আখ্যান। তৈরি হয় না কোনও খবর।
দেশ, সমাজ, রাজনীতি, লোকচক্ষু ভেদে এইসব দূর্গারা বহুরূপে বিরাজমানা, আরাধ্যা অবশ্যই নয়। মাটির নারী-শরীরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাঁকে নিজেদের ইচ্ছেমতো দেবত্ব চাপিয়ে আরাধনা করা যতই পুণ্যকর্ম হোক, রক্ত-মাংসের দূর্গারা চিরকালই ব্রাত্য থাকে সভ্যতা-প্রদীপের নীচের অন্ধকারে। যে রাস্তা চলে গেছে দৈনন্দিন গন্তব্য থেকে এই আমার- আপনার বাড়ির দিকে, সেই রাজপথে চোখ ধাঁধানো আলোর তলায় অথবা গ্রামেগঞ্জের অন্ধকার মেঠো পথকে শরীরি আবেদনে মোহময়ী করে তোলে এই দূর্গারা। কোনও নিখুঁত শৈল্পিক আঙ্গুলের ছোঁয়ায় রচিত হয়না এদের শরীর। উঁচু-নিচু মাংসপিণ্ডের কাঠামোর ওপর চামড়ায় মোড়া দূর্গারাই প্রতি রাতে নামে অসুরের বিকৃত যৌনক্ষুদার পাপসংহারে। এরাই খারাপ মেয়ে, পতিতা। শহুরে ভাষায় এরা যৌনকর্মী।
‘সভ্য’ সমাজে এরা অন্তেবাসী আগাছার মতো। কোথাও একটা আছে, তবু তাকে দেখেও দেখিনা। প্রশ্ন উঠতেই পারে, কেন আজ এই অপাংক্তেয়দের কথা বলছি? বলছি কারণ, এ পোড়া দেশে লক্ষ লক্ষ উমা শুধু মেয়ে হয়ে জন্মায়, দূর্গা-তেজে বেড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে; কিন্তু পণ্য হয়ে বিকিয়ে যায় কোনও এক পরিচিত স্রোতের অপরিচিত ঘূর্ণিতে। আদমসুমারিতে এদের গোনা হয় না, ভোটের বাজারে এরা অধিকারহীন, আর উৎসবে এরা অস্পৃশ্য। এরা ধর্ষিতা হলে মোমবাতি জ্বলে না। কারণ, পতিতার ধর্ষণ হয় না! যৌনরোগে মরলে কপালে লেখা বলে ধার্য হয়। তবে এদের নিয়ে ছবি তৈরি হলে কর মুকুব করে সরকার। পুরস্কার পায় নায়িকা। আরও রগরগে কোনও ইস্যু খোঁজে ডিরেক্টর। আর রক্তমাংসের দূর্গারা তখনও বাড়ি থেকে বহু দূরে হারিয়ে যায় বর্ডার পেরিয়ে নতুন মানচিত্রে, প্রথম রাতে দালাল, দ্বিতীয় রাতে খদ্দের, তারপর আরও আরও খদ্দের। রক্তাক্ত যন্ত্রণায় শরীরে, মনে সেঁটে যায় পতিতার সার্টিফিকেট।
ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫ সালে সারা ভারত জুড়ে অপহরণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে যেখানে এই সংখ্যাটি ছিল ৫৭,৩১১, সেখানে ২০১৫ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫৯,২৭৭টি। ২০১৬-তে যে সেই ছবি বদলায়নি, তা বলাই বাহুল্য। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, অপহরনের শিকার ৫০ শতাংশই শিশু এবং অপহৃত ৯০ শতাংশ মেয়েকেই (শিশুদেরও) বলি দেওয়া হয় শরীর বেচার যূপকাষ্ঠে। আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহার থেকেই সবথেকে বেশী অপহরণের ঘটনা ঘটে। প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, এই সব রাজ্যে প্রশাসনের ভূমিকা কি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রশাসনের গা-জোয়ারিতেই বহু মেয়ে হারিয়ে যায় এবং আমাদের ধারণা, যে মেয়েগুলি হারিয়ে যায়, তারা আর ফিরে আসতে পারে না। এমনই সব উদাসীনতায় চাপা পড়ে যায় নিরুদ্দেশদের ফিরে আসার আর্তিও।
