অ্যাপশহর

টিকটকের সর্বনাশে 'অকাল বসন্ত' দেশি অ্যাপদের

দেশে টিকটক 'নিষিদ্ধ' হওয়ার পরেই তাঁদের নৌকার পালে ঝোড়ো বাতাস বওয়া শুরু হয়েছে বলে মানছেন না বেঙ্গালুরুস্থিত সংস্থা রপোসোর চিফ মার্কেটিং অফিসার বিকাশ চৌধুরী বা রিজলের সিইও এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিদ্যা নারায়ণন।

Ei Samay 21 Sep 2020, 2:24 pm
এই সময়: এইচআর ডিপার্টমেন্টে ব্যাক-অফিস স্টাফ হিসেবেই জীবনটা বয়ে যেতে না দিয়ে টিকটকে কন্টেন্ট পোস্ট করে গত দু'বছর ধরে ১.৬ কোটির ফ্যান-ফলোয়ার গড়ে তুলেছিলেন সুরাতের শিবানী কপিলা।
EiSamay.Com tiktok
টিকটক ব্যান


সঙ্গীতা জৈন। মার্কিন মুলুকে আইনজীবী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় দু'বছর আগে নেহাতই শখে টিকটকে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে ঢুকেছিলেন। দু'মাস আগে টিকটক ভারতে 'নিষিদ্ধ' ঘোষিত হওয়ার আগে তাঁকে 'ফলো' করতেন ১.৫ কোটিরও বেশি ফ্যান।

উপরোক্ত দু'জনেরই আয় টিকটক যে জায়গায় নিয়ে চলে গিয়েছিল, তাতে ব্যাক-অফিস স্টাফ শিবানী বা আইনি পেশায় ইস্তফা দিয়ে ভারতে ফিরে ফুলটাইম ভিডিয়ো 'ক্রিয়েটর' হয়ে যাওয়া সঙ্গীতা আয়ের দিক থেকে লজ্জায় ফেলে দিতে পারতেন দেশের অনেক তাবড়-তাবড় পেশাদার-হোমড়াচোমড়াদের। সেই রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আক্ষরিক অর্থেই এখন পথে বসেছেন তাঁরা।

শুধুই কি টাকা?

গুরগাঁও-এর ২২ বছর বয়সী বিশাল পাণ্ডে সিনেমায় নামার ইচ্ছে থেকে একসময় দিনের পর দিন মুম্বই-এর স্টুডিয়োয় স্টুডিয়োয়, প্রোডিউসার-কাস্টিং ডিরেক্টরদের কাছে হত্যে দিতেন। টিকটকে তুমুল জনপ্রিয় বিশালের অ্যাকাউন্টে ১.৭ কোটির ফলোয়ার হয়ে যাওয়ার পর তাঁকে পার্সোনাল সেক্রেটারি রাখতে হয়েছিল ওয়েবসিরিজ এবং ব্র্যান্ড প্রোমোশনের জন্য শ্যুটিং-এর অফার সামলাতে। অনেকটা একই ধরনের গল্প ২৩ বছরের সিরি চাল্লা বা জেসাস মেহতার।

দেশে টিকটক 'নিষিদ্ধ' হয়ে গিয়ে ক্রমবর্ধমান ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স এবং স্টারডম-দু'টোই হঠাৎ সুখস্মৃতি হয়ে গিয়েছে এঁদের মতো আরও হাজারো টিকটকারের জন্য। খ্যাতির সার্চলাইটের তলায় থাকার জন্য হাতের কাছে 'মেড ইন ইন্ডিয়া' চিঙ্গারি-রপোসো বা বিদেশি রিজল-ইনস্টাগ্রাম রিলস এর মতো একাধিক বিকল্প রয়েছে। যেখানে টিকটকের মতোই শর্ট ভিডিয়ো পোস্ট করার সুবিধা রয়েছে। কিন্তু জনপ্রিয়তা এবং আর্থিক লাভের দিক থেকে এগুলির কোনওটিই টিকটকের ধারেকাছে আসতে পারবে না বলে দাবি করছেন ১ কোটির বেশি টিকটক ফলোয়ার অ্যাকাউন্টধারী অভিষেক গর্গ। রাতারাতি অন্য কোনও প্ল্যাটফর্মে গেলেও, সেখান থেকে আগের মতো নাম-যশ আসতে অনেক সময় চলে যাবে বলেও মতপ্রকাশ করেছেন তিনি। পাশাপাশি ১০ লক্ষ ফলোয়ারের টিকটক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নতুন প্ল্যাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুললেই ১ লক্ষই যে ফিরবেন, তাতেও কোনও নিশ্চয়তা নেই।

আর এখানেই পৌষ মাসের সুবাতাস বইছে এইসব প্ল্যাটফর্মগুলির জন্য। নিজেদের স্টারডম-ব্র্যান্ড ইক্যুইটি গড়ে তোলার চেষ্টায় এক বা একাধিক নতুন প্ল্যাটফর্মে নাম লেখাতে মরিয়া একদা জনপ্রিয় টিকটকাররা। ফলে বিরাট পয়সা না দিয়েও একেবারে সাজানো খাবার তাদের প্লেটে সার্ভ করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। শূন্য থেকে শুরু করার বদলে নিখরচায় কারও ঝুলিতে যাচ্ছেন বিরাট কোহলি, তো কারও কাছে রোহিত শর্মা, কেউ বা পাচ্ছে যশপ্রীত বুমরাকে। আর যাঁরা দীনেশ কার্তিক-শিখর ধবনকে পাচ্ছেন, তারা লেগে থাকছেন বড় মাছের আশায়। ফ্যান ফলোয়ার তো হেঁটে হেঁটে ঘরে চলে আসবে। সেদিকে গ্যারান্টি নিচ্ছে টিকটকের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা। সাম্প্রতিক চিন বিরোধী হাওয়ায় যা ভারতে ফেরৎ আসা গঙ্গা দূষণহীন হয়ে যাওয়ার মতোই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশি 'চিঙ্গারি'র আগুনের ফুলকি রোজ লাখে-লাখে বাড়ার পিছনে নিজেদের প্ল্যাটফর্মের সাফল্যের ঢাকই পেটাচ্ছেন চিঙ্গারির সহ-প্রতিষ্ঠাতা সুমিত ঘোষও। কিন্তু বাস্তব এবং পরিসংখ্যান তাঁদের বিরুদ্ধ মতই পোষণ করছে। কিন্তু কাজের কাজ যেটা হচ্ছে, সেটা হল, টিকটক নিষিদ্ধ হয়ে গিয়ে সোনার শহর এল ডোরাডোর রাস্তা খুলে গিয়েছে দেশি-বিদেশি একাধিক 'শর্ট ভিডিয়ো কন্টেন্ট' প্রচারের এইসব প্ল্যাটফর্মের জন্য। দৈত্যাকৃতি অ্যানাকোন্ডারূপী টিকটক-কে আর ভয় নেই। ফলে, মাভৈ বলে বাজার দখলে নেমে পড়লেই হল।

পরের খবর

Businessসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল