কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের তাবৎ শক্তির যে সম্মিলিত দৃশ্য প্রদর্শিত হল তা বিগত দুই দশকে নজিরবিহীন। উপস্থিত ছিলেন ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন সনিয়া গান্ধী, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও দিল্লির চার মুখ্যমন্ত্রী, সমাজবাদী পার্টি, এনসিপি ও বহুজন সমাজ পার্টির তিন কর্ণধার, সিপিআই(এম)-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, এবং আরজেডি-র শীর্ষস্থানীয় নেতা তেজস্বী যাদব। তাঁদের ঘোষিত লক্ষ্য আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে গদিচ্যুত করা। রাজনৈতিক তরজমায় অস্যার্থ, বিগত চার বছর ধরে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ চালিত দলীয় জয়রথের দেশব্যাপী গতি রুদ্ধ করা। অন্য দিকে নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর সরকার গঠনের প্রকৌশলের বিচারে তার অর্থ, কর্নাটকের উদাহরণটি সামনে রেখে অঞ্চলভিত্তিক সমঝোতার মাধ্যমে বিজেপিকে প্রতিহত করা।
কাজটি নিতান্ত সহজ নয়। বর্তমান ভারতের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বাস্তবই তার কারণ — কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়াও দেশের একুশটি রাজ্যে বিজেপি একক শক্তিতে অথবা কোনও না কোনও জোটের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন। মোদীর জনপ্রিয়তা ছাড়াও সরকারে আসীন থাকার যে স্বাভাবিক রাজনৈতিক সুবিধা বিজেপি শিবির পেতে বাধ্য, বিরোধীদের তার মোকাবিলা করেই অগ্রসর হতে হবে। সাফল্য নির্ভর করবে কর্নাটকে একটি বিশেষ প্রেক্ষিতে ও বিশেষ মুহূর্তে প্রদর্শিত প্রতীকী ঐক্যটি সর্বভারতীয় রাজনীতির জটিল পরীক্ষায় দীর্ঘমেয়াদে কত দূর বজায় থাকতে পারে, তার উপর। িবজয়ের উদ্দীপনায় যা সম্ভব হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যে পারস্পরিক রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাত সুকৌশলে পরিহার করে তাকে স্থায়িত্ব দেওয়াই অতঃপর বিরোধী শিবিরের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ। লোকসভা নির্বাচনের আগেই রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিসগড়ের বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের ঐক্যপ্রচেষ্টা পূর্ণমাত্রায় পরীক্ষিত হবে। কারণ, অনুমান অসঙ্গত নয় যে কর্নাটকের ব্যর্থতার পর এই রাজ্যগুলিতে, যার প্রত্যেকটিতেই বিজেপি ক্ষমতাসীন, বিপুল উদ্যমে ময়দানে অবতীর্ণ হবে বিজেপি। আগামী দিনগুলিতে এই রুদ্ধশ্বাস রাজনৈতিক দ্বৈরথের উপর সজাগ নজর রাখবে সমগ্র দেশ।