ইদানিং, আমাদের দেশের জনগন যতটা সোচ্চার হয়েছে বিশেষ এক চতুষ্পদদের বাঁচানোর জন্য, তার সিকিভাগও দেখা যায় না মানব-শিশু পাচারের প্রশ্নে। অথচ দিনের ফুটফুটে আলোতেও শিকার পর্ব চলে নির্বিচারে। তাই পাড়ার দোকান, একটু দূরে স্কুল অথবা টিউশন যাওয়ার রাস্তায় অপহরণের জাল বিছিয়ে অথবা ভাত না পাওয়া মেয়েটার চোখে টাকা কামানোর স্বপ্ন বুনতে খামতি ঘটে না অসুরদের বা আড়কাঠিদের। বাড়ি থেকে বেরোতে মা-বাবার ‘দুগ্গা দুগ্গা’ প্রার্থনা ডাহা ফেল করে এইসব অসুরদের থাবায়। সমাজের অমোঘ নিয়মে এইসব আড়কাঠিরাও বলবান হয় এই ধারনায় যে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে হারানো মেয়েটি চিরতরে হারিয়ে গেলেও পরিচিত হবে ‘পতিতা’ নামে, ফিরে এলেও তাই। কারণ, সমাজ কোনোদিন এই ভেবে হিসাব কষতে বসে না, যে মেয়েটি পতিতা হল, তার পতন ঘটাল কে? যে পতন ঘটাল সে পতিত নয় কেন? এরও উত্তর খুব সোজা। কারণ, আমাদের সমাজে একটি মেয়ের অস্তিত্ব ‘যোনি-সর্বস্ব’ মাংস পিণ্ড ছাড়া আর বেশী কিছু নয়। তাই যার ‘সতীত্ব’ ঘুচেছে, তাকে এক ঘরে করাটাই শ্রেষ্ঠ কর্তব্য। অতএব, দূর্গারা হারাতে থাকে লোকচক্ষুর সামনে, আর ঠিকানা হয় পতিতালয়ে। ‘এমনটা তো হয়েই থাকে’।
এইভাবে হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য দুর্গারা কোনওদিন বিচার পায় না। যারা ফিরে আসে তারা প্রতিদিন ধর্ষিত হয় সমাজের চোখরাঙানিতে। আর যারা হারিয়ে গেল, যাদের ঠিকানা নেই সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ,নক্ষত্র কারোর কাছেই, তারা বেঁচে থাকে কোনওমতে। দুগ্গা দুগ্গা করে। এমনকি, মা-বাবাও সন্তানের বিচ্ছেদকে মেনে নেয় দুগ্গা দুগ্গা করেই। পঞ্চভূত একাকার হয় হারিয়ে যাওয়া আর হারিয়ে ফেলা দুই মেরুর দুগ্গা দুগ্গা
হাহাকারে।
এ ধরায় যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা-কে থোড়াই কেয়ার করে পুণ্যের ঝুলি যোনীতে চাপিয়ে যারা জন্মেছে, তারা হারিয়ে যাচ্ছে, ধর্ষিত হচ্ছে। তবু কালের নিয়মে দুগ্গা দুগ্গা করে মেয়েরা পথে বেরোয়, বেরোবে, হারাচ্ছে, হারাবে। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের অস্ত্রদানের আশায় রাতপরী দুর্গারা চোখে আগুন জ্বালবে, যদি একবারও অসুর বধ করতে পারে! অবশ্যই সে অস্ত্র প্রশাসন, জনগন আর একটু সদিচ্ছা। ঢাক-বাদ্যি-কাসর নয়, বরণডালার উপচে পড়া ফুল-সন্দেশ নয়। শুধু একবার সমাজের স্বীকৃতিতে মাথা উঁচু করে হারিয়ে যাওয়া বাড়ির চৌকাঠে পা রাখার স্বপ্ন দেখে হারিয়ে যাওয়া দূর্গারা। সেই স্বপ্ন যেন সত্যি হয় মা গো। দুগ্গা দুগ্গা।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান। জগতের যাবতীয় অশুভশক্তিকে পরাজিত করে আশ্বিনের শারদপ্রাতে মর্ত্যলোকে আবির্ভূতা হলেন দেবী দূর্গা। মহালয়ার পুণ্য তিথিতে যখন গঙ্গার ঘাটে ঘাটে পিতৃতর্পণ, দেবীপক্ষের সূচনায় উৎসবের রোশনাইয়ে আলোকিত ত্রিভুবন, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী- তিথির পর তিথি এগোতে থাকে সর্বজনীন উৎসবের মহালগ্নের দিকে, ঠিক