অ্যাপশহর

সিপিএম দুষ্কৃতীদের হাতে খুন ডাক্তারবাবুর মেয়ে জাতীয় আইন পরীক্ষায় নবম

বাবা তো সেই কবেই নেই! মাকে একা ফেলে, কটকে গিয়ে পড়ে থাকতে মন সায় দেয়নি মেয়ের। তাই আইন নিয়ে কটকে পড়ার সুযোগ পেলেও, শেষমেশ ওমুখো হননি সৃজা পাল।

EiSamay.Com 26 May 2016, 8:34 pm
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: বাবা তো সেই কবেই নেই! মাকে একা ফেলে, কটকে গিয়ে পড়ে থাকতে মন সায় দেয়নি মেয়ের। তাই আইন নিয়ে কটকে পড়ার সুযোগ পেলেও, শেষমেশ ওমুখো হননি সৃজা পাল। ভর্তি হয়েও দিন কয়েকের মধ্যে ফিরে আসেন। এ বার সেই মেয়েই দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় সর্বভারতীয় 'কমন ল অ্যাডমিশন টেস্ট' (CLAT)-এ রাজ্যের প্রথম। সর্বভারতীয় স্তরেও তাঁর র‌্যাঙ্ক নবম। গত ২৩ মে বেরিয়েছে ক্ল্যাটের এই ফল।
EiSamay.Com sreeja daughter of late dr sushil paul stands 9th in clat
সিপিএম দুষ্কৃতীদের হাতে খুন ডাক্তারবাবুর মেয়ে জাতীয় আইন পরীক্ষায় নবম


২০০৪ সালের জুলাই মাসে খুন হন শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের চিকিৎসক সুশীল পাল। সৃজা পাল তাঁরই ছোট মেয়ে। সর্বভারতীয় স্তরে ছোট মেয়ের এমন সাফল্যে খুশি মা কণিকা পাল। বললেন, 'কঠিন অধ্যবসায়ই মেয়েকে গগনচুম্বী সাফল্য এনে দিয়েছে।'

একযুগ আগে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের চিকিৎসক সুশীল পাল যখন খুন হন, সৃজা তখন খুবই ছোট। খুনের তদন্তভার পড়ে সিআইডি-র উপর। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে নিম্ন আদালত। এর মধ্যে আট জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকি চার জনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেয় বারাসত জেলা ও দায়রা আদালত। যদিও ওই বছরেরই জুলাই মাসে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যান সকলে। সেই জামিনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন সুশীল পালের স্ত্রী কণিকা দেবী। রাজ্য সরকারও সেই জামিন বাতিলের আবেদন জানিয়ে, সুশীল পালের পরিবারের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু, কোনও আবেদনই গ্রাহ্য হয়নি শীর্ষ আদালতে।

সৃজা তখন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বাবার খুনের অভিযুক্তদের এ ভাবে আদালতে জামিন পেতে দেখে, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। সৃজার কথায়, 'বারবারই মনে হচ্ছিল, যদি বাবার জন্য কিছু করতে পারতাম! তার জন্যই পড়াশোনায় জোর দিই। ঠিক করি, বাবার মৃত্যুর সুবিচার আদায়ে একদিন নিজেই মামলা লড়ব।'

আর তার জন্যই ডাক্তার-কন্যার আইন নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত। বলছিলেন, 'আমি ছোটবেলা থেকে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, চাই না আর কেউ সেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। সেই জন্যই আইন নিয়ে পড়াশোনা করব বলে মনস্থ করি।'

বড় মেয়ে শ্রেয়াকে তাঁর মতোই ডাক্তার করতে চেয়েছিলেন সুশীল পাল। তিনি না-থাকলেও, শ্রেয়া ডাক্তারিই পড়ছেন। ছোট মেয়ে তখন বয়সে এতটাই ছোট, তার সম্পর্কে বিশেষ কিছু ভাবার সময় সেটা ছিল না। কিন্তু, মাত্র সাত বছর বয়স থেকে মায়ের একার লড়াই দেখতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা সৃজা আইনকেই আশ্রয় করে, ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে।

সর্বভারতীয় প্রবেশিকার মেধা তালিকায় স্থান পেলে, যে কেউ-ই চাইবেন বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ল স্কুল অফ ইন্ডিয়ায় পড়াশোনা করতে। কারণ, এটিই দেশের সেরা ল স্কুল বলে পরিচিত। কিন্তু, সৃজার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। মায়ের সঙ্গ পেতে, এ রাজ্যে থেকেই আইনের পাঠ শেষ করতে চান। আর ঠিক এ কারণেই, আগের বার সুযোগ পেয়েও কটক থেকে ফিরে এসেছেন ঘরে।

পরের খবর

ভোট এক্সপ্রেসসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল