কলেজ জীবনে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। আর এখন তিনিই রাজ্যের গার্জিয়ান। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে আসীন। মাঝে কেটে গিয়েছে ৩০টি বছর। ব্রহ্মপুত্র দিয়ে বয়েছে বহু জল। আর এই সময়ে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার (Himanta Biswa Sarma) একের পর এক ‘অসম’ রাজনৈতিক উত্থানের সাক্ষী উত্তর-পূর্ব ভারত। প্রথমে কংগ্রেস পরবর্তীতে 'স্বজনপোষণ'-এর অভিযোগ তুলে বিজেপিতে যোগ। হিমন্ত ক্ষমতাকে দেখেছেন প্রিজমের উভয় দিক থেকেই। কংগ্রেসে থেকে 'গুরুত্বহীনতা'-র যন্ত্রণা মিটিয়েছে বিজেপি। স্বপ্নের দৌড়ের এক বৃত্ত সম্পূর্ণ করে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে তিনি। BJP-র অন্দরের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) নাকি হিমন্তর ফোন নম্বর স্পিড ডায়ালে রাখেন।
২০০০ সালে সরাসরি রাজনীতিতে যোগ হিমন্তর। তারপর থেকে উত্থানেরই সাক্ষী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কেরিয়ার। BJP-তে যোগ দেওয়ার মাত্র ছ'বছরের মধ্যেই তিনি হয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর (Amit Shah) অন্যতম প্রধান আস্থাভাজন। তিনি এখন শুধুমাত্র অসমের নন, উত্তর-পূর্ব ভারতের অবিসংবাদিত নেতা। তাঁরই তৈরি ছকে ভর করেই দেশের এই অংশ এখন গেরুয়া শিবিরের দখলে। নিন্দুকদের দাবি, উত্তর-পূর্বে সূর্যোদয়ের সময়ও ঠিক করে দেন অহমীয়া রাজনীতিতে 'মামা' বলে পরিচিত হিমন্ত।
১৯৬৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি যোরহাটে জন্ম। পরে তাঁর পরিবার চলে আসে গুয়াহাটির উলুবাড়ি এলাকায়। গুয়াহাটির Cotton College-এ স্নাতক স্তরে পড়াশোনা। ১৯৯১-৯২ সালে কলেজের সাধারণ সম্পাদক (GS) পদ সামলেছেন হিমন্ত। Political Science নিয়ে স্নাতকোত্তর করার পরে গুয়াহাটির Government Law College থেকে আইনের ডিগ্রি লাভ। গুয়াহাটি আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজও করেছেন।
২০০১ সালটি হিমন্তের কাছে বিশেষ গুরুত্বের। একধারে Riniki Bhuyan Sarma-কে বিয়ে এবং Jalukbari কেন্দ্রে থেকে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে জয়। সেই থেকে টানা পাঁচবার ওই কেন্দ্রের বিধায়ক হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনবার কংগ্রেসের টিকিটে। ২০১৬ থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে। ২০০২ সাল থেকে টানা মন্ত্রিসভার সদস্য। 'রাজ্যের কাজ' থাকলেও পড়াশোনার প্রতি অমোঘ টান বরাবরই। ২০০৬ সালে বিধানসভা ভোটের আবহেও গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে পিএইচডি লাভ করেন। ভোটের ফলে অবশ্য 'প্যাশন'-এর কোনও প্রভাব পড়েনি। একসময়ের অসমের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন এই নেতা সামলেছেন শিক্ষা, অর্থ, স্বাস্থ্যের মতো 'এ গ্রেড' দফতর।
দক্ষ সংগঠক, সিজনড প্রশাসক হিমন্ত তখন তরুণ গগৈয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। কিন্তু, ভাগ্য সহায় হয়নি। অসম রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, কংগ্রেসে নেপোটিজমের শিকার বিজেপির নয়া ‘ব্লু আইড বয়’।
বয়সের ভারে ন্যুব্জ তরুণ গগৈ রাশ আলগা হতে শুরু করেছে ভালোই বুঝতে পেরেছিলেন। অসমেও বইছিল প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া। অন্যদিকে, হিমন্ত তখন দল ও জনমানসে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছেন। এই অবস্থায় মোক্ষম চালটি খেলেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ তরুণ গগৈ। পরে যা হিমন্তের কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে হিমন্তর বদলে পুত্র গৌরব গগৈকে প্রোজেক্ট করে বসেন। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি ‘হজম’ হয়নি তুখোড় পারফর্মার হিমন্তের। প্রদেশ স্তরে শুরু হয় বিবাদ। পরে এআইসিসিকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। তবে ততক্ষণে যা ড্যামেজ হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