তখনই এসবের থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে হাজারো, লাখো দূর্গা ‘নষ্টমেয়ে’ হয়ে পড়ে থাকে নোংরা বিছানায় অথবা কোনও ঝাঁ-চকচকে হোটেলের ঘরে। আমার লেখনীর এইসব দূর্গারা দশভুজা নয়, ত্রিনয়নী নয়, অস্ত্র সজ্জায় সজ্জিতও নয়। আবহমান কাল ধরে আমার এই দূর্গারা অসহায়। ওরা সময়–অসময়-স্থান-কাল নির্বিশেষে অসুরের হাতে বধ হয়। দেবীপক্ষের উল্টোপুরানে রচিত হয় না কোনও আখ্যান। তৈরি হয় না কোনও খবর।
দেশ, সমাজ, রাজনীতি, লোকচক্ষু ভেদে এইসব দূর্গারা বহুরূপে বিরাজমানা, আরাধ্যা অবশ্যই নয়। মাটির নারী-শরীরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাঁকে নিজেদের ইচ্ছেমতো দেবত্ব চাপিয়ে আরাধনা করা যতই পুণ্যকর্ম হোক, রক্ত-মাংসের দূর্গারা চিরকালই ব্রাত্য থাকে সভ্যতা-প্রদীপের নীচের অন্ধকারে। যে রাস্তা চলে গেছে দৈনন্দিন গন্তব্য থেকে এই আমার- আপনার বাড়ির দিকে, সেই রাজপথে চোখ ধাঁধানো আলোর তলায় অথবা গ্রামেগঞ্জের অন্ধকার মেঠো পথকে শরীরি আবেদনে মোহময়ী করে তোলে এই দূর্গারা। কোনও নিখুঁত শৈল্পিক আঙ্গুলের ছোঁয়ায় রচিত হয়না এদের শরীর। উঁচু-নিচু মাংসপিণ্ডের কাঠামোর ওপর চামড়ায় মোড়া দূর্গারাই প্রতি রাতে নামে অসুরের বিকৃত যৌনক্ষুদার পাপসংহারে। এরাই খারাপ মেয়ে, পতিতা। শহুরে ভাষায় এরা যৌনকর্মী।
‘সভ্য’ সমাজে এরা অন্তেবাসী আগাছার মতো। কোথাও একটা আছে, তবু তাকে দেখেও দেখিনা। প্রশ্ন উঠতেই পারে, কেন আজ এই অপাংক্তেয়দের কথা বলছি? বলছি কারণ, এ পোড়া দেশে লক্ষ লক্ষ উমা শুধু মেয়ে হয়ে জন্মায়, দূর্গা-তেজে বেড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে; কিন্তু পণ্য হয়ে বিকিয়ে যায় কোনও এক পরিচিত স্রোতের অপরিচিত ঘূর্ণিতে। আদমসুমারিতে এদের গোনা হয় না, ভোটের বাজারে এরা অধিকারহীন, আর উৎসবে এরা অস্পৃশ্য। এরা ধর্ষিতা হলে মোমবাতি জ্বলে না। কারণ, পতিতার ধর্ষণ হয় না! যৌনরোগে মরলে কপালে লেখা বলে ধার্য হয়। তবে এদের নিয়ে ছবি তৈরি হলে কর মুকুব করে সরকার। পুরস্কার পায় নায়িকা। আরও রগরগে কোনও ইস্যু খোঁজে ডিরেক্টর। আর রক্তমাংসের দূর্গারা তখনও বাড়ি থেকে বহু দূরে হারিয়ে যায় বর্ডার পেরিয়ে নতুন মানচিত্রে, প্রথম রাতে দালাল, দ্বিতীয় রাতে খদ্দের, তারপর আরও আরও খদ্দের। রক্তাক্ত যন্ত্রণায় শরীরে, মনে সেঁটে যায় পতিতার সার্টিফিকেট।
ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫ সালে সারা ভারত জুড়ে অপহরণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে যেখানে এই সংখ্যাটি ছিল ৫৭,৩১১, সেখানে ২০১৫ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫৯,২৭৭টি। ২০১৬-তে যে সেই ছবি বদলায়নি, তা বলাই বাহুল্য। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, অপহরনের শিকার ৫০ শতাংশই শিশু এবং অপহৃত ৯০ শতাংশ মেয়েকেই (শিশুদেরও) বলি দেওয়া হয় শরীর বেচার যূপকাষ্ঠে। আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহার থেকেই সবথেকে বেশী অপহরণের ঘটনা ঘটে। প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, এই সব রাজ্যে প্রশাসনের ভূমিকা কি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রশাসনের গা-জোয়ারিতেই বহু মেয়ে হারিয়ে যায় এবং আমাদের ধারণা, যে মেয়েগুলি হারিয়ে যায়, তারা আর ফিরে আসতে পারে না। এমনই সব উদাসীনতায় চাপা পড়ে যায় নিরুদ্দেশদের ফিরে আসার আর্তিও।
