অ্যাপশহর

৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের স্বপ্নপূরণে সংস্কারমুখী বাজেট

এ যাবৎ অনেক দাওয়াই দিয়েও ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে খাড়া করতে পারেননি সীতারামন। বৃদ্ধি কমে আসায় সরকারের কর আদায়ও কমেছে। বদলে গিয়েছে আগের দুই বাজেটের অঙ্কের হিসাব। গোদের ওপর বিষফোড়া মূল্যবৃদ্ধি।

EiSamay.Com 22 Jan 2020, 1:16 pm
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: এক বছরে তৃতীয়বার। তবে, অর্থনীতির প্রেক্ষাপটের বিচারে এ বারের বাজেট আগের তুলনায় একেবারে ভিন্ন হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত দেড় বছরে ধরে ক্রমাগত নিম্নমুখী অর্থনীতিকে টেনে তোলাই নয়, আগামী পাঁচ বছরে ভারতীয় অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি ডলার মূল্যে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বড় ধরনের সংস্কারমুখী বাজেট পেশ করবেন বলেই তাঁরা আশা করছেন।
EiSamay.Com D4
প্রতীকি ছবি


এ যাবৎ অনেক দাওয়াই দিয়েও ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে খাড়া করতে পারেননি সীতারামন। বৃদ্ধি কমে আসায় সরকারের কর আদায়ও কমেছে। বদলে গিয়েছে আগের দুই বাজেটের অঙ্কের হিসাব। গোদের ওপর বিষফোড়া মূল্যবৃদ্ধি। সব মিলিয়ে নতুন করে সব অঙ্ক, অনুমান কষতে হবে যা ২০২০-২১ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব কষার কাজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পক্ষে আরও জটিল হয়ে উঠবে।

সীতারামনকে যে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষণরেখা অতিক্রম করতেই হবে, সকলেই সেটা ধরে নিয়েছেন। কিন্তু, ২০২০-২১ অর্থবছরে তিনি যে লক্ষ্য বাজেটে স্থির করবেন তা বাস্তবসম্মত হবে তো? ২০১১-১২ সালে ইউপিএ জমানার কথা মনে করুন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসাবে প্রণব মুখোপাধ্যায় ওই বাজেটে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ ৪.৮ শতাংশ থেকে ৪.৬ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যস্থির করলেন। অথচ, বাস্তবে ২০১১-১২ অর্থবছরের ঘাটতির পরিমাণ তার আগের বছরের থেকে চারগুণ বেড়ে গেল। কারণ, ২০১১-১২ সালে অর্থনীতির বৃদ্ধির হার গোঁত্তা খেয়ে ৩.৩ শতাংশে নেমে আসা কেউ প্রত্যাশাও করেননি।

সীতারামনও যদি রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে সরকারি ব্যয় বরাদ্দে ঢালাও কাটছাঁট করেন তবে তার ফলও একই হবে --- অর্থনীতির বৃদ্ধি আরও কমবে, রাজকোষ ঘাটতি আরও বাড়বে। ইতিমধ্যেই কর্পোরেট সংস্থাগুলির কর কমিয়ে রাজকোষের ঘাটতি বেড়েছে ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু, অর্থনীতিতে শিল্প লগ্নি বাড়েনি, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। ফলে, বাজারে ক্রেতা চাহিদাও ফেরেনি।

ক্রেতা চাহিদা বাড়ানো যায় দু’ভাবে। এক, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করে। দুই, মানুষের হাতে সরাসরি আয়ের জোগান বাড়িয়ে। শিল্প তৈরি না হলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে না। নতুন শিল্প তৈরিতে উৎসাহ দিতে অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যেই কর্পোরেট সংস্থাগুলির করের বোঝা অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে, বাজেটে নতুন করে ওই কর কমানোর বিশেষ সুযোগ নেই। বরং, কিছু শিল্প তৈরিতে সহযোগী কিছু নীতি সংস্কার যেমন, বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার পদ্ধতি সহজ করা, বিদেশি বিনিয়োগ নীতি সংস্কার, প্রভৃতি করতে পারেন। বিশেষ কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেশে ওই পণ্য তৈরিতে উৎসাহ দেওয়া বা পণ্যের উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে সাহায্যও করতে পারেন।

কিন্তু, শুধু পণ্যের দাম কমলেই বাজারে চাহিদা ফিরবে না। মানুষের হাতে আয় বাড়াতে হবে। পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট ভোগব্যয়ের পরিমাণ ছিল জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ৭০.৬ শতাংশ এবং মোট ভোগব্যয়ের ৫৯.৪ শতাংশই ছিল ব্যক্তিগত ভোগব্যয়। ওই বছর টাকার মূল্যে মোট ব্যক্তিগত ভোগব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১১২.৯০ লক্ষ কোটি টাকা।

আয়কর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অ্যাসেসমেন্ট বছরে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন এমন করদাতার সংখ্যা ছিল ৫.৮৭ কোটির কিছু বেশি --- দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪.৭৭ শতাংশ। এই আয়করদাতাদের মোট করযোগ্য আয়ের পরিমাণ ৫১.৩৩ লক্ষ কোটি টাকা বা দেশের মোট ব্যক্তিগত ভোগব্যয়ের ৪৫ শতাংশেরও বেশি। অর্থাৎ, ব্যক্তিগত আয়করের হার কমিয়ে এবং আয় সীমা বাড়িয়ে করদাতাদের হাতে খরচ করার মতো অর্থের জোগান বাড়াতে পারেন অর্থমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী কিষাণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের কৃষকদের হাতে নগদের জোগান বাড়ানোর উদ্যোগ সরকার আগেই নিয়েছে। কিন্তু, সেই প্রকল্পে বিশেষ সাড়া মেলেনি অনেকগুলি কারণে --- জমির প্রকৃত মালিকানার নথির অভাব, বিরোধী রাজ্যগুলির অসহযোগিতা। ফলে, এই প্রকল্প চালু রাখা হবে না অন্য প্রকল্পের কথা ভাবছে সরকার সেটা ১ ফেব্রুয়ারিই বোঝা যাবে।

পরের খবর

Businessসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল