বর্ষা নাগ ভৌমিক
পুজো পুজো রোদ্দুর বাইরে। ডাইনিং টেবিলের এক কোনায় সেই রোদের-ই এক চিলতে। মা আসছেন। সত্যি মা দুর্গা এলে বড্ড আনন্দ হয় তিতলির।
এক ঢাল চুল মায়ের, তিন তিনটে চোখ, পরনে বেনারসী শাড়ী। রাজার মেয়ে তো! গিরি রাজা আনন্দে আত্মহারা, মেয়ে আসছে। আর তিতলি-ও, খুব খুশি। আনন্দ যেন তার আর ধরে না। দুর্গা-মা এলে নতুন নতুন জামা পরা হবে, বাবা বলেছেন ফিশ ফ্রাই খাওয়াবেন, মা বলেছেন আইসক্রিম। আরো কত কি খাবে সে ঠিক করেছে। প্রত্যেক পুজোর দিন সকালে বাবা কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়-এর গান বাজান মিউজিক সিস্টেম-এ, 'আজি বিমল নিদাঘ প্রভাতে, কত গীতে সুগন্ধে শোভাতে' - মনটা আনন্দে ভরে যায় তিতলির।
বেশ কয়েকটা নতুন জামা হয়েছে তার - মা-বাবা দিয়েছেন, তারপর মেজোমামা, সেজোমামা, কাকিমা, মনি - সব্বাই তিতলিকে দারুন দারুন জামা দিয়েছে। এখন থেকে তিতলি ঠিক করছে কোনটা কোনদিন পরবে। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী --- বলতে বলতে দশমী-ও এসে যাবে এটা ভাবলে মন
খারাপ হয় তিতলির, কিন্তু মন খারাপ করলে চলবে কেন?
খুব মনোযোগ দিয়ে কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা-র জন্য তৈরী হচ্ছে তিতলি। সেদিন বেস্ট স্কার্ট-টা পরবে সে, বাবা বলেন 'তোমাকে ওয়েস্টার্ন অ্যাটায়ার-এ বেশ লাগে', তাই এবার বাবা তাকে একটা দামি গরম কাপড়ের কোট বানিয়ে দিয়েছেন, সেটা অবশ্য পুজোতে পরা যাবে না। তিতলি আবৃত্তি করবে, এসেছে শরৎ হিমের পরশ, লেগেছে হাওয়ার পরে। এটা তিতলির প্রিয় কবিতা - সবচেয়ে ভালো লাগে এই লাইনগুলো - যেদিকে তাকাই সোনার আলোয় দেখি যে ছুটির ছবি, পূজার ফুলের বনে ওঠে ওই পূজার দিনের রবি। আসলে ছুটির ছবি খুব-ই কম দেখা হয় তিতলি-র।
বাবা অফিসে বেরিয়ে যান, মা স্কুলে। আম্মা অবশ্য বাড়িতে থাকেন, সবসময় আগলে রাখেন তিতলিকে। তিতলি-ও খুব ভালোবাসে আম্মাকে, মা চকোলেট আনলে সবচেয়ে আগে ভাগ দেয় সে আম্মাকে।
জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা ---- বীরেন্দ্রকৃষ্ণ-দাদুর গমগমে গলায় এই মন্ত্রের মতো কথাগুলো সে যখন শোনে রেডিও-তে, ভোর ভোর মহালয়ার দিন, তখন গায়ে কাঁটা দেয় তার - এই নয় যে সব কথার মানে সে বুঝতে পারে। কিন্তু কখনোই সে রেডিও-তে মহিষাসুরমর্দিনী মিস করে না, মা তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেন মহালয়া শোনার জন্যে। 'বিমানে বিমানে' গানটা তার খুব ভালো লাগে, কেমন অদ্ভুত সুর, তিতলির মনে হয়, উড়ানে চড়ে মা এসে পড়লো বলে।
মায়ের
আভাস যে চারিদিকে সে ছোট্ট হলেও বুঝতে পারে। তবে তিতলি বুঝতে পারে না যে মাকে কেন সকলে কৈলাশে ফিরে যেতে দেয়। মা-কে রেখে দিলেই তো হয়, তাহলে দশমীর দিন আর ওতো কাঁদতে হয় না তিতলি-কে। এবার সে ঠিক করেছে মাকে প্রণাম করে মনে মনে বলবে, 'থেকে যাও মা, আর ফিরে যেও না কৈলাশে।' তার দৃঢ় বিশ্বাস যে মা থেকে যাবেন তার কাছে, অন্তত আর কোথাও না হোক নিশ্চই থাকবেন তার মনের মধ্যে।