দিল্লিতে Rahul Gamdhi-র বাসভবনে পৌঁছন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সেই ঘটনাও কম চমকপ্রদ নয়। হিমন্তের অভিযোগ ছিল, তাঁদের সমস্যার কথা শোনার বদলে রাহুল তাঁর সারমেয় ‘পিডি’-র সঙ্গে খেলাতেই ব্যস্ত ছিলেন। অপমানিত হিমন্ত কংগ্রেস ছেড়ে দেন। সালটা ২০১৪। অসমে তখন তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে বাজি ধরা চলছে।
ক্ষুরধার রাজনৈতিক এই ব্যক্তিত্ব কিন্তু কোনও তাড়াহুড়ো করেননি। বরং বাড়ি বসে সন্তর্পণে জল মেপেছেন। অবশেষে ২০১৫-র ২৩ অগাস্ট দিল্লিতে অমিত শাহর বাসভবনে গিয়ে BJP-তে যোগ। বাকিটা ইতিহাস। তৃণমূল স্তরে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগায় BJP। সংগঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে অসমে বিজেপিকে জয় উপহার দিয়ে কংগ্রেসকে জবাব দেন। তবে সেবার মুখ্যমন্ত্রী হন সর্বানন্দ সোনোয়াল। অর্থ ও স্বাস্থ্য দফতর পান তিনি।
‘কাজের ছেলে’-কে অবশ্য এখানেই বেঁধে রাখতে রাজি ছিলেন না নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। নীচু স্তরে তাঁর নিয়ন্ত্রণ, কার্যপদ্ধতি দেখে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। দিল্লির সিগন্যাল পেয়ে হিমন্ত নেমে পড়েন কোমর বেঁধে। ফল, মাত্র কয়েকমাসে গোটা উত্তর-পূর্ব বিজেপির দখলে। কোথাও শাসকদলের সঙ্গে জোট আবার কোথাও বিরোধী শূন্য করে দেওয়া। হিমন্ত ম্যাজিক দেখে হা হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ।
শিলচর এলাকার বাসিন্দা বছর ত্রিশের রাজেশ শর্মা। পেশায় লেখক রাজেশের কথায়, 'আগে বারাক উপত্যকার দিকে কেউ নজর দেননি। এখন অসমের বাঙালিদেরও ভরসা হিমন্ততেই।'
২০২১ বিধানসভা ভোটে জয় পাওয়ার পর শুরু হয় ‘গেম অফ থ্রোনস’। দীর্ঘ আলোচনার পর সোনোয়ালের বদলে হিমন্তকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি। তাঁকে নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও সব অবলীলায় উড়িয়ে দিয়েছেন। মোদী-শাহ জুটির একাধিক ‘অ্যাসাইনমেন্ট’-এর ভার প়ড়ছে তাঁরই উপর।
২০০০ সালে সরাসরি রাজনীতিতে যোগ হিমন্তর। তারপর থেকে উত্থানেরই সাক্ষী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কেরিয়ার। BJP-তে যোগ দেওয়ার মাত্র ছ'বছরের মধ্যেই তিনি হয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর (Amit Shah) অন্যতম প্রধান আস্থাভাজন। তিনি এখন শুধুমাত্র অসমের নন, উত্তর-পূর্ব ভারতের অবিসংবাদিত নেতা। তাঁরই তৈরি ছকে ভর করেই দেশের এই অংশ এখন গেরুয়া শিবিরের দখলে। নিন্দুকদের দাবি, উত্তর-পূর্বে সূর্যোদয়ের সময়ও ঠিক করে দেন অহমীয়া রাজনীতিতে 'মামা' বলে পরিচিত হিমন্ত।
১৯৬৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি যোরহাটে জন্ম। পরে তাঁর পরিবার চলে আসে গুয়াহাটির উলুবাড়ি এলাকায়। গুয়াহাটির Cotton College-এ স্নাতক স্তরে পড়াশোনা। ১৯৯১-৯২ সালে কলেজের সাধারণ সম্পাদক (GS) পদ সামলেছেন হিমন্ত। Political Science নিয়ে স্নাতকোত্তর করার পরে গুয়াহাটির Government Law College থেকে আইনের ডিগ্রি লাভ। গুয়াহাটি আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজও করেছেন।