ইদানিং, আমাদের দেশের জনগন যতটা সোচ্চার হয়েছে বিশেষ এক চতুষ্পদদের বাঁচানোর জন্য, তার সিকিভাগও দেখা যায় না মানব-শিশু পাচারের প্রশ্নে। অথচ দিনের ফুটফুটে আলোতেও শিকার পর্ব চলে নির্বিচারে। তাই পাড়ার দোকান, একটু দূরে স্কুল অথবা টিউশন যাওয়ার রাস্তায় অপহরণের জাল বিছিয়ে অথবা ভাত না পাওয়া মেয়েটার চোখে টাকা কামানোর স্বপ্ন বুনতে খামতি ঘটে না অসুরদের বা আড়কাঠিদের। বাড়ি থেকে বেরোতে মা-বাবার ‘দুগ্গা দুগ্গা’ প্রার্থনা ডাহা ফেল করে এইসব অসুরদের থাবায়। সমাজের অমোঘ নিয়মে এইসব আড়কাঠিরাও বলবান হয় এই ধারনায় যে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে হারানো মেয়েটি চিরতরে হারিয়ে গেলেও পরিচিত হবে ‘পতিতা’ নামে, ফিরে এলেও তাই। কারণ, সমাজ কোনোদিন এই ভেবে হিসাব কষতে বসে না, যে মেয়েটি পতিতা হল, তার পতন ঘটাল কে? যে পতন ঘটাল সে পতিত নয় কেন? এরও উত্তর খুব সোজা। কারণ, আমাদের সমাজে একটি মেয়ের অস্তিত্ব ‘যোনি-সর্বস্ব’ মাংস পিণ্ড ছাড়া আর বেশী কিছু নয়। তাই যার ‘সতীত্ব’ ঘুচেছে, তাকে এক ঘরে করাটাই শ্রেষ্ঠ কর্তব্য। অতএব, দূর্গারা হারাতে থাকে লোকচক্ষুর সামনে, আর ঠিকানা হয় পতিতালয়ে। ‘এমনটা তো হয়েই থাকে’।
এইভাবে হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য দুর্গারা কোনওদিন বিচার পায় না। যারা ফিরে আসে তারা প্রতিদিন ধর্ষিত হয় সমাজের চোখরাঙানিতে। আর যারা হারিয়ে গেল, যাদের ঠিকানা নেই সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ,নক্ষত্র কারোর কাছেই, তারা বেঁচে থাকে কোনওমতে। দুগ্গা দুগ্গা করে। এমনকি, মা-বাবাও সন্তানের বিচ্ছেদকে মেনে নেয় দুগ্গা দুগ্গা করেই। পঞ্চভূত একাকার হয় হারিয়ে যাওয়া আর হারিয়ে ফেলা দুই মেরুর দুগ্গা দুগ্গা
হাহাকারে।
এ ধরায় যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা-কে থোড়াই কেয়ার করে পুণ্যের ঝুলি যোনীতে চাপিয়ে যারা জন্মেছে, তারা হারিয়ে যাচ্ছে, ধর্ষিত হচ্ছে। তবু কালের নিয়মে দুগ্গা দুগ্গা করে মেয়েরা পথে বেরোয়, বেরোবে, হারাচ্ছে, হারাবে। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের অস্ত্রদানের আশায় রাতপরী দুর্গারা চোখে আগুন জ্বালবে, যদি একবারও অসুর বধ করতে পারে! অবশ্যই সে অস্ত্র প্রশাসন, জনগন আর একটু সদিচ্ছা। ঢাক-বাদ্যি-কাসর নয়, বরণডালার উপচে পড়া ফুল-সন্দেশ নয়। শুধু একবার সমাজের স্বীকৃতিতে মাথা উঁচু করে হারিয়ে যাওয়া বাড়ির চৌকাঠে পা রাখার স্বপ্ন দেখে হারিয়ে যাওয়া দূর্গারা। সেই স্বপ্ন যেন সত্যি হয় মা গো। দুগ্গা দুগ্গা।