পুজো পুজো রোদ্দুর বাইরে। ডাইনিং টেবিলের এক কোনায় সেই রোদের-ই এক চিলতে। মা আসছেন। সত্যি মা দুর্গা এলে বড্ড আনন্দ হয় তিতলির।
এক ঢাল চুল মায়ের, তিন তিনটে চোখ, পরনে বেনারসী শাড়ী। রাজার মেয়ে তো! গিরি রাজা আনন্দে আত্মহারা, মেয়ে আসছে। আর তিতলি-ও, খুব খুশি। আনন্দ যেন তার আর ধরে না। দুর্গা-মা এলে নতুন নতুন জামা পরা হবে, বাবা বলেছেন ফিশ ফ্রাই খাওয়াবেন, মা বলেছেন আইসক্রিম। আরো কত কি খাবে সে ঠিক করেছে। প্রত্যেক পুজোর দিন সকালে বাবা কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়-এর গান বাজান মিউজিক সিস্টেম-এ, 'আজি বিমল নিদাঘ প্রভাতে, কত গীতে সুগন্ধে শোভাতে' - মনটা আনন্দে ভরে যায় তিতলির।
বেশ কয়েকটা নতুন জামা হয়েছে তার - মা-বাবা দিয়েছেন, তারপর মেজোমামা, সেজোমামা, কাকিমা, মনি - সব্বাই তিতলিকে দারুন দারুন জামা দিয়েছে। এখন থেকে তিতলি ঠিক করছে কোনটা কোনদিন পরবে। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী --- বলতে বলতে দশমী-ও এসে যাবে এটা ভাবলে মন
খারাপ হয় তিতলির, কিন্তু মন খারাপ করলে চলবে কেন?
খুব মনোযোগ দিয়ে কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা-র জন্য তৈরী হচ্ছে তিতলি। সেদিন বেস্ট স্কার্ট-টা পরবে সে, বাবা বলেন 'তোমাকে ওয়েস্টার্ন অ্যাটায়ার-এ বেশ লাগে', তাই এবার বাবা তাকে একটা দামি গরম কাপড়ের কোট বানিয়ে দিয়েছেন, সেটা অবশ্য পুজোতে পরা যাবে না। তিতলি আবৃত্তি করবে, এসেছে শরৎ হিমের পরশ, লেগেছে হাওয়ার পরে। এটা তিতলির প্রিয় কবিতা - সবচেয়ে ভালো লাগে এই লাইনগুলো - যেদিকে তাকাই সোনার আলোয় দেখি যে ছুটির ছবি, পূজার ফুলের বনে ওঠে ওই পূজার দিনের রবি। আসলে ছুটির ছবি খুব-ই কম দেখা হয় তিতলি-র।
বাবা অফিসে বেরিয়ে যান, মা স্কুলে। আম্মা অবশ্য বাড়িতে থাকেন, সবসময় আগলে রাখেন তিতলিকে। তিতলি-ও খুব ভালোবাসে আম্মাকে, মা চকোলেট আনলে সবচেয়ে আগে ভাগ দেয় সে আম্মাকে।
জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা ---- বীরেন্দ্রকৃষ্ণ-দাদুর গমগমে গলায় এই মন্ত্রের মতো কথাগুলো সে যখন শোনে রেডিও-তে, ভোর ভোর মহালয়ার দিন, তখন গায়ে কাঁটা দেয় তার - এই নয় যে সব কথার মানে সে বুঝতে পারে। কিন্তু কখনোই সে রেডিও-তে মহিষাসুরমর্দিনী মিস করে না, মা তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেন মহালয়া শোনার জন্যে। 'বিমানে বিমানে' গানটা তার খুব ভালো লাগে, কেমন অদ্ভুত সুর, তিতলির মনে হয়, উড়ানে চড়ে মা এসে পড়লো বলে।
মায়ের
আভাস যে চারিদিকে সে ছোট্ট হলেও বুঝতে পারে। তবে তিতলি বুঝতে পারে না যে মাকে কেন সকলে কৈলাশে ফিরে যেতে দেয়। মা-কে রেখে দিলেই তো হয়, তাহলে দশমীর দিন আর ওতো কাঁদতে হয় না তিতলি-কে। এবার সে ঠিক করেছে মাকে প্রণাম করে মনে মনে বলবে, 'থেকে যাও মা, আর ফিরে যেও না কৈলাশে।' তার দৃঢ় বিশ্বাস যে মা থেকে যাবেন তার কাছে, অন্তত আর কোথাও না হোক নিশ্চই থাকবেন তার মনের মধ্যে।