২০০১ সালটি হিমন্তের কাছে বিশেষ গুরুত্বের। একধারে Riniki Bhuyan Sarma-কে বিয়ে এবং Jalukbari কেন্দ্রে থেকে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে জয়। সেই থেকে টানা পাঁচবার ওই কেন্দ্রের বিধায়ক হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনবার কংগ্রেসের টিকিটে। ২০১৬ থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে। ২০০২ সাল থেকে টানা মন্ত্রিসভার সদস্য। 'রাজ্যের কাজ' থাকলেও পড়াশোনার প্রতি অমোঘ টান বরাবরই। ২০০৬ সালে বিধানসভা ভোটের আবহেও গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে পিএইচডি লাভ করেন। ভোটের ফলে অবশ্য 'প্যাশন'-এর কোনও প্রভাব পড়েনি। একসময়ের অসমের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন এই নেতা সামলেছেন শিক্ষা, অর্থ, স্বাস্থ্যের মতো 'এ গ্রেড' দফতর।
দক্ষ সংগঠক, সিজনড প্রশাসক হিমন্ত তখন তরুণ গগৈয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। কিন্তু, ভাগ্য সহায় হয়নি। অসম রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, কংগ্রেসে নেপোটিজমের শিকার বিজেপির নয়া ‘ব্লু আইড বয়’।
বয়সের ভারে ন্যুব্জ তরুণ গগৈ রাশ আলগা হতে শুরু করেছে ভালোই বুঝতে পেরেছিলেন। অসমেও বইছিল প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া। অন্যদিকে, হিমন্ত তখন দল ও জনমানসে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছেন। এই অবস্থায় মোক্ষম চালটি খেলেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ তরুণ গগৈ। পরে যা হিমন্তের কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে হিমন্তর বদলে পুত্র গৌরব গগৈকে প্রোজেক্ট করে বসেন। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি ‘হজম’ হয়নি তুখোড় পারফর্মার হিমন্তের। প্রদেশ স্তরে শুরু হয় বিবাদ। পরে এআইসিসিকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। তবে ততক্ষণে যা ড্যামেজ হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
দিল্লিতে Rahul Gamdhi-র বাসভবনে পৌঁছন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সেই ঘটনাও কম চমকপ্রদ নয়। হিমন্তের অভিযোগ ছিল, তাঁদের সমস্যার কথা শোনার বদলে রাহুল তাঁর সারমেয় ‘পিডি’-র সঙ্গে খেলাতেই ব্যস্ত ছিলেন। অপমানিত হিমন্ত কংগ্রেস ছেড়ে দেন। সালটা ২০১৪। অসমে তখন তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে বাজি ধরা চলছে।
ক্ষুরধার রাজনৈতিক এই ব্যক্তিত্ব কিন্তু কোনও তাড়াহুড়ো করেননি। বরং বাড়ি বসে সন্তর্পণে জল মেপেছেন। অবশেষে ২০১৫-র ২৩ অগাস্ট দিল্লিতে অমিত শাহর বাসভবনে গিয়ে BJP-তে যোগ। বাকিটা ইতিহাস। তৃণমূল স্তরে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগায় BJP। সংগঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে অসমে বিজেপিকে জয় উপহার দিয়ে কংগ্রেসকে জবাব দেন। তবে সেবার মুখ্যমন্ত্রী হন সর্বানন্দ সোনোয়াল। অর্থ ও স্বাস্থ্য দফতর পান তিনি।
‘কাজের ছেলে’-কে অবশ্য এখানেই বেঁধে রাখতে রাজি ছিলেন না নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। নীচু স্তরে তাঁর নিয়ন্ত্রণ, কার্যপদ্ধতি দেখে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। দিল্লির সিগন্যাল পেয়ে হিমন্ত নেমে পড়েন কোমর বেঁধে। ফল, মাত্র কয়েকমাসে গোটা উত্তর-পূর্ব বিজেপির দখলে। কোথাও শাসকদলের সঙ্গে জোট আবার কোথাও বিরোধী শূন্য করে দেওয়া। হিমন্ত ম্যাজিক দেখে হা হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ।
শিলচর এলাকার বাসিন্দা বছর ত্রিশের রাজেশ শর্মা। পেশায় লেখক রাজেশের কথায়, 'আগে বারাক উপত্যকার দিকে কেউ নজর দেননি। এখন অসমের বাঙালিদেরও ভরসা হিমন্ততেই।'
২০২১ বিধানসভা ভোটে জয় পাওয়ার পর শুরু হয় ‘গেম অফ থ্রোনস’। দীর্ঘ আলোচনার পর সোনোয়ালের বদলে হিমন্তকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি। তাঁকে নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও সব অবলীলায় উড়িয়ে দিয়েছেন। মোদী-শাহ জুটির একাধিক ‘অ্যাসাইনমেন্ট’-এর ভার প়ড়ছে তাঁরই উপর।